এখনই বাতিল নয় ২৫,৭৫৩ চাকরি! হাইকোর্টের নির্দেশে আপাতত স্থগিতাদেশ সুপ্রিম কোর্টের

SSC Recruitment Case Hearing: ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ার ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশে আপাতত স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।

অবশেষে সুপ্রিম কোর্টে স্বস্তি মিলল চাকরিহারাদের। তবে সেই স্বস্তি তাৎক্ষণিক। তা-ও জানিয়ে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ার ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশে আপাতত স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি জানান, এখনই চাকরি বাতিল হচ্ছে না। যদি যোগ্য - অযোগ্য আলাদা করা সম্ভব হয়, তাহলে গোটা প্যানেল বাতিল করা ন্যায্য হবে না। তবে ১৬ জুলাই এই মামলার চূড়ান্ত শুনানি।

২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ার ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশে আপাতত স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। কিছুদিন আগেই SSC মামলায় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে রাজ্য। সেই মামলায় একটি পক্ষ যেমন রাজ্য, তেমনি স্কুল সার্ভিস কমিশন, পর্ষদ- এরাও একটি পক্ষ। এ দিন শুনানিতে সব পক্ষের কথা শোনে সুপ্রিম কোর্ট। তার পরেই সুপ্রিম কোর্ট তার সিদ্ধান্তে জানিয়ে দেয়, এখনই চাকরি বাতিল হচ্ছে না। যদি যোগ্য - অযোগ্য আলাদা করা সম্ভব হয়, তাহলে গোটা প্যানেল বাতিল করা ন্যায্য হবে না। আগামী ১৬ জুলাই এই মামলার চূড়ান্ত শুনানি বলে জানিয়ে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

আরও পড়ুন: এক শুনানিতে চাকরি বাতিল ২৬ হাজারের, নেপথ্যে কি সেই অভিজিৎ?

গত ২২ এপ্রিল এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ। ২০১৬ সালের প্যানেলে চাকরি পেয়েছিলেন তাঁরা। প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন তাঁদের বেতন দিতে হবে, এমনই নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। প্রত্যাশা ছিল, হাইকোর্টের চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দেবে শীর্ষ আদালত। তবে তেমনটা হয়নি। প্রথম শুনানি গড়ায় দ্বিতীয় শুনানিতে। সোমবারই সেই শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে শেষপর্যন্ত পিছিয়ে গিয়ে তা হয় মঙ্গলবার।

মঙ্গলবার শুনানিতে রাজ্য থেকে শুরু চাকরিহারা, এসএসসি থেকে শুরু করে পর্ষদ, সমস্ত পক্ষের কথাই শোনে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ। রাজ্যের তৈরি সুপার নিউমেরিক পোস্ট নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। যার উত্তরে রাজ্য জানিয়েছিল, এর নেপথ্যে কোনও বেআইনি নিয়োগ আড়ালের চেষ্টা ছিল না। মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ নিয়েও আদালতে প্রশ্ন তোলের রাজ্যের তরফে আইনজীবী রাকেশ দ্বীবেদি।

একই সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। নিয়োগ প্রক্রিয়া ও সেই সংক্রান্ত তথ্য় দেওয়ার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত জালিয়াতি করেছে এসএসসি, এমন মন্তব্যও করেছেন প্রধান বিচারপতি। ওএমআর শিট নষ্ট থেকে শুরু করে যথাযথ টেন্ডার না ডাকা, একাধিক বিষয় নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে এসএসসি। এসএসসি পক্ষের আইনজীবী জয়দীপ গুপ্ত প্রশ্ন তুলেছে আদৌ চাকরি বাতিলের এক্তিয়ার আদালতের আছে কিনা, তা নিয়ে।

অন্যদিকে পর্ষদের তরফে হাইকোর্টে জানানো হয়েছে, যেভাবে চাকরি বাতিল হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে পড়ুয়া পড়ানোর শিক্ষক পাওয়া মুশকিল হবে। এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পর্ষদ। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চকে পর্ষদ এ-ও জানায়,হাইকোর্টের ওই রায়ের ফলে ১৭-১৮ হাজার শিক্ষক ভুক্তভোগী। যোগ্য এবং অযোগ্য বাছাই করা সম্ভব হলে এদের চাকরি রাখা হোক, এই মর্মে সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদনও জানায় পর্ষদ।

চাকরিহারাদের পক্ষে আইনজীবী আবার আদালতে জানিয়েছেন, সিবিআইয়ের উদ্ধার করা ওএমআর শিটের কোনও আইনি বৈধতা নেই। ৬৫ বি এভিডেন্স আইন অনুযায়ী বৈদ্যুতিন তথ্যের কোনও সার্টিফিকেট নেই। এদিকে সেই তথ্যের ভিত্তিতেই এত হাজার হাজার চাকরি বাতিল করেছে হাইকোর্ট। এক কথায় গোটা প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেন চাকরিহারাদের আইনজীবী প্রতীক ধর।

দুর্নীতির মামলাকারীদের তরফে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য অভিযোগ তোলেন টাকার বিনিময়ে বাজারে চাকরি বিক্রি করা হয়েছে। এর নেপথ্যে বিরাট বড় দুর্নীতি রয়েছে। এমনকী পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াকেই অবৈধ বলে দাবি করেন তিনি।

আরও পড়ুন: শেষ এসএসসি-তদন্ত, যে যে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল সিবিআইয়ের হাতে

যদিও এদিন সমস্ত পক্ষের কথা শোনার পর সুপ্রিম কোর্ট জানায়, পৃথকীকরণ যেখানে সম্ভব সেখানে শুধু যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এদিনের শুনানিতে সবার কথা শোনার পর পর শর্তসাপেক্ষ স্থগিতাদেশের কথাই বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। শেষপর্যন্ত চাকরিহারাদের পক্ষেই গেল শীর্ষ আদালতের রায়। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জানান, এখনই চাকরি বাতিল করা হচ্ছে না। কেন স্থগিতাদেশ তার ব্যাখ্যা দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বললেন, যদি যোগ্য এবং অযোগ্য আলাদা করা সম্ভব হয়, তাহলে গোটা প্যানেল বাতিল করা ন্যায্য হবে না। তবে এই নির্দেশ চূড়ান্ত নয় বলেও জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানান, এই স্থগিতাদেশ অন্তর্বর্তীকালীন। ১৬ জুলাই এই মামলার চূড়ান্ত নির্দেশ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

 

More Articles