রাজনৈতিক দলগুলোর অনুদান আসে কোত্থেকে? সত্যিই জানার অধিকার নেই নাগরিকদের?

Electoral Bonds Case Hearing : যে দলগুলি বিরোধী, অর্থাৎ যারা কেন্দ্রে বা রাজ্যে কোথাও ক্ষমতায় নেই তাঁদের অনুদান প্রায় শূন্য।

রাজনৈতিক দলগুলির ব্যাপক অনুদানের উৎস, নির্বাচনী বন্ড নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শুনানি শুরু হয়েছে আদালতে। সুপ্রিম কোর্ট ভারতের নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলির প্রাপ্ত অনুদানের তথ্য (৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিআর গাভাই, জেবি পারদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্রের একটি বেঞ্চ কংগ্রেস নেত্রী জয়া ঠাকুর এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) দায়ের করা আবেদন সহ মোট ৪ চারটি আবেদনের শুনানি করে। অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রাইটস (এডিআর) সংস্থার পক্ষ থেকেও জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি সরকার এই ইলেক্টোরাল বন্ড স্কিমটি আনে। রাজনৈতিক দলগুলিতে নগদ অনুদানের বিকল্প হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল বন্ড প্রকল্প।

শুনানির সময়, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা রাজনৈতিক অনুদান এবং নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পের গুরুত্ব বোঝাতে পিটিশনকারী, অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মসেরই (ADR) একটি ২০১৮ সালের রিপোর্ট উল্লেখ করেন। ওই প্রতিবেদনে ২০০৪-০৫ এবং ২০১৪-১৫ সালের জাতীয় ও আঞ্চলিক দলগুলোর অর্থায়নের উৎস বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তুষার মেহতা বলছেন, এডিআর রিপোর্টে যে পরিসংখ্যানগুলি রয়েছে তা রাজনৈতিক দলগুলি স্বেচ্ছায় প্রকাশ করেছে। আবেদনকারীরা যে যুক্তি দিয়েছেন যে, শাসক দলই বেশি অনুদান পাচ্ছে, এই বিষয়টিকেও অত্যন্ত স্বাভাবিক মনে করছেন তুষার মেহেতা। তাঁর ব্যাখ্যা, শাসক দলে বেশি অনুদান দেওয়াটাই তো লাভজনক।

নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের অনুদান সংগ্রহকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক আবেদন জমা পড়ে সুপ্রিম কোর্টে। কেন্দ্রের হয়ে সলিসিটর জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানি জানান, রাজনৈতিক দলগুলো কোথা থেকে কত টাকা পাচ্ছে, অনুদান পাচ্ছে তার উৎস জানার অধিকার নাগরিকদের থাকতে পারে না। অন্যদিকে আবেদনকারীদের তরফে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ, কপিল সিব্বল, শাদান ফরাসত এবং নিজাম পাশারা বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থেই এই অনুদানের উৎস সম্পর্কে সবটা জানা উচিত নাগরিকদের। কারা কোন দলকে কেন কত টাকা দিচ্ছে এবং তার বিনিময়ে এই ব্যক্তি বা সংস্থারা কী কী সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে, তা জানাই যাবে না।

আরও পড়ুন- বিজেপি তৃণমূলের দুর্নীতি ধরতে পারছে না, নাকি ধরতে চাইছে না?

প্রশান্ত ভূষণ বলেছিলেন, দলগুলোর প্রাপ্ত মোট অনুদানের তথ্য খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে এই বন্ডের মাধ্যমে শাসক দলগুলিই লাভবান হচ্ছে। যে দলগুলি বিরোধী, অর্থাৎ যারা কেন্দ্রে বা রাজ্যে কোথাও ক্ষমতায় নেই তাঁদের অনুদান প্রায় শূন্য। এই একতরফা অনুদানে দুর্নীতিই বাড়ছে। শাসক ও বিরোধী দলগুলির মধ্যে চরম বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। আইন অনুযায়ী বিদেশি সংস্থাও তার অধীনস্থ দেশি সংস্থার মাধ্যমে বন্ড কিনতে পারে, অর্থাৎ ভুয়ো সংস্থা তৈরি করে বাইরে থেকে টাকা দেওয়ার সুযোগও তৈরি হয়ে যাচ্ছে।

আইনজীবী সিব্বল বলছেন, কোনও নাগরিক যদি ২০ হাজার টাকার চেয়ে দামী নির্বাচনী বন্ড কেনেন, তাহলে তিনি নিজের নাম জানাতে বাধ্য। অথচ কোনও কর্পোরেট সংস্থার বেলায় সেই নিয়ম খাটছে না। এক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা কেন পাচ্ছে কর্পোরেট সংস্থাগুলি? কপিল সিব্বল বলছেন, নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা আসলে কালো টাকাকে ঠেকাচ্ছে না বরং সাদা টাকাকে সন্দেহের তালিকায় ফেলে দিচ্ছে।

“শাসক দলের কাছে বিরোধী দলের অনুদান সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার অনেক পথ ও উপায় রয়েছে। অন্যদিকে, বিরোধী দল কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের দাতা কারা তা হয়তো জানতেও পারবে না, কিন্তু ক্ষমতাসীন দল বিরোধীদের দাতাদের সম্পর্কে জানতে পারবে। ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তির পক্ষে তথ্য পাওয়া সহজ।," বলেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না।

প্রধান বিচারপতি নিজের পর্যবেক্ষণে জানাচ্ছেন, রাজনৈতিক অনুদানে সাদা টাকা আনার চেষ্টায় 'তথ্যের বড়সড় অভাব' তৈরি হয়েছে। উদ্দেশ্যটি প্রশংসনীয় হলেও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য কি সঠিক পথ ব্যবহার করা হয়েছে আদৌ? প্রশ্ন তুলেছেন চন্দ্রচূড়।

More Articles