বাংলায় ঢুকেই থমকে গেল কংগ্রেসের 'ন্যায় যাত্রা'! কেন তড়িঘড়ি দিল্লি ফিরলেন রাহুল?

Bharat Jodo Nyay Yatra: কোচবিহার থেকে হঠাৎ করেই গুরুত্বপূর্ণ কারণে দিল্লি ফিরে যেতে হল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধিকে।

দেশ জুড়ে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা শুরু করেছেন রাহুল গান্ধি। লোকসভা ভোট শিয়রেই। তার আগে ভোটপ্রচারের পাশাপাশি জনসংযোগের কাজখানি সেরে ফেলতেই রাহুলের এই ভারত জোড়ো যাত্রা। মণিপুর থেকে অসম হয়ে বৃহস্পতিবার বাংলায় ঢুকেছে কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রা। তবে বাংলায় ঢুকতে না ঢুকতেই হোঁচট খেল রাহুলের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা।

বৃহস্পতিবার সকাল দশটা নাগাদ অসমের সীমানা থেকে বাংলায় প্রবেশ করে রাহুল গান্ধির কনভয়। কংগ্রেসের তরফে আগেই ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল বাংলায় 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'-র সারাদিনের কর্মসূচী। কোচবিহারে ন্যায় যাত্রাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। ছিলেন বাংলায় যাত্রার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলা কংগ্রেসের টিমের প্রধান পূজা রায়চৌধুরী, এআইসিসি সদস্য বিশ্বজিৎ সরকার-সহ নেতানেত্রীরা। অধীরের হাতে আনুষ্ঠানিক পতাকা হস্তান্তরপর্বও হয়। বক্সীরহাটে সংক্ষিপ্ত সভার পরে তুফানগঞ্জে প্রাতরাশ করতে যাওয়ার কথা ছিল রাহুল এবং তাঁর যাত্রাসঙ্গীদের। কর্মসূচী অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার কোচবিহার সদর মহকুমার খাগড়াবাড়ি, মা ভবানী এলাকায় পদযাত্রা করার কথা ছিল প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির। কিন্তু সময় সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে কোচবিহার শহর এবং সন্নিহিত এলাকার রেলগুমটি, মা ভবানী, সদর বাজার, রাজবাড়ি গেট, খাগড়াবাড়ি হয়ে রাজারহাট পর্যন্ত রোড শো করেন রাহুল। রাতে থাকার কথা ছিল ফালাকাটায়। ফালাকাটা টাউন ক্লাবের মাঠেই তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা সরাসরি কোচবিহার শহরের উদ্দেশে রওনা হন। জানা যায়, হঠাৎ করেই গুরুত্বপূর্ণ কারণে দিল্লি ফিরে যেতে হল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধিকে। যদিও তাঁর এই আচমকা দিল্লি যাত্রার কারণ সম্পর্কে কংগ্রেসের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছুই জানানো হয়নি। দুপুর ২টোর কিছুক্ষণ আগেই দিল্লি যাওয়ার জন্য হাসিমারায় ভারতীয় বায়ুসেনার ঘাঁটির উদ্দেশে রওনা হন রাহুল।

আরও পড়ুন: অলক্ষ্যেই ম্যাজিক করছেন রাহুল! হিংসার বিরুদ্ধে মানুষকে জুড়বে ভারত জোড়ো যাত্রাই?

স্বাভাবিক ভাবেই শুরু হয়ে যায় জল্পনা। ঠিক কী কারণে বাংলাতে এসেই থামল রাহুলের বহু কাঙ্ক্ষিত ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা? এমনিতেই দিন কয়েক ধরে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের আসনবণ্টন নিয়ে বেশ চাপানউতোর চলছে। 'ইন্ডিয়া' জোটের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন দেখা গিয়েছে। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ইন্ডিয়া জোটের বেশ কয়েকটি দলই যে রাহুল গান্ধির উপরে ভরসা রাখতে পারছেন না, তা-ও এতদিনে স্পষ্ট। এর মধ্যে বাংলায় এসেও 'ভারত জোড়ো যাত্রা' বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই ঘনিয়েছে জল্পনা। কংগ্রেসের একাংশের দাবি, সনিয়া গান্ধী আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ায় রাহুলকে তড়িঘড়ি দিল্লি ফিরে যেতে হয়েছে। তবে ওই কারণের কোনও সমর্থন মেলেনি। সনিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, এমন কোনও খবর নেই। দ্বিতীয়, তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন রাজ্য প্রশাসনের তরফএ বিভিন্ন ধরনের ‘অসহযোগিতা’। মঞ্চ বাঁধা বা জনসভার অনুমতি নিয়েও রাজ্য কংগ্রেসের ‘অভিযোগ’ রয়েছে। তবে সে কারণও খুব জোরালো নয়। কারণ, তা হলে রাহুল আবার বাংলায় ফিরে এসে যাত্রা শুরু করতেন না।

তবে বিভিন্ন সূত্রে শোনা যাচ্ছে, রাহুলের ফালাকাটায় যেখানে রাত্রিবাস করার কথা ছিল, সেখানকার পরিকাঠামো ‘উপযুক্ত’ নয় বলেই মনে করেছেন কংগ্রেস নেতার দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্তেরা। তা নিয়ে রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে তাঁদের একপ্রস্ত ‘আলোচনা’ও হয়েছে বলে খবর। ওই এলাকা যে রাহুলের রাত্রিবাসের পক্ষে এখনও উপযুক্ত নয়, তা তাঁরা তখনই জানিয়ে দিয়েছিলেন রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বকে। সেই কারণেই রাহুল দিল্লি ফিরে গিয়েছেন। রবিবার রাহুল বাংলায় ফিরে ফালাকাটা থেকেই যাত্রা শুরু করবেন। সে ক্ষেত্রে তাঁকে আর সেখানে রাত্রিবাস করতে হবে না।

Rahul Gandhi leaves West Bengal for New Delhi from as Bharat Jodo Nyay Yatra takes two-day break

এমনিতেই অসমে বেশ বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে রাহুলের 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'। গত ২২ জানুয়ারি, রামমন্দির উদ্বোধনের দিনে যাত্রা করতে গিয়ে অসম প্রশাসনের বাধার মুখে পড়েন রাহুল। এমনকী সরকারি গাইডলাইন অমান্য করার অভিযোগে সে রাজ্যে ভারত জোড়ো যাত্রার আয়োজকদের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে এফআইআর। অসমে কংগ্রেসের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার আয়োজক কে বি বাইজুর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাহুলের পদযাত্রার আয়োজকরা সরকারের নির্দেশ মাফিক নির্দিষ্ট রুট না মেনে ভিন্ন পথে হেঁটেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জোরহাট শহরের উপর দিয়ে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় হাঁটেন রাহুল গান্ধী। তবে পুলিশের মতে, এই রুটে যাত্রার অনুমতি দেয়নি অসম সরকার।আচমকা রুট পরিবর্তন হওয়ায় রাস্তাঘাটে যানজটের সৃষ্টি হয়। সাধারণ মানুষ, পথচারিরা ভোগান্তির শিকার হন। ট্রাফিক ব্যারিকেড ভেঙে জনসাধারণের সঙ্গে হাত মেলানো এবং কথাবার্তা বলারও অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেসের যাত্রার অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে। এমনকী, কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকদের শারীরিকভাবে হেনস্থা করারও অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

সেই রেশ কাটিয়ে নয়া রাজ্যে ঢুকতে না ঢুকতেই ফের বাধা। হঠাৎ করেই রাহুলকে উড়ে যেতে হল দিল্লিতে। এদিকে রাহুল গান্ধী ও তাঁর সঙ্গে আড়াইশো কংগ্রেস কর্মীর জন্য মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা করা হয়েছিল উত্তরবঙ্গেই। মেনুতে রাখা ছিল বোরোলি মাছ। সেসব মুখে তোলা তো দূর, তার আগেই জরুরি ডাকে বাংলা ছাড়লেন রাহুল। কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে, আবার ২৮ তারিখ অর্থাৎ আগামী রবিবার বাংলায় ফিরতে পারেন রাহুল। সে ক্ষেত্রে রাহুলের যাত্রা থেকে বাদ পড়তে পারে উত্তরবঙ্গের দুই জেলা, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের একটি অংশ। এআইসিসির সম্পাদক রণজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, "আগামী রবিবার সকাল ৮টায় আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটায় পূর্বনির্ধারিত ক্যাম্প সাইটে আসবেন রাহুল। সেখান থেকে আবার যাত্রা শুরু করবেন তিনি।"

এদিকে আবার শিলিগুড়িতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ‘ন্যায় যাত্রা’য় সভা করার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। আগামী ২৮ জানুয়ারি শিলিগুড়িতে প্রবেশ করে সেখানে সভা ও পদযাত্রার ভাবনা ছিল কংগ্রেসের। সেই মতো পুলিশের কাছে অনুমতিও চাওয়া হয়। কিন্তু শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট সভার অনুমতি দেয়নি। তেমনটাই জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। ২৮ জানুয়ারি ফালাকাটা থেকে গাড়িতে ন্যায় যাত্রা বেরোবে। ময়নাগুড়ি হয়ে তা পৌঁছবে জলপাইগুড়ি শহরে। সেখানকার পিডব্লিউডি মোড় থেকে পদযাত্রা করে রাহুল পৌঁছবেন কদমতলা চকে। দুপুরে গাড়িতে করে ৩ কিলোমিটার দূরে এবিপিসি গ্রাউন্ডে ঘুরে দেখবেন। তার পর আবার জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের ফাটাপুকুর থেকে যাত্রা শুরু হবে। জলপাইগুড়ি শহর থেকে সেই জায়গা ১৭ কিলোমিটার দূরে। ফাটাপুকুর থেকে সোজা শিলিগুড়ি থারান মোড়। সেখান থেকে গাড়িতে এয়ারভিউ মোড়। সেখানে রাহুলের সভা হওয়ার কথা ছিল। এর পর সেখান থেকে নকশালবাড়ি হয়ে উত্তর দিনাজপুরের সোনাপুরে রাত্রিবাসের কথা ছিল রাহুলের। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই রুটে সভা ও পদযাত্রার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। পুলিশ পদযাত্রা নিয়ে কিছু না বললেও সভার অনুমতি দেয়নি। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের একটি পরীক্ষা রয়েছে ওই সময়। সেই বিষয়টি নজরে রেখেই অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্রসঙ্গত, কোচবিহারের অসম সীমানায় রাহুলকে স্বাগত জানাতে কংগ্রেস যে মঞ্চ তৈরি করেছিল, তা-ও পুলিশের আপত্তিতে খুলে অন্যত্র সরাতে বাধ্য হয়েছিল কংগ্রেস। জলপাইগুড়ি পুলিশের সৌজন্যে অদলবদল হয়েছে রাহুলের সূচিতেও।

আরও পড়ুন:দলিতদের ক্ষোভ থেকে রাহুলকে মন্দিরে ঢুকতে বাধা, মন্দির উদ্বোধনে যা হচ্ছে দেশ জুড়ে

এদিকে এদিন খাগড়াবাড়িতে রাহুলের যাত্রাপথের কাছে একটি তথাকথিত অরাজনৈতিক সংগঠনের লোকজন হাতে পোস্টার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে জমায়েত করেছিলেন। পোস্টারে লেখা ছিল, ‘বাংলার জন্য দিদি একাই একশো’। অনেকেই মনে করছেন, ওই জমায়েতকারীরা আসলে তৃণমূলের সদস্য। কারণ, এই কথাটাই দিদি তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার ঘোষণা করে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে বাংলায় রাহুলের 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' নিয়ে অসমের পর শোরগোল পড়ে গিয়েছে বাংলাতেও। এবার ২৮ তারিখেও রাহুল বাংলায় আসতে পারেন কিনা সেদিকেই তাকিয়ে গোটা বাংলা।

 

 

More Articles