নিজের জমি নেই, তবু চাষে টাকা খাটিয়ে মোটা অঙ্কের লাভ নিশ্চিত করা সম্ভব

এমন কিছু বিকল্প পথের কথা আজ বলতে চলেছি, আপনার চাষের শখ দিব্যি বজায় থাকবে, লাভের মুখও দেখতে পারবেন। চলুন, দেখে নেওয়া যাক।

চাষবাসে বিনয়োগের আইডিয়াটা মন্দ নয়। বরং বেশ সময়োপযোগী ব্যাপার। খাবারের চাহিদা কমার কোনও সম্ভাবনাই নেই। জনসংখ্যা যত বাড়বে বেড়ে চলবে খাবারের প্রয়োজনও। তবে চাষবাস যদি নেশাও হয়, জমি কেনাটা বোধহয় খুব একটা কাজের কাজ হবে না। বিশেষত আজকের দিনে জমির যা দাম! ছোটখাটো চাষিদের পর্যন্ত নাভিঃশ্বাস উঠছে। ফলে জমি কেনাটা দিনদিন দুরূহ ব্যাপার হয়ে উঠছে। কীভাবে চাষ করবেন বুঝতে পারছেন না? আপনার জন্য রয়েছে সুখবর। এমন কিছু বিকল্প পথের কথা আজ বলতে চলেছি, আপনার চাষের শখ দিব্যি বজায় থাকবে, লাভের মুখও দেখতে পারবেন। চলুন, দেখে নেওয়া যাক।


হাইড্রোপনিক ফার্মিং

হাইড্রোপনিক চাষবাস আদতে এক বিশেষ পদ্ধতি। এর দ্বারা জল এবং সারের সাহায্যে চাষবাস করা হয়ে থাকে। মাটির কোনও প্রয়োজনই হয় না এখানে। বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে এই পদ্ধতিতে চাষের। অঙ্কুরোদ্গমের হার বেশি, জল টানে অত্যন্ত কম, খুব অল্প পরিমাণে কীটনাশক দিলেও দিতে পারেন, অথবা বিনা কীটনাশকেও প্রচুর ফলন হয়। বিশেষত মেট্রোপলিটান শহরে, যেখানে স্থান সংকুলান হয় না, জমির দামও প্রচুর, সেখানে এই পদ্ধতিতে চাষবাস হতে পারে। বাজে খরচা না করেই আপনি নানা পদ্ধতিতে এই চাষ করতে পারেন। হতে পারেন কোনো বাণিজ্যিক হাইড্রোপনিক সংস্থার সদস্য। এইসব কোম্পানির চমৎকার পরিকাঠামো রয়েছে, রয়েছে চাষবাসের অভিজ্ঞতাও। আপনাকে এই ধরনের চাষের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে এরা সচেতন করে তুলতে পারবে, প্রয়োজনে সাহায্যও করবে। ফলে প্রথমবারে অনভিজ্ঞ চাষের ক্ষতি এড়াতে পারবেন, তাতে আপনারই লাভ। এছাড়া উপায় হল এমন কোনও ব্যক্তি, যিনি হাইড্রোপনিক চাষ করেন, তাঁর সঙ্গে পার্টনারশিপে চাষ করা। অথবা কোম্পানিগুলির সঙ্গেও পার্টনারশিপে যেতে পারেন আপনারা। সে উপায়ও রয়েছে। খরচ ভাগ করে নেওয়ার এই চমৎকার পন্থায় আপনি কিছু অভিজ্ঞতাও অর্জন করে ফেলবেন এই বিশেষ চাষ সম্বন্ধে।

যদি নিজের হাইড্রোপনিক ব্যবসা গড়ে তুলতে অসুবিধা থাকে, তবে চলতি এমন চাষের ব্যবসাতে আপনি বিনিয়োগও করতে পারেন। নিজের ব্যবসা করার নানান ঝক্কি। সেইসব ঝামেলা নেই, অথচ চাষবাসে বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনি দিব্যি অংশ নিচ্ছেন–ভেবে দেখুন কী দারুণ একটা ব্যাপার। বহু বাণিজ্যিক হাইড্রোপনিক ফার্ম রয়েছে যারা এমন বিনিয়োগ চায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এদের বাণিজ্যিক পরিকল্পনা অত্যন্ত সুন্দর, নামডাকও রয়েছে। ফলে আপনার বিনিয়োগ অত্যন্ত সুরক্ষিত। তবে অবশ্যই একটু ভালো করে ফার্মটির ট্র্যাক রেকর্ড খতিয়ে দেখবেন বিনিয়োগের আগে। সামান্য সঠিক তথ্য আপনার বিনিয়োগের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করে তুলতে পারে।


রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের তহবিল

রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট বা রেইট (REIT) চাষবাসে বিনিয়োগের একটি আদর্শ উপায়। বিন্দুমাত্র জমি না কিনেই চাষবাসে অংশ নেওয়া সম্ভব। সরাসরি জমি আপনি কিনলেন না। রেইট গুলি বিভিন্ন ফসলি জমির মালিক, চাষবাসও তারাই দেখে বেশ কিছু ক্ষেত্রে। ফলে সরাসরি জমি না কিনে আপনি কোনও ফার্মের শেয়ার কিনলেন। সেই ফার্ম হয়তো লিজে কয়েকজন চাষিকে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি রেইটেরই চাষবাসের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন কিছু শেয়ার থাকে। রেইটে বিনিয়োগের সুবিধা হল ফার্ম মালিকানার যে বিচিত্র সব সমস্যা, তার কোনোটাই আপনাকে পোয়াতে হচ্ছে না। কৃষির নানা ক্ষেত্রে আপনি নিজের মর্জি মতো বিনিয়োগ করতে পারছেন। কৃষিকাজে অংশ নিচ্ছেন।


কৃষিসামগ্রীতে বিনিয়োগ

কৃষিসামগ্রীতে বিনিয়োগ আরেকটি উপায় জমি না কিনেও চাষবাসে অংশ নেওয়ার। কৃষিসামগ্রী হল চাষবাসের ফলে যে কাঁচামাল তথা আনাজ উতপাদিত হয়, সেইসব। এই সব সামগ্রী দিয়ে নানান ধরনের খাদ্যসামগ্রী বা বাণিজ্যিক সামগ্রী তৈরি করা হয়ে থাকে। ভুট্টা, গম, সোয়াবিন, চাল ইত্যাদি নানান ফসলকেই কৃষিসামগ্রী বলা হয়ে থাকে। এইবার প্রশ্ন এতে বিনিয়োগ করবেন কীভাবে? এক্সচেঞ্জ-ট্রেড ফান্ডের মাধ্যমে এতে বিনিয়োগ সম্ভব। এছাড়া কমোডিটি ফিউচারস কন্ট্র্যাক্টের মাধ্যমেও এতে বিনিয়োগ সম্ভব। এক্সচেঞ্জ-ট্রেড ফান্ড নজর রাখে আপনি যাতে বাজারের অস্থায়ী পণ্যে বিনিয়োগ না করেন। আর কমোডিটি ফিউচারস কন্ট্র্যাক্টের মাধ্যমে আপনি চুক্তি করতে পারেন, যে এই পরিমাণ ফসল ভবিষ্যতের অমুক নির্দিষ্ট সময় এই পরিমাণ দামে বেচা যাবে। বাজার আগুন হওয়া থামাতেও এই চুক্তি আপনি ব্যবহার করতে পারেন, আবার বিশেষ লাভের জন্যও ব্যবহার করতে পারেন।

 

আরও পড়ুন-চাষের জন্য মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এল দেবীমূর্তি! বদলে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের ধারণা

 

ক্রাউডফান্ডিং

সাধারণ কৃষকরা বরাবরই চাষের পুঁজি জোগাড় করতে হিমসিম খান। ছোটখাটো চাষিদের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি বা প্রচুর দামি জিনিসপত্র নিয়ে চাষবাস শুরু করা একেবারেই অসম্ভব। ফলে যেটা করতে পারেন, একদল বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে ক্রাউডফান্ডিং-এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুঁজিটা তুলতে পারেন। এতে করে বিনিয়োগকারীরাও নিজেদের নানান খাতে বিনিয়োগের তালিকায় চাষবাসকে অন্তর্ভুক্ত করার একটা সুযোগ পেয়ে যাবেন।


এগ্রিকালচারাল ইটিএফ

কৃষিজাত সামগ্রীর এক্সচেঞ্জ-ট্রেড ফান্ড আসলে মিউচুয়াল ফান্ড, যার দ্বারা নানা কৃষিজাত পণ্যে বা খাদ্যাদি উৎপাদনকারী কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা যায়। নানান ধরনের খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দেয় আপনাকে এই এক্সচেঞ্জ-ট্রেড ফান্ড। লিকুইডিটির সুবিধাটি উপরি পাওনা। সর্বোপরি আপনাকে বারবার মাথা খাটিয়ে বের করতে হবে না কোন সামগ্রীতে বা কোন কোম্পানিতে আপনি বিনিয়োগ করবেন। এই কাজটি বিশেষ অভিজ্ঞ ফান্ড ম্যানেজারই করবে। কৃষিজাত দ্রব্যের এক্সচেঞ্জ-ট্রেড ফান্ড জমি না কিনেই কৃষিতে অংশগ্রহণ করার একটি উৎকৃষ্ট পদ্ধতি।

More Articles