ছিন্নভিন্ন স্তন, গুঁড়িয়ে গিয়েছে কোমর! হামাসের কবলে যেমন ছিলেন ইজরায়েলি বন্দিরা

Hamas-Israel Conflict: অক্টোবর যে ধ্বংসলীলা ইজরায়েলে চালিয়েছিল হামাসরা, তাতে অসংখ্য মহিলার মৃতদেহ মিলেছিল, যাঁদের শরীরে ভয়ঙ্কর যৌন লালসা পূরণের চিহ্ন দেখা গিয়েছে।

হিংসার ব্যপারে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছে না। ইজরায়েলেরই উল্টোপিঠ যেন প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন হামাস। তাঁদের হাতে বন্দি ইজরায়েলিদের বয়ান অন্তত তাই বলছে। একদিকে যেমন গাজা ও প্যালেস্টাইন জুড়ে ভয়ঙ্কর রকমের ধ্বংসলীলা চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল, গোটা বিশ্ব যার নিন্দা করছে অবিরত। স্কুল, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবিরে একের পর এক হামলা কেড়ে নিয়েছে অন্তত ১৫ হাজার ফিলিস্তিনির প্রাণ। অন্যদিকে হামাস, গত ৭ অক্টোবর যারা অতর্কিতে ঢুকে পড়েছিল ইজরায়েলে। নিরপরাধ ইজরায়েলিদের গুলি করে মারা থেকে শুরু করে একগুচ্ছ ইজরায়েলি নাগরিককে পণবন্দি করে রাখা, কী করেনি তাঁরা। সম্প্রতি চারদিনের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে এক এক করে বন্দি ইজরায়েলিদের মুক্তি দিয়েছে হামাস। আর তার পরেই সামনে এসেছে তাঁদের কবলে বন্দি ইজরায়েলিদের প্রতি তাঁদের অকথ্য অত্যাচারের কথা। বন্দিদের উপর মারাত্মক ভাবে যৌনহিংসা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। উপড়ে নেওয়া হয়েছে স্তন, গুঁড়িয়ে গিয়েছে পেলভিস।

দু-মাসেরও বেশি সময় ধরে ইজরায়েলের সঙ্গে প্যালেস্টাইনের এই অসম যুদ্ধ চলছে। দফায় দফায় প্যালেস্টাইনি ভূমিতে রকেট হামলা। গাজা ভূখণ্ড কার্যত ছাড়খার করে দিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। ইজরায়েল অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের অবস্থা আরও খারাপ। গোদের উপর বিষফোঁড়া অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা। এখনও পর্যন্ত এ যুদ্ধে ১৫ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে শিশু। ইজরায়েলের এই অভিযান ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলেছে প্যালেস্টাইনের শৈশবে। এখনও পর্যন্ত কত জখম হয়েছে প্যালেস্টাইনে তা গুনে শেষ করা যায় না। ভয়ঙ্কর এই যুদ্ধের শুরুটা হয়েছিল গত ৭ অক্টোবর। ইহুদিদের পবিত্র দিনে ইজরায়েলে ঢুকে নির্বিচারে গুলি করতে শুরু করে হামাস জঙ্গিরা। ধেয়ে আসে একসঙ্গে পাঁচ হাজার রকেট। অন্তত ১৪০০ ইজরায়েলির মৃত্যু হয়েছিল সেই ঘটনায়। তার সঙ্গে প্রায় আড়াইশোর কাছাকাছি মানুষকে অপহরণ করে গাজায় নিয়ে আসে হামাস জঙ্গিরা। তার মধ্যে ছিল বেশ কিছু বিদেশিও।

আরও পড়ুন: বন্দিদের কী পরিণতি হয় ইজরায়েলের জেলে? বর্ণনা দিচ্ছেন নির্যাতনের সাক্ষী

সম্প্রতি বন্দিমুক্তির বিনিময়ে চারদিনের যুদ্ধবিরতি দাবি করে হামাসরা। সেই প্রস্তাবে রাজি হয় ইজরায়েলও। সে সময় ধাপে ধাপে বন্দি ইজরায়েলিদের একে একে মুক্তি দিয়েছে সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন হামাস। একে একে তাঁরা ফিরেছেন নিজের ভূখণ্ডে। এক এক করে সামনে এসেছে তাঁদের জবানবন্দি। হামাসদের ঘেরাটোপে কেমন ছিলেন তাঁরা? কোন কোন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁদের। সামনে এসেছে সেই সব বিবরণী। ইজরায়েলি পুলিশ সূত্রের খবর, হামাসদের অত্যাচারের প্রমাণ ও তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করেছেন তারা। এখনও পর্যন্ত দেড়হাজারেরও বেশি সাক্ষ্যপ্রমাণ ও প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান জমা হয়েছে তাদের ঝুলিতে। ৭ অক্টোবর যে ধ্বংসলীলা ইজরায়েলে চালিয়েছিল হামাসরা, তাতে অসংখ্য মহিলার মৃতদেহ মিলেছিল, যাঁদের শরীরে ভয়ঙ্কর যৌন লালসা পূরণের চিহ্ন দেখা গিয়েছে। ইয়োমি সাডন নামে বছর উনচল্লিশের এক মহিলা, সেদিন সুপারনোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যালে ছিলেন। হামাসদের ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের হাত থেকে কোনওমতে বেঁচে যান তিনি। তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন, কীভাবে অনুষ্ঠান থেকে মহিলাদের তুলে এনে ভয়ানক মারধর ও যৌনহিংসা চালায় হামাসরা। করা হয় ধর্ষণও। ভয়ঙ্কর এই তাণ্ডবলীলা চালানোর পর হাসতে দেখা গিয়েছিল হামাস জঙ্গিদের। সেদিন এমন সব মৃতদেহ মিলেছিল, যাদের পিছনে বাঁধা হাত। খুবলে নেওয়া হয়েছে স্তন। যৌনাঙ্গ দিয়ে অবিরাম রক্ত বেরোচ্ছে। পেট, পা থেকে নিতম্ব, ক্ষতবিক্ষত সব কিছুই।

শুধু ৭ অক্টোবর নয়, হামাসদের হাতে বন্দি থাকাকালীন অপহৃত মেয়েদের উপর একই ভাবে নিপীড়ন চালিয়েছে জঙ্গিরা। এখনও পর্যন্ত হামাসদের কবলে যারা রয়ে গিয়েছে, তাঁদের বেশিরভাগই মেয়ে। মার্কিন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার সাংবাদিকদের জানান, সম্ভবত বন্দি নারীদের উপর যে ভয়ানক যৌনহিংসা চালিয়েছে হামাসেরা, সেই কথা বাইরে ছড়াতে দিতে চায় না তারা। সে কারণেই মহিলাদের মুক্তি দিতে দেরি করথে হামাস। হামাসদের এই যৌনহিংসার কড়া নিন্দা করেছে আমেরিকা। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই জোর দেওয়ার কথা বলেছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। হামাসদের এই যৌনহিংসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবাধিকার সংগঠনগুলি।

ইজরায়েল ও হামাসের এই টানাপড়েনের মধ্যে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গিয়েছে বিশ্বের দেশগুলির বড় অংশ। আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্সের মতো দেশগুলি সমর্থন করেছে ইজরায়েলকে। রাষ্ট্রপুঞ্জে ১২০টি দেশ ইজরায়েলের যুদ্ধনীতির বিরুদ্ধে সওয়াল করলেও বিশেষ লাভ হয়নি। নিজের অবস্থানে অনড় থেকেছে নেতানিয়াহু সরকার। ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধশান্তির আবেদন জানিয়েছে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন। ইজরায়েল যেমন ভয়াবহ ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, চালিয়ে চলেছে প্যালেস্টাইন জুড়ে, তেমন ভাবে বন্দিদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে হামাসরা, তার নিন্দা করছে গোটা বিশ্ব। অভিযোগ উঠেছে, অপহৃত মহিলা-বন্দিদের উপর লাগাতার যৌনহিংসা চালিয়ে গিয়েছে হামাস। গণধর্ষণের পর গণধর্ষণে বহু ইজরায়েলি বন্দিরই ভেঙে গিয়েছে পেলভিসের হাড়। যদিও হামাসদের বিরুদ্ধে ওঠা এই যৌনহিংসা ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে হামাস। তাঁদের দাবি, আমেরিকা ও ইজরায়েলের এই অভিযোগ কার্যত ভিত্তিহীন। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রাচীরকে ধ্বসিয়ে দেওয়ার জন্যই হামাসদের বিরুদ্ধে এই ধরনের প্রচার চালানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন:জমিদখল থেকে লুঠতরাজ! ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে যে তাণ্ডব চালাচ্ছে ইজরায়েলি দখলদারেরা

আসলে ক্ষমতার মুখই যে স্বৈরাচার, দুর্বলকে কোণঠাসা করে নিপীড়ন। সে জরায়েলই হোক আর হামাস। আর এ সত্যের বোধহয় নড়চড় হয় না। তাই একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠে দাঁড়িয়ে থাকে নেতানিয়াহু সেনা ও প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠী হামাস। প্যালেস্টাইনি ভূখণ্ডে দীর্ঘদিন ধরে ইজরায়েলি অত্যাচারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লব ঘোষণাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। অন্তত তেমনটাই দাবি করে হামাস। কিন্তু তার তলায় ইজরায়েলি নিরপরাধ বন্দিদের সঙ্গে যে যৌনহিংসা, যে ভয়ঙ্কর তাণ্ডবলীলা তারা চালিয়ে গিয়েছে, তা শুনে তাজ্জব হয়ে গিয়েছে গোটা বিশ্ব।

More Articles