অগ্নিপথ নিয়ে জ্বলছে দেশ, কৃষি আইনের মতো এবারও পিছু হটতে হবে কেন্দ্রকে?

কৃষি আইন নিয়ে সরকারকে ব্যাকফুটে যেতে দেখেছে দেশ, এবার কি তাহলে অগ্নিপথের পালা? জ্বলছে দেশ, কী বলবেন মোদি?

'অগ্নিপথ' নিয়োগ প্রকল্প নিয়ে জ্বলছে দেশের নানা প্রান্ত। উত্তাল বিহার এবং উত্তরপ্রদেশ। শনিবার বিহারে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। শুক্রবার দেশের প্রায় ৭ রাজ্যে বিক্ষোভ আন্দোলন দেখা গিয়েছে। বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড, দিল্লি, তেলেঙ্গানা, বাংলা, হরিয়ানা, পাঞ্জাবে অগ্নিপথ বিক্ষোভের আঁচ পড়েছে বেশি। রবিবার যন্তরমন্তরে সত্যাগ্রহর ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। অগ্নিপথের ঢেউ এসে পড়েছে বাংলাতেও। এই রাজ্য থেকে বাতিল হয়েছে একাধিক ট্রেন। অগ্নিপথ নিয়ে ল্যাজে-গোবরে অবস্থা শাসকের। পরিস্থিতি সামাল দিতে নাজেহাল পুলিস। বিজেপির সময় ভালো যাচ্ছে না, কৃষি আইনের মতো পিছু হটতে হবে না তো?

জ্বলছে বিহার
অগ্নিপথ-প্রতিবাদ অব্যাহত। মোদি সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্পের প্রতিবাদ ঘিরে বিহারের পরিস্থিতি ক্রমশ অগ্নিগর্ভ হয়েছে। বিহারের জেহানাবাদে বাস, লরিতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। পুলিসকে লক্ষ্য করে হয়েছে পাথর বৃষ্টি। শনিবার কেন্দ্রের অগ্নিপথ প্রকল্পের প্রতিবাদে বিহারে বনধের ডাক দেওয়া হয়েছে। অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরোধিতায় এদিন বিহার বনধের ডাক দিয়েছে অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। ২৪ ঘণ্টার বনধ ডাকা হয়েছে। বিহারের সমস্ত বিরোধী দল এই বনধকে সমর্থন জানিয়েছে।

বিহারের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, ট্রেন অগ্নিসংযোগ, অবরোধ, রেল রোকো চলছে। রাষ্ট্রীয় জনতা দল, হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা এবং বিকাশশীল ইনসান পার্টি-র‌ মতো দলগুলি সেই বনধকে সমর্থন করেছে। বিহারের ১২টি জেলায় ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা। দ্বারভাঙ্গা ও সমস্তিপুরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এখনও অবধি কর্তৃপক্ষ প্রায় ৩২০ জনকে গ্রেফতার করেছে এবং রাজ্যে হিংসা ও বিক্ষোভের জন্য ৬০টি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: দেশজুড়ে আগুন জ্বালিয়েছে ‘অগ্নিপথ’! কী এই প্রকল্প, কেন দাবানলের মতো ছড়াচ্ছে বিক্ষোভ?

শুক্রবার দু'টি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিহারের প্রতিবাদীরা। সমস্তিপুর রেল স্টেশনে দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখা যায় সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস। লক্ষমিনিয়া রেল স্টেশনেও অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় রেলওয়ে ট্র্যাকে। বেগুসরাই স্টেশনেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রেললাইনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। আরা জেলার কুহাদিয়া স্টেশনের চিত্রটাও একইরকম। বিশাল পুলিশবাহিনী নামানো হয় এলাকায়।

জ্বলছে দেশ
অতিমারীর জেরে নিয়োগ না-হওয়ার কারণে সরকার এই প্রকল্পের অধীনে নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ২১ থেকে বাড়িয়ে ২৩ বছর করেছে। কিন্তু এই নিয়োগ প্রকল্প নিয়ে ক্ষোভের আগুন এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। বিহারে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং তেলঙ্গানায় ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকী বিক্ষোভের আঁচ এসে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। উত্তেজিত জনতা রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়ে কয়েক ডজন রেলওয়ে কোচ, ইঞ্জিন এবং স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এছাড়াও আগুন ধরানো হয়েছে বিজেপি অফিস, যানবাহন এবং অন্যান্য সম্পত্তিতেও। শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের বালিয়া স্টেশনে ঢুকে বিক্ষোভকারীরা ট্রেনের একটি কামরায় আগুন ধরিয়ে দেয়। আর স্টেশনের বাইরে লাঠি দিয়ে ভাঙচুর চালানো হয় দোকানে। পুলিশের সঙ্গে বিবাদেও জড়ায় তারা। বালিয়ার জেলাশাসক সৌম্য আগরওয়াল জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের আটকে দেওয়া হয়েছে। বিজেপি-শাসিত হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড এবং মধ্যপ্রদেশেও ক্ষোভ বাড়ছে। হরিয়ানার পালওয়াল জেলায় ২৪ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে নেট।

কংগ্রেসের সত্যাগ্রহ
অগ্নিপথ নিয়ে আন্দোলনরতদের পাশে দাঁড়াচ্ছে কংগ্রেস। রবিবার দিল্লির যন্তরমন্তরে অগ্নিপথ নিয়ে প্রতিবাদ জানাবেন কংগ্রেস নেতারা। কংগ্রেসের সব সাংসদ, দলের সব শীর্ষস্থানীয় নেতারা যন্তরমন্তরে হাজির থাকবেন।

কেন এত ক্ষোভ?
চাকরিপ্রার্থীরা ১৫ বছরের পুরো মেয়াদ চান। সেখানে অগ্নিপথ স্কিমে শুধুমাত্র ২৫ শতাংশ অগ্নিবীরদের পরবর্তী ১৫ বছরের জন্য ধরে রাখা হবে। বিক্ষোভকারীরা আরও বেশি বছরের অভিজ্ঞতা সহ উচ্চ বেতন এবং অবসর নেওয়ার পরে পেনশন চান। অগ্নিপথ স্কিমের অধীনে নিয়োগপ্রাপ্তদের চার বছরের পরিষেবা শেষ করার পরে এককালীন ১১.৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। তাঁরা কোনও গ্র্যাচুইটি, পেনশন বা অন্য কোনও অবসরকালীন সুবিধা পাবেন না।

কিছু অবসরপ্রাপ্ত সার্ভিস অফিসার আশঙ্কা করছেন যে, এই নিয়োগ পদ্ধতি সশস্ত্র বাহিনীর সাংগঠনিক নীতি এবং অপারেশনাল কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে। কিছু সমালোচকের এও আশঙ্কা রয়েছে যে, অগ্নিপথ প্রকল্পটি বেশ কয়েকটি রেজিমেন্টের গঠন পরিবর্তন করবে, যা নির্দিষ্ট অঞ্চলের পাশাপাশি রাজপুত, জাঠ এবং শিখদের মতো বর্ণের যুবকদের নিয়োগ করে। তবে সরকার বলছে, এই ব্যবস্থায় কোনও পরিবর্তন হবে না। প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল ভিপি মালিক ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করেছেন যে, রেজিমেন্টাল ব্যবস্থা সেখানে অব্যাহত থাকবে।

ব‍্যাকফুটে বিজেপি
শেষ পর্যন্ত অগ্নিপথ থেকে কৃষি আইনের মতো হাত গোটাতে হবে না তো কেন্দ্রকে? সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। এই নিয়ে দেশের অন্দরে চলছে জোর আলোচনা। বিজেপির সময়টা ভালো যাচ্ছে না। নুপুর শর্মাকে নিয়ে ভালো রকম মুখ পুড়েছিল তাদের। ঘরে-বাইরে ক্ষোভ। তারপর পিছু হটা। এই রেশ কাটতে না কাটতে আবার অগ্নিপথ নিয়ে জ্বলছে দেশ। পিছু হটতে হবে না তো?

কৃষি আইন নিয়ে সারা দেশ দেখেছে কৃষকদের দাপটে একটা তেজি সরকারকেও ব্যাক ড্রাইভ দিয়ে পিছু হটতে হয়েছিল। সেই ঘটনাকেই এবার আশ্রয় করলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। কৃষি আইন যেমন ফেরাতে হয়েছিল, তেমনই অগ্নিপথ প্রকল্পটিও প্রত্যাহারে বাধ্য হবে মোদি সরকার, টুইটে এমনই হুঁশিয়ারি কংগ্রেস নেতার। দেশের সুরক্ষা বাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নয়া এই প্রকল্প নিয়ে উত্তাল দেশ। বিরোধীরা তো বটেই এনডিএ-র একাধিক শরিক দলও অগ্নিপথ নিয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছে বিজেপিকে।কেন্দ্রের অস্বস্তি এবার আরও বাড়ালেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।

কৃষি আইন নিয়ে সরকারকে ব্যাকফুটে যেতে দেখেছে দেশ, এবার কি তাহলে অগ্নিপথের পালা? জ্বলছে দেশ, কী বলবেন মোদি?

More Articles