অখিলেশ যাদব পুজো দেওয়ার পর কেন গঙ্গাজল দিয়ে মন্দির সাফ করল বিজেপি?

Akhilesh Yadav Kannauj Viral Video: মন্দিরের বাইরে একটি বোর্ড রয়েছে, তাতে স্পষ্ট লেখা রয়েছে, অ-সনাতনীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।

কনৌজ আসন থেকে লোকসভা নির্বাচনে লড়ছেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। প্রচার শুরুর আগে সিদ্ধপীঠ বাবা গৌরী শঙ্কর মহাদেব মন্দিরে প্রার্থনা করতে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর সেখানে পুজোর পরের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, অখিলেশ যাদব মন্দির চত্বর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে বিজেপির কর্মীরা মন্দির সাফাই করছেন। গঙ্গাজল দিয়ে গৌরী শঙ্কর মহাদেব মন্দির পরিষ্কার করছেন সেই কর্মীরা। ভারতীয় জনতা পার্টির অভিযোগ, অখিলেশের সঙ্গে বেশ কয়েকজন মুসলিম নেতা জুতো পরে মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছিলেন। তাই মন্দিরটিকে গঙ্গাজল দিয়ে ধুয়ে শুদ্ধ করতে হয়েছিল।

বিজেপির নগর সভাপতি শিবেন্দ্র কুমার গোয়ালের মতে, অখিলেশের সঙ্গে থাকা কিছু মুসলিম নেতা এবং অন্যান্য কর্মীরা যে শুধু জুতো পরে মন্দিরে ঢুকেছিলেন তাই নয়, সেখানে থুথুও ফেলেছিলেন। গোয়াল বলছেন, অখিলেশ যাদবের সফরে কোনও আপত্তি ছিল না, কারণ তিনি 'নির্বাচনী হিন্দু'। কিন্তু মন্দিরের বাইরে একটি বোর্ড রয়েছে, তাতে স্পষ্ট লেখা রয়েছে, অ-সনাতনীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।

আরও পড়ুন- জিতেছিলেন বাবা-মা দু’জনেই! স্মৃতির থেকে আমেঠি ছিনিয়ে আনতে পারবেন রাহুল গান্ধি?

অভিযোগের জবাবে, সমাজবাদী পার্টির নেতা আইপি সিং X-এ লিখেছেন, "অখিলেশ যাদব অনগ্রসর শ্রেণির, তাই বিজেপি মন্দির চত্বরটি গঙ্গাজল দিয়ে ধুয়েছে। এর আগে বিজেপির লোকেরা লখনউতে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনও ধুয়েছিল। বিজেপি বিশ্বাস করে যে দলিত, বঞ্চিত ও শোষিতদের হিন্দু মন্দিরে পুজো করার অধিকার নেই।

 

কনৌজ লোকসভা আসনের অন্তর্গত পাঁচটি বিধানসভা আসনের মাত্র একটিই, বিধুনা আসনটি সমাজবাদী পার্টির দখলে। বাকি সমস্ত আসনে জয়ী বিজেপিই। ২০০০ সালের উপনির্বাচনে এই আসনে ক্ষমতায় আসেন অখিলেশ। তার আগে এই আসন ছিল তাঁর বাবা মুলায়ম সিং যাদবের দখলে। ২০১২ সালের উপনির্বাচনে এই আসনে জেতেন অখিলেশের স্ত্রী ডিম্পল যাদব। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির হাত থেকে এই আসন ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। জয়ী হন সুব্রত পাঠক।

কনৌজ ভারতের ঐতিহাসিক স্থান। উত্তরপ্রদেশের এই অঞ্চলের জনবিন্যাসও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। কনৌজ লোকসভা কেন্দ্রে মুসলিম জনসংখ্যা ১৩ শতাংশের কিছু বেশি আর তপশিলি জাতির মানুষের সংখ্যা ২২ শতাংশের সামান্য বেশি (২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী)। এই অঞ্চলে যাদব ভোট নিজের দখলে রাখতে মরিয়া অখিলেশ। লোকসভার তৃতীয় দফার ভোটের প্রাক্কালে শ্যাম লাল পালকে দলের রাজ্য সভাপতি হিসাবে নিযুক্ত করেছেন তিনি। আসলে পাল, ধানগড়, গারেদিয়া বাঘেল গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছতে চেষ্টা করছে সপা। সমাজবাদী পার্টি এবার বিদায়ী সভাপতি নরেশ উত্তম প্যাটেল সহ ১১ জন কুর্মি সম্প্রদায়ের মানুষকে প্রার্থী করেছে। তবে আকবরপুর-রানিয়া আসন থেকে কেবলমাত্র একজন পাল প্রার্থী রয়েছেন, রাজারাম পাল। তাই শ্যাম লাল পালকে এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করে আসলে যাদব বলয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সত্যপাল সিং বাঘেলের প্রভাব হ্রাস করতে চাইছে সপা। সত্যপাল বাঘেল সমাজবাদী পার্টিরই নেতা ছিলেন। পরে তিনি বহুজন সমাজ পার্টিতে যোগ দেন এবং ২০১৫ সালে অবশেষ বিজেপিতে যান।

 

আরও পড়ুন- গত চারমাসে ১৪৮ বার শাস্তি! বিজেপির বিরুদ্ধে বললে কী কী করেছে মোদি সরকার?

পাল সম্প্রদায় অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) মধ্যে সর্বাধিক অনগ্রসর জাতির (এমবিসি) একটি। এই এমবিসিরাই গত দু'টি নির্বাচনে বিজেপির পাশেই দাঁড়িয়েছে। তাই ওবিসি ভোট টানতে এবার সমস্ত চেষ্টাই করছে সপা। ইতিমধ্যে ছয়জন নিষাদ এবং বিন্ড প্রার্থীকে টিকিট দিয়েছে দল। যদি কুর্মি, কুশওয়াহা এবং নিষাদ তাদের সম্প্রদায়ের ভোটের ৩০%-ও পায়, তাও সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে সমাজবাদী প্রার্থী।

এবার প্রশ্ন হচ্ছে, বিজেপির এই মন্দির ধোয়ার ভিডিও কি সমাজবাদী পার্টির প্রতি আস্থা ফেরাবে দলিত ও মুসলিম সম্প্রদায়ের? বিজেপি যেভাবে নিচু সম্প্রদায়ের বা মুসলিম সম্প্রদায়ের মন্দিরে প্রবেশকে 'ঘৃণ্য' করে দেখাতে চাইছে, যেভাবে 'অচ্ছ্যুত' বিষয়টিকে আবারও স্বাভাবিক করে তুলতে চাইছে তাতে কি ভোটবাক্সে প্রভাব পড়বে না? নাকি হিন্দু উচ্চবর্গের ভোটের পাশাপাশি অপমান করেও, লাঞ্ছনা করেও দলিত ভোট টানার কৌশলও ঘুরপথে রপ্ত করে ফেলেছে মোদির বিজেপি?

More Articles