লোকসভা হামলার ঘটনায় এবার গ্রেফতার পুলিশ-পুত্র, কোথায় দাঁড়িয়ে তদন্ত?

Parliament Breach: এত সব বিতর্কের মধ্যেই আবার ওই হামলার ঘটনায় কর্ণাটকের এক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

ঠিক যেন ২০০১ সালের পার্লামেন্ট হামলার আদলেই গোটা ছকটি কষা হয়েছিল। না, ক্ষতির চেষ্টা না থাকলেও আসল উদ্দেশ্য ছিল খানিকটা আতঙ্ক তৈরি করা। সে কারণেই হাতে রঙিন গ্যাসের ক্যানেস্টার নিয়ে সংসদ ভবনে লাফিয়ে ঢুকেছিল দুই দুষ্কৃতি। লোকসভার মতো জায়গার নিরাপত্তা লঙ্ঘন নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল স্বাভাবিক ভাবেই। এদিকে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন এ নিয়ে প্রশ্ন করলেই একের পর এক সাংসদকে বরখাস্ত করছিলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। এই ভাবে প্রায় গোটা লোকসভাই বিরোধীশূন্য হয়ে যায়। লোকসভার নিরাপত্তা ভাঙার বিষয়ে আবার নাম জড়ায় মাইসুরুর বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহার। এই সব বিতর্কের মধ্যেই আবার ওই হামলার ঘটনায় কর্ণাটকের এক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেফতার করল পুলিশ। কেন এই হামলার ঘটনায় বারবার জড়াচ্ছে কর্ণাটকের নাম? এই হামলায় কী ভূমিকাই বা ছিল ওই তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীর? উঠেছে প্রশ্ন।

বৃহস্পতিবার কর্ণাটকের বগলকোট শহরের বিদ্যাগিরি এলাকা থেকে সাই কৃষ্ণা নামে ওই তথ্য়প্রযুক্তিকর্মীকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। এছাড়াও উত্তরপ্রদেশের জলায়ুন জেলার ওরাই থেকে অতুল কুলশ্রেষ্ঠ নামে বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে তিনি কোনও কাজকর্ম করেন বলে জানতে পারেনি পুলিশ। ১৩ ডিসেম্বর পার্লামেন্টের নিরাপত্তা ভাঙার ঘটনায় তিনিও জড়িত বলে সন্দেহ পুলিশের। ধৃত সাই কৃষ্ণের বাবা কর্ণাটকের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী। সাই নিজে কাজ করতেন একটি বহুজাতিক সংস্থায়। সেখান থেকে কীভাবে এই ধরনের জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি মামলায় জড়িয়ে পড়ল সে, অবাক করেছে পুলিশকে।

আরও পড়ুন: মোদীর ‘সুরক্ষিত’ লোকসভায় ঢুকে পড়ল হানাদার! কী তাদের পরিচয়?

ইতিমধ্যেই লোকসভায় সাম্প্রতিক এই হামলার ঘটনায় বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার মধ্যে মনোরঞ্জন ডি বলে এক অভিযুক্তের ডায়রি ঘেঁটে পুলিশের হাতে বেশ কিছু তথ্য এসেছে। সেখানেই দেখা দিয়েছে, বেঙ্গালুরুর কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় মনোরঞ্জন ও সাই কৃষ্ণ সহপাঠী ছিলেন। এমনকী হোস্টেলের একই ঘরে থাকতেন তাঁরা। পুলিশের অনুমান, মনোরঞ্জনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থেকে থাকতে পারে সাই কৃষ্ণর। ইতিমধ্যেই মনোরঞ্জনের বাবা-মাকেও মাইসুরুতে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। একদিন নয়, লাগাতার তিন দিন ধরে চলেছে জিজ্ঞাসাবাদ।

সংসদভবনের নিরাপত্তা ভঙ্গের বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট প্রশ্নের মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। স্বাভাবিক ভাবেই চাপে রয়েছে দিল্লি পুলিশও। ফলে এই মামলাটির যে অতিরিক্ত তৎপরতার সঙ্গে তদন্ত হবে, সে কথা আশ্চর্য নয়। ফলে সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে দিল্লি পুলিশের তরফে। মনোরঞ্জনের ব্যাপারে খুঁটিয়ে সমস্ত কিছু জানা হয়েছে তাঁর বাবা-মায়ের কাছ থেকে। আদৌ কোনও বড়সড় চক্রের যোগ রয়েছে কিনা এই ঘটনার সঙ্গে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে তা-ও।

Karnataka Techie, An Ex Top Cop's Son, Detained In Parliament Breach Case

এদিকে, উত্তরপ্রদেশের জলায়ু প্রশাসনের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে অতুলের গ্রেফতারির বিষয়টিও। ওরাইয়ের রামনগর এলাকার বাসিন্দা অতুলের হাতে তেমন কোনও কাজকর্ম ছিল না বলে জানা গিয়েছে। বেশিদূর পড়াশোনাও করেননি বছর পঞ্চাশের অতুল। হাইস্কুলের পর আর পড়াশোনার চৌকাঠ এড়াননি তিনি। আর্থিক অবস্থাও বিশেষ ভালো নয় তার। মূলত চাষবাস থেকেই সংসার চলে অতুলের। স্থানীয় মহলে বাচ্চা বলেই পরিচিত অতুল। তবে তাঁর অতীতের কোনও অপরাধের রেকর্ড নেই। রাজনীতির সঙ্গেও কোনও যোগাযোগের প্রমাণ মেলেনি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ছাত্রাবস্থা থেকেই ভগৎ সিংয়ের মতাদর্শ তাঁকে খুব প্রভাবিত করত। ভগৎ সিং ফ্যান ক্লাবের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তাঁর।

Karnataka Techie, An Ex Top Cop's Son, Detained In Parliament Breach Case

মনোরঞ্জন-সহ চার ধৃতের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সন্ত্রাস দমন আইন, বেআইনি কার্যকলাপ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। দিল্লি পুলিশের হাতে ধৃত সাই কৃষ্ণকে ইতিমধ্যেই দিল্লি নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানেই তাকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সব মিলিয়ে সাম্প্রতিক এই লোকসভা হামলার ঘটনায় মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করা হল এখনও পর্যন্ত। মনোরঞ্জন ছাড়াও লোকসভায় অনুপ্রবেশের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন সাগর শর্মা নামে এক ব্যক্তি। রয়েছেন অমোল শিন্ডে ও নীলম আজাদ নামে আরও দু'জন, যাঁরা লোকসভার বাইরে ধোঁয়ার ক্যানেস্টার হাতে ধরা পড়ে। এই গোটা হামলার মূল ষড়যন্ত্রী ছিল মহেশ কুমাবত বলে এক ব্যক্তি, এমনটাই মনে করছে পুলিশ।

আরও পড়ুন:লোকসভায় গেরুয়া-রাজ! কেন গত তিনদিনে বরখাস্ত ১৪১ বিরোধী সাংসদ?

যদিও পুলিশের কাছে ধৃতরা জানিয়েছেন, হামলা বা শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করার কোনও অভিসন্ধি তাঁদের ছিল না। মূলত মণিপুরের পরিস্থিতি, বেকারত্বের সমস্যা ও কৃষকদের সমস্যাগুলোর দিকে সংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এই কাজটি করেন তাঁরা। তবে তাঁদের বক্তব্য যাই হোক না কেন, গোটা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তদন্তের পথেই হাঁটছে দিল্লি পুলিশ। কাকতালীয় ভাবে, ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বেরই কুখ্যাত সেই লোকসভা হামলার ঘটনাটি ঘটেছিল। সেই স্মৃতি উস্কে দিয়েই গত বুধবার, মোদির স্বপ্নের লোকসভা ভবনের ভিতরে হঠাৎই ঢুকে পড়ে দুই দুষ্কৃতী। সেই সময় শীতকালীন অধিবেশন চলছিল লোকসভায়। হাতে হলুদ ধোঁয়া বেরোনো ক্যানেস্টার নিয়ে লোকসভায় ঢুকে পড়েছিল তারা। যদিও সাংসদেরাই তাদের ধরে ফেলেন, এরপর তাঁদের তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। গোটা ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। আর সেই চাঞ্চল্য আজও অব্যাহত রয়েছে লোকসভা অধিবেশন জুড়ে। জানা যায়, মাইসুরুর বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহার ভিজিটর কার্ডেই সংসদে ঢুকেছিল দুষ্কৃতীরা। স্বাভাবিক ভাবেই এই ব্যাপারটা জানাজানির পরেই নড়েচড়ে বসে বিরোধীরা। লোকসভা ভবনের নিরাপত্তা ভঙ্গের ব্যাপারে শেষপর্যন্ত কি কিনারায় পৌঁছতে পারবে পুলিশ, সেটাই এখন দেখার।

More Articles