মরক্কোর ভূমিকম্প মনে করাচ্ছে যেসব দেশের কথা

Morocco Earthquake: মৃত্যু মিছিল চোখের পাতায় ভিড় করে আসে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে ধসে যাওয়া বাড়ির নীচে চাপা পড়ে থাকা দেহের ভগ্নাংশ। কত দ্রুত সুশ্রুষা হবে মরক্কোর এই ক্ষয়ের?

মরক্কোয় আজ শ্মশানের হাহাকার:

শুক্রবার রাতে ভয়াবহ কম্পনে ধ্বসে গেল আফ্রিকার ছোট্ট দেশ মরক্কো। মরক্কোর জিওফিজিক্যাল সার্ভের রিপোর্ট অনুযায়ী রিখটার স্কেলে কম্পন অনুভূত হয়েছে ৭.২ মাত্রায়। এখনও পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।প্রাথমিকভাবে মারাকেশ অঞ্চলে কাঁপন ধরা পড়েছিল। মারাকেশ থেকে ৭১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে উচ্চ অ্যাটলাস পর্বতমালায় ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থিল ছিল বলে জানা গিয়েছে। ২০ সেকেন্ডের মধ্যেই ভেঙে পড়ে মরক্কোর একাধিক অঞ্চলের বহুতল বিল্ডিং। প্রথম ভূমিকম্পের পরই আবার ১৯ মিনিট বাদে আরেকবার কম্পন অনুভূত হয়, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৪.৯। মারাকেশ ছাড়াও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আল -হাউজ,আজিলাল,চিচাউয়া,ওয়ারজাজেট প্রভৃতি অঞ্চল।


মৃত্যুমিছিলে স্তব্ধ হয়েছিল যেসব দেশ:

মরক্কোর এই ভয়াবহ ভূমিকম্প ফিরিয়ে দিচ্ছে বিশ্বের নানা প্রান্তের মৃত্যু মিছিলের ছবি। বিশ্বের ভয়ংকরতম ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ১৫৫৬ সালের চিনের সাংচি এলাকার ভূমিকম্পকে। চিনের ৯৭টিরও বেশি এলাকা সেখানে ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে। মৃত্যুর নিরিখে বিশ্বের যেকোনও ভূমিকম্পকে ছাড়িয়ে গেছিল এই ঘটনা। মৃত্যুর সংখ্যা ছিল আনুমানিক ৮৩০,০০০। বহু এলাকায় মোট জনসংখ্যার ৬০% মৃত্যু হয়েছিল বলে আশঙ্কা করা হয়।

এছাড়াও উল্লেখ করতে হয়, ২০০৪ সালে ঘটে যাওয়া সুনামির কথা। ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা এলাকায় যে সুনামির কেন্দ্রস্থল ছিল, তার প্রাবল্য এতটাই বেশি ছিল যে প্রভাব পড়েছিল খাস কলকাতার বুকেও। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ভারত মহাসাগর সংলগ্ন শ্রীলঙ্কা,সুমাত্রা,তামিলনাড়ু প্রভৃতি।আনুমানিক ২২৮,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এই সুনামিতে। ঘরবাড়ি ভেঙে গেছিল আরও বহু লক্ষের। আহত হয়েছিলেন অগুনতি মানুষ।

এরপরে উল্লেখ্য ২০১০ সালে হাইতির পোর্ট-আউ-প্রিন্স অঞ্চলে ঘটে যাওয়া বিভৎস ভূমিকম্প। প্রায় ৩১৬,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এই ঘটনায়। এরপর তুর্কির আন্তাকিয়ার ভূমিকম্পের কথা বলতে হয়।১১৫ খ্রিস্টাব্দে হওয়া এই ভূমিকম্পে প্রাণ হারান ২৬০,০০০ মানুষ। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৫।

রিখটার স্কেলের পারদ ঊর্ধ্বগামী:

রিখটার স্কেলের মাত্রার নিরিখে সর্বোচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল ১৯৬০ সালের ২২ মে যা চিলির ভূমিকম্প নামে পরিচিত। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৯.৫। ২৮ মার্চ ১৯৬৪ সালে পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম মাত্রার ভূমিকম্পটি ঘটে গেছিল আলাস্কায়। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৯.২।

এরপরেই অবস্থান ২০০৪ সালের সুনামির। এরপর রয়েছে ২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের সেন্দাইতে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প যার মাত্রা ছিল ৯। সমমাত্রায় রয়েছে ৪ নভেম্বর ১৯৫২ সালে রাশিয়ার কামচাটকা শহরে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প। এরও মাত্রা ছিল ৯।

মরক্কোর পাশে গোটা বিশ্ব:

মৃত্যু মিছিল চোখের পাতায় ভিড় করে আসে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে ধসে যাওয়া বাড়ির নীচে চাপা পড়ে থাকা দেহের ভগ্নাংশ। কত দ্রুত সুশ্রুষা হবে মরক্কোর এই ক্ষয়ের? সেই দিকে তাকিয়ে আছে সারা বিশ্ব। জি২০ এর মধ্যেই মরক্কোর এই ভূমিকম্প নিয়ে টুইট করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে মরক্কোবাসীর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। রাশিয়া,তুর্কি,জার্মানি,ফ্রান্স,স্পেইন থেকেও মরক্কোর প্রতি সহমর্মিতা জানানো হয়েছে। ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর গভীর সমবেদনা জানিয়ে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন জানিয়েছেন ফ্রান্স যাবতীয় প্রাথমিক চিকিৎসা সংক্রান্ত সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছে

More Articles