একমাত্র ভোটার! অরুণাচলের এই মহিলার ভোট নিতে যে কাণ্ড করল কমিশন

Lok Sabha Election 2024: ৪৪ বছরের সোখেলা। অরুণাচল প্রদেশের মালোগ্রামের একমাত্র ভোটার। মালোগ্রামে এমনিতেই খুব কম সংখ্যক মানুষের বসবাস।

দেশ জুড়ে শুরু হয়ে গেল লোকসভা ভোট। গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসব। শুক্রবার ছিল প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। দেশের একাধিক রাজ্যের একাধিক অংশে ভোটগ্রহণ হল আজ। যার মধ্যে ছিল অরুণাচল প্রদেশও। অরুণাচল প্রদেশের মালোগ্রাম গ্রামেরও ভোট ছিল আজ। যে গ্রামের একা কুম্ভ থোড়ি একা প্রমিলা সোখেলা তায়ং। হ্যাঁ, অন্তত ভোটার তালিকায় তো বটেই। তিনিই এই গ্রামের একমাত্র মহিলা ভোটার। আর গ্রামের এই 'একা কুম্ভে'র গণতান্ত্রিক অধিকার অটুট রাখতে প্রায় ৪০ কিলোমিটার চড়াই-উৎরাই শ্রমসাধ্য পথ পাড়ি দিলেন নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকেরা।

৪৪ বছরের সোখেলা। অরুণাচল প্রদেশের মালোগ্রামের একমাত্র ভোটার। মালোগ্রামে এমনিতেই খুব কম সংখ্যক মানুষের বসবাস। কিন্তু সকলেই অন্য ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়ে থাকেন, অর্থাৎ অন্য কেন্দ্রের ভোটার। ব্যতিক্রমী সোখেলা। তিনি কিছুতেই অন্য কোনও ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে রাজি নন। তাই বলে কি গণতন্ত্রের এই মহোৎসবে শরিক হবেন না সোখেলা। না, তেমনটা হতে দেয়নি নির্বাচন কমিশন। সোখেলা ভোট দিতে যেতে পারেননি তো কি, ভোটকেন্দ্র উঠে এসেছে সোখেলায়ের কাছে। প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাহাড়ি পাকদণ্ডী বেয়ে চিনসীমান্ত লাগোয়া মালোগ্রামে পৌঁছেছেন নির্বাচনী আধিকারিকদের দল। সেখানে তৈরি অস্থায়ী বুথে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন সোখেলা।

আরও পড়ুন: লোকসভা নির্বাচন ২০২৪: প্রথম দফায় উত্তরের তিন জেলার সব তথ্য

অরুণাচলের এই প্রত্যন্ত গ্রামের জনসংখ্যা এমনিতেই কম। তার উপর গোটা অরুণাচল প্রদেশেই মহিলাদের ভোটপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের হার অত্যান্ত কম। নির্বাচনী রাজনীতিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে ১২৮তম সংশোধনী এনে আইন বদলেছিল কেন্দ্র। তার পরেও অবস্থা বদলায়নি। শুধু যে মহিলা ভোটারের হাহাকার তা নয়, হাহাকার মহিলা প্রার্থীদেরও। চলতি বছর ৫০টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন মাত্র আট জন মহিলা। এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যের মাত্র এক জন মহিলা রাজ্যসভায় প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বিশেষজ্ঞদের অনেকের দাবি, আর্থ-সামাজিক সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সচেতনতার অভাবেও নির্বাচনে মেয়েদের অংশগ্রহণ কম অরুণাচলে। অরুণাচল প্রদেশ স্টেট কমিশন ফর উইমেন (APSCW)-এর চেয়ারপারসন কেনজুম পাকামের মতে, মহিলাদের ভোট দেওয়া ও নির্বাচনী রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার আরও সুযোগ করে দেওয়া প্রয়োজন। অথচ তেমনটা কমই হয় অরুণাচল প্রদেশে।

Polling officials to trek 39km for lone voter in Arunachal village

 

এ বছর দেশের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক উৎসবে বেশি সংখ্যক ভোটারদের বুথমুখী করতে নানাবিধ উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আশি বছরের উর্ধ্বে বয়স যাদের, ভোট শুরুর আগেই তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের মূল্যবান ভোটটি সংগ্রহ করেছেন নির্বাচনী আধিকারিকেরা। যারা বিশেষ ভাবে সক্ষম, তাঁদের জন্যেও রয়েছে একই ব্যবস্থা। এ বছরই প্রথম এই পদক্ষেপ করেছে ইলেকশন কমিশন। এবার তার থেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে অরুণাচল প্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে একটি মাত্র ভোটারের জন্য গোটা বুথ হাজির করল কমিশন। ওই চল্লিশ কিলোমিটার চড়াই-উৎরাই পাহাড়ি রাস্তায় সমস্ত ভোটযন্ত্র বয়ে নিয়ে গিয়েছেন নির্বাচনী আধিকারিকেরা। পাহাড়ি অঞ্চলের বেশ কিছুটা পথ গাড়ি করে গেলেও তার পরে ভরসা ছিল হাঁটা। ৪৫ হায়ুলিয়াং বিধানসভা কেন্দ্র হয়ে মালোগ্রাম পোলিং স্টেশনে পৌঁছতে হয় আধিকারিকদের। সোখেলা নিজের ভোটটি না দেওয়া পর্যন্ত ওই বুথেই ছিলেন ভোটগ্রহণকারীরা।

আরও পড়ুন:মা ১১৭! ছেলে প্রায় ১০০! ভোট দিলেন ওঁরা

চিন-সীমান্ত লাগোয়া অরুণাচলের ওই প্রত্যন্ত গ্রামে একাই থাকেন সোখেলা। বিয়ে-থা করেননি। বছর কয়েক আগে গত হন মা-বাবা। পাহাড় ঘেরা এই গ্রামে একা কুম্ভের মতই সমস্ত নারী ভোটের প্রতিনিধিত্ব করছেন সোখেলা। ফলে একা মেয়ে বলে তার ভোটটি কিন্তু ফেলনা নয় মোটেই। বরং সেই এলাকার সাংসদের ভাগ্য উল্টেপাল্টে দিতে পারে ওই একটি মাত্র ভোটই।

More Articles