রুশ 'বেদানা' পোর্তুগালে এসে হল 'বোমা'! ফলের শরবত খেতে চেয়ে বিচিত্র বিভ্রাট যুবকের

Tourist Sparks Bomb Alert: পোমেগ্রেনেট জুসের বদলে দোকানদারের কাছে গ্রেনেড চেয়ে বসলেন ভিনদেশি পর্যটক, তারপর...?

ছিল বেদানা, হয়ে গেল আস্ত বোমা। ভাবছেন তো কীভাবে? না, বেদানাকে বোমা বানানোর মধ্যে বিশেষ কোনও প্রযুক্তি বা বিজ্ঞান নেই। তবে উচ্চারণের একটা ছোট্ট ভুল আছে বৈকি। আর তার দৌলতেই ঘুম ছুটল দোকানদারের। এমনকী থানা-পুলিশ, ছোটাছুটি, কোনওটাই বাকি রাখলেন না তিনি।

পরদেশে গিয়ে সেখানকার ভাষা একটা সমস্যা বটে। আর সেই ভাষাটা যদি হয় আপনার মাতৃভাষার থেকে বহু দূরের, তাহলে তো কথাই নেই। তবু ভাঙা ভাঙা ইংরেজি কিংবা হিন্দিতেই আমরা কাজ চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। এখন অবশ্য হাতের মুঠোতেই রয়েছে বেশ কিছু বাইলিঙ্গুয়াল অ্যাপ। যাদের কাছে শব্দ ফেলার অপেক্ষা কেবল। সঙ্গে সঙ্গে হাতের কাছে হাজির হয়ে যাবে অজানা ভাষায় তার অনুবাদ। তবে তা যে সবসময় একেবারে ঠিকঠাক হয়, তা নয়। প্রায়শই উচ্চারণ বহু সময়েই এমন ভুলভাল হয়ে দাঁড়ায়, যে তার অর্থ যায় পুরোপুরি পাল্টে। গুগল ট্রান্সলেটের ভয়ঙ্কর সব অনুবাদের নমুনা তো প্রায়শই দেখি আমরা। তাই বলে শুধুমাত্র উচ্চারণের ভুলে থানা-পুলিশ-হুড়োহুড়ি, এমন ঘটনা বোধহয় সচরাচর দেখা যায় না।

আরও পড়ুন: মদবোঝাই গাড়ি দুর্ঘটনায় ভিজল শুখা বিহার, বোতল দেখেই ঝাঁপ স্থানীয়দের

পোর্তুগালের লিসবনে গিয়েছিলেন ৩৬ বছরের এক রুশভাষী ব্যক্তি। লিসবনের সেই রেস্তোরাঁয় গিয়ে তিনি খেতে চেয়েছেন বেদানার শরবৎ। কিন্তু রুশ ভাষায় বেদানার শরবত চাইলে তো আর পোর্তুগালের দোকানদার বুঝবেন না। তাই তিনি একটি অনুবাদ অ্যাপ ব্যবহার করছিলেন ভিনদেশে গিয়ে কথাবার্তা চালানোক জন্য। মানুষ মাত্রেই ভুল হয়। কিন্তু যন্ত্র! সেই যন্ত্রও ভুল করে বসে মাঝেমধ্যেই। এক্ষেত্রেও গন্ডোগোল পাকিয়েছিল অ্যাপটিই। ইংরেজিতে বেদানাকে বলা হয় পোমেগ্রেনেট। কিন্তু অ্যাপের ছোট্ট ভুলে পোমেগ্রেনেট হয়ে যায় গ্রেনেড। পোমেগ্রেনেট জুসের বদলে দোকানদারের কাছে চেয়ে বসেন গ্রেনেড। আর তা শুনেই ভিরমি খান দোকানদার।

গ্রেনেড চেয়ে দোকানদারকে বোমা হামলার ভয় দেখাচ্ছেন না তো ওই ভিনদেশি ব্যক্তি! যেমন ভাবা তেমন কাজ। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে নালিশ ঠুকে বসেন দোকানদার। মুহূর্তে বোমাতঙ্ক ছড়ায় ওই রেস্তোরাঁ জুড়ে। শুক্রবারের দুপুরে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে পুলিশ। পাঁচ জন সশস্ত্র পুলিশ কর্মী মোতায়েন হয়। আর বেদানার রস খেতে চাওয়া ওই পর্যটকের অবস্থাও হয় শোচনীয়। পুলিশ এসেই তাকে মাটির দিকে মুখ করে শুয়ে পড়ার নির্দেশ দেয়। এমনকী হাতে পড়ে হাতকড়াও।

স্থানীয় থানায় নিয়ে যাওয়া হয় আজারবাইজান থেকে আসা রুশভাষী ওই ব্যক্তিকে। চলে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ। পরে অবশ্য তাঁর কাছে অস্ত্রশস্ত্র বা সন্দেহজনক কিছু না মেলায় তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। পুলিশের তরফ থেকে এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ওই রেস্তোরাঁ থেকে ফোন করে তাদের ডাকা হয়। ওই ব্য়ক্তিকে গ্রেফতারের পাশাপাশি তল্লাশি চালানো হয় রেস্তোরাঁ ও তার সংলগ্ন এলাকায়। এমনকী লিসবন পুলিশের তরফে যোগাযোগ করা হয় পোর্তুগালের অ্যান্টি টেররিজম কোঅর্ডিনেশন ইউনিটের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। তবে ওই ব্যক্তির সঙ্গে কোনও জঙ্গি-যোগ পাওয়া যায়নি।

 

আর যাবেই বা কী করে। তিনি তো চেয়েছিলেন সামান্য বেদানার রস। সেই বেদানা যে বোমা হয়ে যাবে, তা কি ঘুণাক্ষরেও বুঝেছিলেন নাকি তিনি। আসলে সমস্যাটা অন্য জায়গায়, পোমেগ্রেনেট ও গ্রেনেড- এই দুটো শব্দই রুশ ভাষায় একই। আর পোর্তুগিজে তো দুটি শব্দের অর্থ আলাদা। ওই অ্যাপে অনুবাদের জন্য ঠিক শব্দই লিখেছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি যে বেদানা চেয়েছেন, বোমা নয়, তা আর কী করেই বা বুঝবে মূর্খ অ্যাপ! আর সেখানেই ঘটে গিয়েছে আসল গন্ডগোল।

আরও পড়ুন:চিনি থেকে সিগারেট! অবাক করবে চিনা বরদের এই আশ্চর্য বরপণ

এদিকে সেই ভুলে যা হওয়ার তাই ঘটেছে। থানা-পুলিশ, গ্রেফতার কত কিছুই না সহ্য করতে হয়েছে ওই পর্যটককে ভিনদেশে এসে। সেদিন দুপুরে যা যা ঘটেছিল রেস্তোরাঁ চত্বরে, তা দূরে গাড়ি থেকে মোবাইলে রেকর্ড করেছিলেন অনেক পথচারীরাই। ফলে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয়নি। যথারীতি তা ভাইরালও হয়ে যায়। যে কোনও দেশই চায়, তার দেশে আগত ভিনদেশি পর্যটকদের খাতির করতে। যাই হোক, অতিথি দেবতা বলে কথা। তবে তাই বলে সেই অতিথি যদি ভরদুপুরে দোকানে এসে বোমা চায়, তাহলে আতঙ্ক তো ছড়াবেই। ভবিষ্যতে বেদানার রস কোনও দোকানে চাইতে বা খেতে গেলেও বোধহয় একশো বার ভাববেন তিনি। ন্যাড়া কি আর বেলতলায় বারবার যায়!

More Articles