কেন হঠাৎ কুণালের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়?

Justice Abhijit Gangopadhyay: এই সব রেষারেষির মধ্যেই হঠাৎ করে কুণাল ঘোষের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিচারপতি। হঠাৎ করেই বলে বসলেন, কুণাল ঘোষের সঙ্গে নাকি ভালোই বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে তাঁর।

বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। একসময় তিনি ছিলেন চাকরিপ্রার্থীদের ত্রাতা। বরাবরই সাহসী এই বিচারপতি এজলাসে বসে দ্বিধাহীন ভাবে বলে ফেলেন অনেক কথাই, যা শাসকদের চক্ষুশূল। কেউ বলেন তিনি বামঘেঁষা, কেউ আবার বলেন অন্য কথা। রাজ্যসরকারের সঙ্গে বরাবরই তাঁর আদায় কাঁচকলায়। তবে শাসকদলের বিভিন্ন প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা হলে সৌজন্যটুকু প্রদর্শন করতে পিছপা হননি কোনওদিনই। সম্প্রতি আবারও শিরোনামে এসেছেন কলকাতা হাইকোর্টের এই বিচারপতি। ফের কী এমন বললেন অভিজিৎবাবু, যা নিয়ে তোলপাড় সংবাদমাধ্যম।

কিছুদিন আগেই তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির হিসাব দেখতে চেয়েছিলেন হাইকোর্টের বিচাররতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রাজ্যসরকারকে চ্যালেঞ্জের সুরে তিনি জানান, তিনি দেখতে চান আইনের মুখোমুখি হয়ে এ রাজ্যের সরকার কতদিন চালাতে পারে। এরই মধ্যে আবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের অপসারণ চেয়ে চিঠি জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে। সে ব্যাপারটি নিয়ে স্বভাবতই ক্ষুব্ধ ছিলেন অভিজিৎবাবু। সে নিয়ে রাজ্যসরকারকে এক হাত নেনও তিনি।

তবে হঠাৎ করেই মঙ্গলবার অভিজিৎবাবুর গলায় শোনা গেল অন্য সুর। হঠাৎ করেই কুণাল ঘোষের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা গেল বিচারপতিকে। ব্যাপারখানা কী? তৃণমূব মুখপাত্রের প্রশংসা করে এদিন তিনি জানান, মানুষটা নাকি তেমন খারাপ না। এদিকে, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে সুযোগ পেলেই কটাক্ষ করতে ছাড়েন না কুণাল ঘোষ। সব মিলিয়ে হাওয়া যে ঠিক কোন দিকে বইছে, তা বুঝতে বেশ সমস্যাতেই পড়েছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।

আরও পড়ুন: মমতা কি দলেই কোণঠাসা? অভিষেক নিয়ে কুণালের বার্তায় কোন ইঙ্গিত?

এক সপ্তাহও হয়নি। সন্দেশখালিতে ইডি-র উপর আক্রমণের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর সাফ প্রশ্ন ছিল, "রাজ্যপাল কেন ঘোষণা করছেন না যে রাজ্যে সাংবিধানিক অবস্থা ভেঙে পড়েছে।" তার প্রতিক্রিয়ায় কুণাল ঘোষ পাল্টা তোপ দেগে বলেন, 'ওনার বিচারপতি হওয়ার যোগ্যতা নেই, কোর্টের বাইরে টুল নিয়ে বসুন।'

এই সব রেষারেষির মধ্যেই হঠাৎ করে কুণাল ঘোষের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিচারপতি। হঠাৎ করেই বলে বসলেন, কুণাল ঘোষের সঙ্গে নাকি ভালোই বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে তাঁর। সম্প্রতি নাকি কুণালবাবু নিজের লেখা উপন্যাসও পাঠান অভিজিৎবাবুকে। বিচারপতির বক্তব্য, বেশ ভাল লিখেছেন, লেখার হাত খুব ভাল'। বলেন, 'মানুষটা খারাপ না। আমি একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে উঠে দাঁড়িয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেন। ভদ্র মানুষ, ভাল ব্যবহার করেন। আমিই বা কেন খারাপ ব্যবহার করব!' এদিকে, কার্যত একই সুর শোনা গিয়েছে কুণালের গলাতেও। বিচারপতি গঙ্গেোপাধ্যায়ের প্রশংসার কথা জানতে পেরে তৃণমূল মুখপাত্র জানালেন, তাঁরও নাকি দিব্যি লেগেছিল অভিজিৎবাবুর সঙ্গে আড্ডা মারতে। তবে কথার ফাঁকে এ-ও জানিয়ে দেন কুণালবাবু, বন্ধুত্ব হয়েছে বলেই যে আক্রমণের ধার কমাবেন তিনি, এমনটা কিন্তু নয়। দল ও নেত্রীকে আক্রমণ করলে তার পাল্টা সমালোচনা করাটা যে তাঁর কর্তব্যের মধ্যে পড়ে, তা সাফ জানিয়ে দেন তিনি।

একদিন আগেই সরকারি স্কুলে পড়াশোনার মান নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। একটি মামলার শুনানিতে তিনি বলেন, "কী হচ্ছে এ রাজ্যে? আমাকে আর কিছু বলতে বাধ্য করবেন না। ভগবান বৃদ্ধ হয়েছেন, গোলযোগ সইতে পারেন না।" তিনি এ-ও জানান, "সরকারি স্কুলে পড়াশোনা ঠিক ভাবে হচ্ছে না। ছিঃ...! আগে 'জিন্দাবাদ', 'জিন্দাবাদ' করত, এখন অন্য কিছু করে।" অবসরকালীন সুযোগসুবিধার কিছুই পাচ্ছেন না, এমনই অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রাথমিক স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক কানাই চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, ২০০৮ সালে স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই তিনি তিন মাসের ছুটি নিয়েছিলেন। কিন্তু ছুটি শেষ হওয়ার পর তাঁকে কাজে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। ২০১৪ সালে তিনি অবসরগ্রহণ করেন। কিন্তু মামলাকারীর দাবি, তাঁকে অবসরকালীন সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে স্কুল।

আরও পড়ুন:যোগী আদিত্যনাথ, আদানিই তবে ‘আদর্শ’ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের?

সেই মামলা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ফের রাজ্য়সরকারের তীব্র সমালোচনা শুরু করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তবে তার একদিনের মাথায় কেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের গুণ গাইছেন অভিজিৎবাবু। শুধুই সৌজন্য, নাকি এর নেপথ্যে রয়েছে অন্য খেলা! সেটাই আপাতত ভাবাচ্ছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

More Articles