নজরে সন্দেশখালি প্রতিবাদী প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদই বসিরহাটে ভরসা বামেদের

Lok Sabha Election 2024: সন্দেশখালির ঘটনার মাথায় রেখেই গুটি সাজিয়েছে সব দল। বামেরাও যে অন্যপথে হাঁটছে না, তা প্রমাণ করে দিয়েছে শুক্রবার তাদের প্রার্থীতালিকা।

লোকসভা ভোটের আগে বাংলায় সবচেয়ে বড় ঘটনা নিঃসন্দেহে সন্দেশখালি। একদিন আগেই সেই সন্দেশখালি মামলায় হাইকোর্টে তীব্র ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে রাজ্যকে। আসন্ন লোকসভা ভোটে স্বাভাবিক ভাবেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সন্দেশখালি। যেখানে কয়েকদিন আগেই স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের গ্রেফতারির প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয় সাধারণ মানুষ। সেই আন্দোলনের জল গড়িয়েছিল অনেক দূর। অবশেষে গ্রেফতার হয় শেখ শাহজাহান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। সেই সন্দেশখালি পড়ে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের আওতায়। যেখানে বিজেপি প্রার্থী করেছে সন্দেশখালির প্রতিবাদকারিনীদের মুখ রেখা পাত্রকে। তৃণমূল সেখানে সংখ্যালঘু ভোট টানতে প্রার্থী করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতা হাজি নুরুল ইসলামকে। বাকি ছিল শুধু সিপিআইএম প্রার্থীর নামঘোষণা। শুক্রবার ওই কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে বামেরা।

সন্দেশখালির ঘটনার মাথায় রেখেই গুটি সাজিয়েছে সব দল। বামেরাও যে অন্যপথে হাঁটছে না, তা প্রমাণ করে দিয়েছে শুক্রবার তাদের প্রার্থীতালিকা। সন্দেশখালি নিয়ে তোলপাড়ের সময় অভিযুক্ত শিবু হাজরার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার। সে সময় সন্দেশখালি যাওয়ার সময় কলকাতা থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছিল নিরাপদকে। আদালতে সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতাদের জমিলুঠ নিয়ে সরব হয়েছিলেন তারাপদ। সেই তারাপদকেই এবার ২০২৪ লোকসভা ভোটে বসিরহাট কেন্দ্রে প্রার্থী করল বামেরা। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, জেলযাত্রারই পুরস্কার মিলল তারাপদের।

আরও পড়ুন: ভোটের মুখে মোদির গলায় বিঁধে অনন্ত-কাঁটা, কোচবিহারে গড় ধরে রাখতে পারবে বিজেপি?

সন্দেশখালি আন্দোলনের সময় বারবার প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছে তারাপদকে। শেখ শাহাজাহানের গ্রেফতারির দাবিতে বারবার সরব হতে দেখা হয়ে গিয়েছিল তাঁকে। গ্রেফতার হওয়ার পর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে জামিনে মুক্তি পান তারাপদ। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ মনে করছে, সন্দেশখালি ইস্যুকে কেন্দ্র করে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া সিপিএম। সে কারণেই সন্দেশখালি কাণ্ডের প্রতিবাদী মুখ নিরাপদ সর্দারকেই প্রার্থী হিসেবে বেছেছে বামেরা।

ইতিহাস খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে, বরাবরই বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়ে এসেছে সিপিআই। বসিরহাট আসনে বার বার জয়ও পেয়েছে সিপিআই। প্রাক্তন সাংসদ ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত, মনোরঞ্জন সুর, অজয় চক্রবর্তীরা সংসদ মাতিয়েছেন। বাম জমানা শেষেও বার বার বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে সিপিআই। কিন্তু সন্দেশখালি কাণ্ড নিয়ে শোরগোল পরবর্তী সময়ে লোকসভা নির্বাচনে অন্য কৌশল। এবার সিপিআইয়ের হাত থেকে বসিরহাট আসনটি নিয়ে নিল সিপিএম। ওই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম। যিনি ওই এলাকার প্রাক্তন সাংসদ ছিলেন। দুঁদে রাজনীতিক। বিজেপির হয়ে ভোটে লড়ছেন রেখা পাত্র। তিনি স্থানীয় গৃহবধূ। সন্দেশখালি কাণ্ডের প্রতিবাদী মুখ। আইএসএফও প্রার্থী দিয়েছে। ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের প্রার্থী আক্তার আলি বিশ্বাস। যিনি পেশায় ইঞ্জিনিয়ার।

গোড়া থেকেই বসিরহাট কেন্দ্রে প্রার্থী দিতে চেয়েছিল নওশাদ সিদ্দিকির দল আইএসএফ। তবে বামেদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পরেও এ ব্যাপারে কোনও রফাসূত্রে আসতে পারেনি তারা। কোনও দলই ওই কেন্দ্রটি ছাড়তে রাজি ছিল না। প্রাথমিক ভাবে তারা সেখানে প্রার্থী করেছিল মহম্মদ শহিদুল ইসলাম মোল্লাকে। তবে তিনি সরে দাঁড়ানোয় সেই কেন্দ্রে আইএসএফের হয়ে লড়ছে আক্তার আলি বিশ্বাস। আসন ছাড়তে নারাজ বামেরাও শেষপর্যন্ত বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করেই দিল। তাদের তরফে প্রার্থী করা হল নিরাপদকেই। ১৯৭৭ সালের পর থেকেই সন্দেশখালি আসনটি নিজেদের দখলে রেখেছিল বামেরা। ২০১১ সালে পালা বদলের সময়ও এই আসনটি ধরে রাখতে পেরেছিল বামেরা। সেইবার এই আসনে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের কান্ডারী ছিলেন নিরাপদ সর্দার। তৃণমূল কংগ্রেসের পদ্ম মাহাতোকে চার হাজারের কাছাকছি ব্যাবধানে হারিয়েছিলেন তিনি। যদিও, ২০১৬ সালেই তৃণমূলের সুকুমার মাহাতোর কাছে হারতে হয় তাঁকে।

আরও পড়ুন: তৃণমূলকে জেতাতেই ডায়মন্ড হারবার থেকে প্রার্থী হলেন না নৌশাদ?

তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই নিরাপদের উপরেই ভরসা রাখছে দল। বিজেপি সেখানে দাঁড় করিয়েছে সন্দেশখালির নির্যাতিতাদের মুখ রেখা পাত্রকে। আবার সন্দেশখালি আন্দোলনের মুখ হয়ে দেদার লড়াই করতে দেখা গিয়েছে নিরাপদকে। জেলে পর্যন্ত গিয়েছেন তিনি। এতদিনকার পোড় খাওয়া রাজনৈতিক তিনি। সেখান থেকে দাঁড়িয়ে অনিভজ্ঞ রেখার ঝুলিতে যে সিমপ্যাথি ভোট আসার কথা ছিল, তার বেশ কিছুটা অংশ ভাগ হয়ে যাওয়ার কথা নিরাপদের দিকেও। এদিকে বসিরহাট সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা। সেখানে তৃণমূলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তৃণমূলের পাকাপোক্ত নেতা হাজি নুরুল ইসলাম। সন্দেশখালিতে সুনাম ফেরাতে গোড়া থেকেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো সুবিধাগুলিকে বড় করে প্রচারে তুলে এনেছে তৃণমূল। বারবার আবির খেলে, উৎসব পালন করে মানুষের মগজে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে মমতার জনমুখী প্রকল্পগুলির সুফলের কথা। আর সেই সুযোগেই অতীতের বিরূপ স্মৃতিগুলির উপর পলি ফেলতে উঠেপড়ে লেগেছে তৃণমূল। তবে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বসিরহাটে নুরুলের যে আলাদা একটা গ্রহণযোগ্যতা থাকবেই, তাতে সন্দেহ নেই। আশা করা যায়, আইএসএফ প্রার্থী আক্তার আলি বিশ্বাস সেই ভোট খানিকটা কাটবেন। ভালো করে দেখলে বোঝা যায়, বসিরহাট লোকসভা ভোটের মূল ইস্যু আসলে দু'টো, এক সংখ্যালঘু ভোট, দুই সন্দেশখালির ঘটনা। এবার কোনদিকে গড়াতে চলেছে লোকসভা ভোটের জল, তা অবশ্য পরিষ্কার হবে ভোটের ফলাফলেই।

More Articles