ভারতীয়দের বর্ণবৈচিত্র্য নিয়ে বেফাঁস কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ স্যাম পিত্রোদা! পদত্যাগে সম্ভব ড্যামেজ কন্ট্রোল?

Sam Pitroda: ভোটের বাজারে পিত্রোদার কথাবার্তার মাশুল ভালোই দিতে হতে পারে কংগ্রেসকে। তা বোঝার পর আমেরিকা-নিবাসী স্যামের মন্তব্যের দায় ঝেড়ে ফেলেছে কংগ্রেসও।

বৈচিত্র্যই ভারতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আর তা বোঝাতে গিয়েই ফের বিপাকে পড়লেন ইন্ডিয়ান ওভারসিজ কংগ্রেসের সভাপতি স্যাম পিত্রোদা। লোকসভা ভোটের মরসুম। এমনিতেই গেরুয়া শিবিরের নিশানায় সবসময় বিঁধেই রয়েছে যেন কংগ্রেস। তার মধ্যে তিনি কংগ্রেসের শাহজাদা তথা রাহুল গান্ধির পরামর্শদাতা বলে কথা। ফলে একটু বেফাঁস হয়েছেন কি হয়নি, আর রক্ষা নেই। দিন কয়েক আগেই উত্তারাধিকার কর বসানোর দাবি তুলে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন শ্য়াম। তার রেশ কাটতে না কাটতেই বর্ণবিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে পদ গেল স্যাম পিত্রোদার।

সম্প্রতি একটি ইংরেজি সংবাদপত্রকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন স্যাম। সেখানে ভারতের বৈচিত্র্য বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, পূর্ব ভারতের মানুষদের নাকি চিনাদের মতো দেখতে। দক্ষিণ ভারতীয়দের সঙ্গে আফ্রিকার মানুষেক মিল। পশ্চিমের বাসিন্দারা নাতি আরবের লোকেদের মতো দেখতে। আর এই বৈচিত্র্য বোঝানোর ফাঁকে গায়ের রং নিয়েও মন্তব্য করে বসেন স্যাম পিত্রোদা। স্বাভাবিক ভাবেই স্যামের কথা মাটিতে পড়তে দেয়নি গেরুয়া শিবির। শুরু হয়ে যায় নানা দিক থেকে নানা কথাবার্তা। সোশ্যাল মিডিয়া ভরে ওঠে নয়া বিতর্কে।

আরও পড়ুন: অম্বানি, আদানি-আঁতাতের অভিযোগে এবার বিদ্ধ কংগ্রেস! ভোটবাজারে বারবার কেন বেফাঁস মোদি?

বুধবার তেলঙ্গানার ওয়ারঙ্গলে ভোটপ্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের শাহজাদার পরামর্শদাতা গাত্রবর্ণ তুলে ভারতবাসীকে আক্রমণ করেছেন। আমি ক্রুদ্ধ। আমাকে আপনারা অনেক কটু কথা বলেছেন। আমি কিছু মনে করিনি। কিন্তু আমার দেশের মানুষকে আক্রমণ করলে সহ্য করব না।’’ এর পরেই প্রধানমন্ত্রীর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘গায়ের রং যা-ই হোক না কেন, আমরা সকলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুজো করি।’’ শুধু মোদিই নন, এক্স হ্যান্ডেলে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা টুইট করে লেখেন, ‘স্যাম ভাই, আমি উত্তরপূর্বের লোক এবং আমাকে একজন ভারতীয়র মতো দেখতে। আমরা বৈচিত্র্যময় একটি দেশের মানুষ। হয়তো আমাদের চেহারায় ভিন্নতা রয়েছে। কিন্তু আমরা আসলে এক।’ কংগ্রেস নেতাকে হিমন্তের খোঁচা, ‘আমাদের দেশটাকে একটু বোঝার চেষ্টা করুন!’ লোকসভা ভোটের প্রচরে ‘বিভাজনের রাজনীতি’র অভিযোগ উঠছে যে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে, তাঁরাই সুযোগ বুঝে কংগ্রেস নেতাকে ‘বিভাজনকারী’ বলে তোপ দাগছেন। বলি অভিনেত্রী তথা মাণ্ডি লোকসভার বিজেপি প্রার্থী কঙ্গনা রানাওয়াত বলেন, স্যাম ‘বর্ণবিদ্বেষী’ তথা ‘বিভাজনকারী। একের পর এক বিজেপি নেতা-মন্ত্রী আসরে নামেন পিত্রোদার বক্তব্যের বিরোধিতায়।

যদিও আসলে বিভাজনের নয়, ভারতের বৈচিত্র্যময় ঐক্যের কথাই বলতে চেয়েছিলেন স্যাম পিত্রোদা। সংবাদপত্রকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামীরা হিন্দুত্ব নয়, ধর্মনিরেপক্ষ দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ গড়ার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান…আজকে ওদের অবস্থা গোটা পৃথিবী দেখছে। অপরপক্ষে আমরা বিশ্বে গণতন্ত্রের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তৈরি করেছি। অকারণ মারামারি বাদ দিয়ে ৭০-৭৫ বছর আনন্দের সঙ্গে বেঁচে আছি।’ তাঁর মতে, ‘গণতন্ত্র, নাগরিক স্বাধীনতা এবং ভ্রাতৃত্বে নিহিত ভারতের শিকড়। অথচ ভাষা, ধর্ম এবং সংস্কৃতির ভিন্নতা রয়েছে।’ একই সঙ্গে মোদিকে তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সব সময় মন্দিরেই যাচ্ছেন, তাঁর কথাবার্তা একজন বিজেপি নেতার মতো, জাতীয় নেতার মতো নয়।" আর পিত্রোদার সেই বক্তব্যের উল্টো মানে বের করে তাঁকেই কোণঠাসা করেছে সব পক্ষ। আসলে বলার উদ্দেশ্য ভুল না হলেও, যেভাবে একেকটা অঞ্চলের মানুষকে চেনা ছকে বেঁধে ফেলতে চেয়েছেন তিনি, তাতেই বিতর্কের সূত্রপাত।

আরও পড়ুন:কংগ্রেস নয়, মোদি জমানাতেই বেশি সোনা খুইয়েছেন মানুষ! প্রকাশ্যে যে ভয়ানক তথ্য

ভোটের বাজারে পিত্রোদার কথাবার্তার মাশুল ভালোই দিতে হতে পারে কংগ্রেসকে। তা বোঝার পর আমেরিকা-নিবাসী স্যামের মন্তব্যের দায় ঝেড়ে ফেলেছে কংগ্রেসও। এআইসিসি মুখপাত্র তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘ভারতের জাতিগত বৈচিত্রের কথা বোঝাতে গিয়ে স্যাম পিত্রোদা যে মন্তব্য করেছেন, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কংগ্রেস তাঁর ওই মন্তব্য থেকে দূরত্ব রাখছে।’’ অতীতেও ভারতীয় সংবিধান রচনায় জওহরলাল নেহরুর ভূমিকা এবং ১৯৮৪-র শিখবিরোধী দাঙ্গা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছিল স্যামের বিরুদ্ধে। তাঁর মন্তব্য ঘিরে ঝড় উঠতেই নাকি নিজের পদ থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেন স্যাম। কংগ্রেসের তরফে জয়রাম রমেশ স্যাম পিত্রোদার এই পদ ছাড়ার কথা প্রকাশ্যে আনেন। জানা গিয়েছে, তাঁর পদত্যাগ ইতিমধ্যেই গ্রহণ করেছেন কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। তবে সত্যিই সেই পদত্যাগ স্বেচ্ছায়, না কংগ্রেসের চাপেই সরে দাঁড়ালেন পিত্রোদা, প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। ভোটের বাজারে বিজেপির হাতে এক কথায় ফুলটস বল তুলে দিয়েছেন পিত্রোদা। এখন তাঁর পদত্যাগ আদৌ কংগ্রেসের ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে পারে কিনা, সেটাই দেখার।

More Articles