একেই বলে বিরাট উত্থান! কোণঠাসা বিজ্ঞাপনের 'মহারাজা'?

Virat Kohli: ৩৪ বছরে এসেও দেখিয়ে দিলেন নিজের কীর্তি। দিকে দিকে জয়গাঁথা সূচিত হল তাঁর। অনেকেই বাংলার দাদার ফিরে আসার সঙ্গে তুলনা করছেন এই ফেরাকেও। কিন্তু এখানেও রয়েছে কাঁটা! কেন?

"রাখুন তো মশাই! বাঙালি, বাংলার আবেগ এবং বঞ্চিত তাঁকে নিয়েও যেমন গর্জে উঠেছিল, এঁর ক্ষেত্রে অন্যথা কেন! এও তো বঞ্চিত!" রাগত চেহারা আর বিস্ফারিত চক্ষু সমেত বাঘের বাচ্চার মতো গর্জে উঠলেন মানিকবাবু। একি! বাঙালি, অথচ সৌরভে বিকশিত হতে হতেও গাঙ্গুলি ছাড়িয়ে কোহলির জয়গান!

হ্যাঁ! পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের রোমহর্ষক জয়ের নায়ক বিরাট কোহলির প্রশংসার বন্যায় প্রায় এমনই হাল হয়েছে সোশ্যাল সমাজের। একের পর এক পোস্টে একটিই ইঙ্গিত। যেন এই সাফল্যে বিরাট আদতে হারিয়েছেন দাদাকেই! অর্থাৎ একদা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধানের অঙ্গুলিহেলনে একের পর জায়গা থেকে সরতে হয়েছিল যে বিরাটকে। যে পতনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল দেশের ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ককে, সেই বঞ্চনার যোগ্য জবাবই যেন দিলেন তিনি! এমন একটা রবেই হঠাৎ মেতেছে সোশ্যাল দুনিয়া।

ঠিক কী করেছেন বিরাট? রবিবার টি২০ বিশ্বকাপ-পর্বের শুরুতে প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান। গত টি২০ বিশ্বকাপে দুবাইয়ের সেই হারের বিভীষিকার হাত ধরেই এদিন মাঠে নামে দুই পক্ষ। ৮ উইকেটে ১৫৯ রান করে পাকিস্তান। প্রথম ব্যাট করে বাবর আজমরা রোহিত শর্মার দলের সামনে রাখেন ১৬০-এর লক্ষ্য। এরপর ব্যাট করতে নামে ভারতীয় দল। মাত্র ৩১ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে তখন খেই হারিয়েছে দেশ। ফের হারের স্বাদ নেওয়ার অপেক্ষার মধ্যেই হাল ধরলেন বিরাট। একের পর এক বাউন্সার সামলে জিতিয়ে দিলেন ম্যাচ। ৫৩ বলে তিনি করেন ৮২ রান। শেষ ওভারের ৫ বলে প্রয়োজন ছিল ১৬। সেখানেও ছক্কা হাঁকান বিরাট। ফের জেতে ভারত। গত এশিয়া কাপের হারের বদলাও নেন তাঁরা।

বিরাট কোহলি এশিয়া কাপের ম্যাচে ফের ফর্মে ফিরতে শুরু করেন। একের পর এক ম্যাচে ছাপ রাখেন তিনি। কিন্তু টি২০ বিশ্বকাপের হাইভোল্টেজ পাকিস্তান-ভারত ম্যাচে ফের রাজকীয় উত্থান ঘটল তাঁর। কিন্তু কেন বিরাটের জন্য শুভেচ্ছা-বার্তায় খোঁচার মুখোমুখি হচ্ছেন সৌরভ? নাম না করে, বা নাম নিয়েই কেন কটাক্ষের তির তাঁর দিকে?

আরও পড়ুন- ক্ষমতার শীর্ষে, তবু বাঙালির চোখে কেন ‘বঞ্চিত’ সৌরভ?

ডিসেম্বর, ২০২১। একদিনের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হলেন রোহিত শর্মা। সঙ্গে আসন্ন টি২০ সিরিজের জন্যেও রোহিতের নাম প্রস্তাব করল নির্বাচক মণ্ডলী। সরলেন বিরাট। ফের তোলপাড় হল দেশ। প্রতিবাদে সরব হলেন বিরাটের ভক্তরা। তখন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

১৫ জানুয়ারি, ২০২২। আচমকা সমস্ত জল্পনা সত্যি করেই পদ ছাড়লেন বিরাট কোহলি। টেস্ট দলের অধিনায়ক পদ থেকে সরে গেলেন তিনি। ৩৩ বছর বয়সী ক্রিকেটার যখন পদ ছাড়ছেন, তখনও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির পদ সামলাচ্ছেন সৌরভ।

ক্রিকেট মহলে কান পাতলেই শোনা যায়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান হওয়ার পর থেকেই চাপ বাড়ছিল রবি শাস্ত্রীর উপর। ভারতীয় পুরুষ ক্রিকেট দলের প্রধান কোচকে অপসারণের পদ্ধতি শুরু হয়েছিল তখন থেকেই। অবশেষে সরতে হয় রবিকে। প্রসঙ্গত, এই রবি শাস্ত্রীর আবার কাছের মানুষ বলে পরিচিত বিরাট কোহলি। অনেকেই বলেন, সৌরভ-পূর্ববর্তী সময়ে রবি এবং বিরাটের যুগলবন্দিই সর্বেসর্বা ছিল ভারতীয় ক্রিকেট দলে। তাঁদের সাম্রাজ্যে যে রোহিত শর্মারা খুব একটা খুশি ছিলেন, একথা নিশ্চিত করেন না অনেকেই। ঠিক এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বরাবর সৌরভ-বিরোধী মুখ রবি শাস্ত্রীর বিদায়লগ্ন থেকেই খানিকটা কোণঠাসা হন বিরাট! তাঁকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়! অবশেষে। ২০২০ থেকে করোনায় বদলে যাওয়া ক্রিকেটের মধ্যে কিছু না হলেও ২০২১-এ আরও চাপ বাড়ে বিরাটের উপর। এদিকে তাঁর পারফরম্যান্স নিয়েও ওঠে প্রশ্ন। তেমন একটা ভালো খেলতে পারছেন না, এই প্রশ্নেও বিদ্ধ হতে হয় তাঁকে।

অবশেষে অধিনায়কত্ব থেকে বিদায় নিতে হয় তাঁকে। আর তারপরে হাতে থাকা টেস্ট দলের অধিনায়ক পদও ছাড়েন বিরাট। এরপরেই জল্পনা বাড়ে। একদা গ্রেগ চ্যাপেলের কৌশল, রাহুল দ্রাবিড়ের রূপকে যে সৌরভকে বঞ্চিত করেছিল, সরিয়ে দিয়েছিল, মহেন্দ্র সিং ধোনির সময়ে যে সৌরভ বিকশিত না হয়ে অবশেষে সরে গিয়েছিলেন, যে মহারাজ বন্ধু শাহরুখ খানের আইপিএল দলেও একটা সময় ছিলেন ব্রাত্য- সেই একদা বঞ্চিত সৌরভই ফের একই কাজ করছেন! যদিও এখানেই অনেকের দাবি ছিল, যদি তাই করতেন, বা চেষ্টাও হত তাহলে রবির পরিবর্তে সেই রাহুল দ্রাবিড় কেন! তবে এর মধ্যে ভিন্ন কারণ ছিল বলে দাবি অনেকের।

আরও পড়ুন- টি-২০ বিশ্বকাপের শুরু থেকেই মাঠের তারকা! আজও সমান দাপটে খেলছেন যে ক্রিকেটাররা

আর এই সমস্ত দোলাচলে ক্রমশ নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকেন বিরাট কোহলি। ব্যর্থতা আর বঞ্চনার শিখরে পৌঁছেও কন্যা ভামিকা আর স্ত্রী অনুষ্কাকে নিয়েই নতুন করে বাঁধেন স্বপ্ন। প্রস্তুতি নেন ফের। আবার শুরু হয় নতুন করে নিজেকে চেনার লড়াই। বিরাট ফের বাঁধেন নয়া স্বপ্নের ঘর। এবারও সেই চিৎকার, সেই উল্লাস, সেই রাজকীয় উত্থানের স্বপ্নে মশগুল হন তিনি। আর কঠিন অধ্যবসায়, সাহসি পদক্ষেপ আর লড়াইকে মুখ্য করেই ফের ফিরলেন বিরাট। ৩৪ বছরে এসেও দেখিয়ে দিলেন নিজের কীর্তি। দিকে দিকে জয়গাঁথা সূচিত হল তাঁর। অনেকেই বাংলার দাদার ফিরে আসার সঙ্গে তুলনা করছেন এই ফেরাকেও। কিন্তু এখানেও রয়েছে কাঁটা! কেন?

অক্টোবর, ২০২২। ঠিক যে সময়ে দাঁড়িয়ে ফের ফিরছেন বিরাট, সেই সময়েই আশ্চর্য সমাপতন ঘটছে সৌরভ-ইস্যুতেও। প্রথা ভেঙে 'ডিমোশন' নিতে তৎপর হয়েছেন সৌরভ। বিসিসিআই ছেড়ে সিএবির প্রধান হতে চলেছেন তিনি! যাঁকে কয়েকদিন আগেই সরতে হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির পদ থেকে। বেদনার বিদায়ে কলকাতায় ফিরতে হয়েছে মহারাজ কে। ফের উঠেছে বঞ্চনার অভিযোগ। তার সঙ্গেই অমিত শাহ, লুচি-আলুরদম, সমস্ত রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও বিদ্ধ করেছে দাদাকে। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই ফিরছেন বিরাট।

এখানেই দুইয়ে দুইয়ে চার করছেন অনেকেই। বলছেন, প্রত্যাখ্যানের যোগ্য জবাব পেলেন তিনিও! কেউ কেউ বলছেন, 'এ তুমি কেমন তুমি, চোখের তারায় আয়না' ধরেও একই পথে বেছেছিলে!

More Articles