ভিভিপ্যাট মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে কমিশন! কী জবাব দিলেন নির্বাচনী আধিকারিক?

EVM-VVPAT case: সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়দানের কথা ছিল বুধবার। তার আগে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চ বেশ কয়েকটি প্রশ্ন রাখল ইলেকশন কমিশনের সামনে।

দেশ জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে লোকসভা ভোট। দীর্ঘদিন ধরেই এ দেশের ভোটে ইভিএম মেশিন কারচুপির অভিযোগ জানিয়ে আসছে বিরোধী দলগুলি। সেই নিয়ে মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। ইভিএমের সঙ্গে সমস্ত ভিভিপ্যাট স্লিপ মিলিয়ে দেখার দাবি জানিয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল। আর সেই মামলাই উঠেছিল সুপ্রিম কোর্টে। বিরোধীদের দাবি ছিল, ভোটপ্রক্রিয়া স্পষ্ট ও স্বচ্ছ করার জন্যই ওই প্রক্রিয়া চালু করা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনের পাল্টা দাবি ছিল, এমন প্রক্রিয়া চালু হলে ফের ব্যালট বক্সের জমানায় ফেরত যেতে হবে। বুধবার সেই মামলা নিয়ে রায় দিতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে একগুচ্ছ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

বিরোধীদের এই দাবি অবশ্য আজকের নয়। ২০১৯ ভোটের পরেই এই সংক্রান্ত দুটি মামলা দায়ের হয়েছিল শীর্ষ আদালতে। আইনজীবী অরুণ কুমার আগরওয়াল এই সংক্রান্ত একটি মামলা করেন। অন্য মামলাটি করেছিস অ্যাসোসিয়েশন অব ডেমোক্রেটিক রিফর্মস বা এডিআর। আইনজীবী অরুণ কুমারের আবেদনের সঙ্গে ট্যাগ করা হয় এডিআর-এর করা মামলাটিও। সেই আবেদনে দাবি করা হয়েছিল, সমস্ত ইভিএম ভোটের সঙ্গে যেন ভিভিপ্যাট স্লিপ মিলিয়ে দেখা হয়। একই সঙ্গে ভোটাররা যাতে নিজেরাই ওই স্লিপ একটি ব্যালট বক্সে ফেলতে পারেন। সেই আবেদনও জানানো হয়েছিল।

আরও পড়ুন: ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট মেলালেই ভোটারদের ভোট সঠিক জায়গায় যাবে?

সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়দানের কথা ছিল বুধবার। তার আগে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চ বেশ কয়েকটি প্রশ্ন রাখল ইলেকশন কমিশনের সামনে। এদিন সকালেই কমিশনের এক পদস্থ কর্তাকে আদালতে তলব করে বিচারপতিদের বেঞ্চ। তাকে শীর্ষ আদালত জানায়, এই সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি উত্তর আদালতের প্রয়োজন। কী সেই প্রশ্ন?

প্রথম প্রশ্ন: সব ভিভিপ্যাটেই কি মাইক্রো কন্ট্রোলার ইনস্টল করা আছে?

দ্বিতীয় প্রশ্ন: এই মাইক্রো কন্ট্রোলারকে কি এক বারই প্রোগ্রাম করা যায়?

তৃতীয় প্রশ্ন: নির্বাচন কমিশনের কাছে কতগুলো সিম্বল লোডিং ইউনিট রয়েছে?

চতুর্থ প্রশ্ন: নির্বাচনী হলফনামা জমা দেওয়ার সময় এক মাস অর্থাৎ তিরিশ দিন। আর সমস্ত রেকর্ড ৪৫ পর্যন্ত মজুত করা থাকে। এই ভ্রম সংশোধন করা প্রয়োজন বলেই জানায় আদালত।

EVM-VVPAT case SC reserves judgment after getting EC clarification on machines

ব্যালট বক্সের জমানা গিয়েছে। তার জায়গা নিয়ে ইলেকট্রনিক্স ভোটিং মেশিন বা ইভিএম। এই ইভিএমের একটি যন্ত্রে ভোটদান করার পর দ্বিতীয় যন্ত্র অর্থাৎ ভিভিপ্যাটে দেখিয়ে দেওয়া হয়, ভোটারের ভোটটি ঠিকঠাক জায়গায় জমা পড়ল কিনা। সেই কাগজটি কিন্তু ভোটগণনার কাজে তেমন ভাবে কাজে লাগে না। শুধু শুধু একটি পাত্রে জমা হয়। আইনজীবী অরুণ কুমার আগরওয়াল সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা আবেদনে জানিয়েছে, সরকার ৫ কোটি টাকা খরচ করে ৪৪ লক্ষ ভিভিপ্যাট মেশিন কিনেছে। অথচ তার মধ্য়ে মাত্র ২০ হাজারের আশপাশের ভিভিপ্যাট স্লিপ যাচাই করা হয় ভোটগণনার সময়ে। সেই নিয়ম পাল্টে একশো শতাংশ ভিভিপ্যাট স্লিপ যাচাইয়ের দাবি জানিয়েছিল বিরোধীরা।

প্রতিবছর ভোট যেতে না যেতেই ইভিএম কারচুপির অভিযোগ জমা হতে থাকে। যে-ই হারেন, তারা ইভিএমের গন্ডোগোলকে দোষেন। সংখ্যায় বহু সময় রকমফের হতে থাকে ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের নম্বর না মেলার জন্য। সেই পরিস্থিতিটাকেই বদলাতে চেয়েছেন আইনজীবী অরুণ কুমার ও এডিআর।

EVM-VVPAT case SC reserves judgment after getting EC clarification on machines

ইভিএমে ভোট দেওয়ার পর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ওই ভিভিপ্যাট মেশিন থেকে একটি কাগজ বেরিয়ে আসে, যেখানে ভোটদাতার মনোনীত প্রার্থীর নাম ও তার দলের প্রতীক। সেই কাগজ এদ্দিন জমা হত একটি পাত্রে। সেই মামলাতেই এবার নির্বাচন কমিশনের কাছে একগুচ্ছ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে আদালত। সেই প্রশ্নের উত্তর পেলে তবেই রায়দান সম্ভব বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। একই সঙ্গে বিচারপতিদের ডিভিশনাল বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে যে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের অধিকার বা ক্ষমতা তাদের নেই। তবে নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিঘানিক কর্তৃপক্ষের কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করার অধিকার তাদের রয়েছে।

গত ১৬ এপ্রিল এই ইভিএম সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্ট ইভিএমগত সমস্যার জন্য দুষেছিলেন সাধারণ মানুষকে। বলেছিলেন, মানুষের হস্তক্ষেপ না হলে ইভিএমের ফলাফল সঠিক আসবে। তবে বুধবার বিষয়টি নিয়ে আরও গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করল শীর্ষ আদালত। এতদিন নিয়ম ছিল প্রতিটি বিধানসভায় মোট দুশোটি ভিভিপ্যাট মেশিনের থেকে মাত্র পাঁচটির স্লিপ পরীক্ষা করা হত। সেই সংখ্যা একশো শতাংশ করতে কোথায় সমস্যা, কোথায়ই বা সুবিধা- খতিয়ে দেখছে আদালত। 

আরও পড়ুন: গুনতে হবে সমস্ত ভিভিপ্যাট স্লিপ, কেন ভোটের আগেই এমন দাবি বিরোধীদের?

নির্বাচনী আধিকারিক ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে বেশ কিছু উত্তর দিয়েছেন। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, ইভিএম ও ভিভিপ্যাট ভোটগ্রহণের পরে ৪৫ দিন পর্যন্ত কেন তার তথ্য সংগ্রহ করে, তা নিয়ে সদুত্তর দিয়েছে কমিশন। আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক কোনও নির্বাচনী পিটিশন রয়েছে কিনা তা দেখার জন্য বিভিন্ন হাইকোর্টে চিঠি দেন। যদি তা নমা হয়, তবে সেই রেকর্ড স্টোরেজ থেকে বের করে নেওয়া হয়। নির্বাচনী আধিকারিক এ-ও জানিয়েছেন, ভোটগ্রহণের আগে ভিভিপ্যাট ও ইভিএম আলাদাভাবে সংরক্ষণ করা হয়। এবং ভোটগ্রহণের পর সেটিকে একটি ইউনিট হিসেবে ধরা হয়। যা সিলগালা করা হয় ভোটের আগে। এবং ভোটের পর সবকটি মেশিনকে সিল করে নির্বাচনী আধিকারিকদের দিয়ে সই করে তবে তোলা হয়। নির্বাচনী আধিকারিক এ-ও জানান, ইভিএমের স্টোরজ ফ্ল্যাশ মেমরি। যা ১০২৪টি প্রতীক জমিয়ে রাখতে পারে। ইভিএম আলাদা করে কোনও প্রতীক বা দলের নাম চিনতে পারে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন নির্বাচনী আধিকারিক। ইভিএমের প্রোগ্রামিং করে দেয় প্রস্তুতকারক সংস্থাই। তবে কোন দল কত নম্বর বাটন পেতে চলেছে ভোটযন্ত্রে, তা হয়তো কখনও জানতে পারেন না ভোটযন্ত্র নির্মাতা। ফলে দুর্নীতির সুযোগ কম বলেই মনে করে নির্বাচন কমিশন। বুধবার এই রায়দান মুলতুবি রেখেছে শীর্ষ আদালত।  ভোটের আগেই কি ইভিএম-ভিভিপ্যাটকে জড়িয়ে এই বিতর্কের শেষ হবে, না সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পাল্টে যাবে ভোটবাক্সের সমীকরণ, সেটাই দেখার এখন।

More Articles