পাকিস্তান, বাংলাদেশের চেয়েও বেশি বেকার ভারতে! চাকরিগুলো কোথায় গেল মোদিজি?

Unemployment in Modi Govt: এমনকী প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বেকারত্বের হার ভারতের থেকে যথাক্রমে ১২.৯% এবং ১১.৩% কম।

অসাংবিধানিক ইলেক্টোরাল বন্ডের অর্থপুষ্ট বিজেপির নির্বাচনী প্রচারে যখন 'মোদি কি গ্যারান্টির' ছাপান্ন প্রহর সংকীর্তন চলছে তখন নয়া দিল্লির সিএসডিএস গবেষণা সংস্থার অধীনে লোক নীতি প্রকল্পের সমীক্ষা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে। সমীক্ষার আওতায় আসা ৬২ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, আগের চেয়ে বর্তমানে চাকরির বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে উঠছে। এই সমীক্ষা আমাদের একটু অতীতচারণে বাধ্য করে। সময়টা ছিল ২০১৩-১৪। গোটা দেশ জুড়ে এক স্বপ্নের ফেরিওয়ালা ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রতিশ্রুতির থলে হাতে। সেই থলের মধ্যে যেমন ছিল প্রত্যেক ভারতবাসীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা ঢুকিয়ে দেবার কথা, তেমনই ছিল বছরে ২ কোটি চাকরির স্বপ্ন। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। ২ কোটি চাকরিকে আরেকটা নির্বাচনী 'জুমলা' হিসাবে আমরা সবাই কম বেশি মেনে নিয়েছি। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে মোদি জমানা কর্মহীনতার সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছে। এবার নির্বাচনের আগে যে মোদি গ্যারান্টি পত্র প্রকাশিত হয়েছে তাতে বছরে ২ কোটি চাকরি ও কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি জায়গা পর্যন্ত পায়নি। এই অবস্থায় নাগরিক হিসাবে আমাদের অধিকার রয়েছে কর্মসংস্থানের দাবি ও চাকরির গল্পটা বুঝে নেওয়ার।

আমরা যদি অমৃতকালের ১০ বছরের হিসাব করি তাহলে অতি সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানের সঙ্গে মোদি জমানার প্রথম ৫ বছরের কর্মসংস্থানের হিসাবটাও আলোচনার মধ্যে আনতে হবে। অতি সাম্প্রতিক তথ্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইন্টারন্যাশানাল লেবার অর্গানাইজেশনের 'ইন্ডিয়ান এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট'। এই প্রতিবেদন দেশের কর্মসংস্থান সম্পর্কিত প্রচারের ফানুসটা একেবারে চুপসে দিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে,

  • ২০২২ সালে ভারতে যত মানুষ কর্মহীন ছিলেন তার ৮২.৯% দেশের যুবশক্তি।
  • দেশের বেকারদের মধ্যে শিক্ষিতের সংখ্যা ২০২০ সালে ছিল ৫৪.২% যা ২০২২ সালে হয়েছে ৬৫.৭%। শিক্ষিত বলতে এখানে মাধ্যমিক ও তদুর্ধ্ব যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে।
  • যুবশক্তির মধ্যে লিঙ্গভেদে বিচার করলে দেখা যাবে মেয়েদের অবস্থা (৭৬.৭%) ছেলেদের থেকে (৬২.২%) আরও খারাপ।
  • মোদি জমানার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, যে যত বেশি পড়াশোনা করবে তার তত বেশি বেকার থাকার সম্ভাবনা বাড়বে। লিখতে পড়তে পারে না এমন মানুষদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৩.৪%, মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের ১৮.৪%, গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে হার ২৯.১%। অক্ষর জ্ঞানহীনদের তুলনায় স্নাতকদের বেকারত্বের হার ৯ গুণ বেশি।
  • শ্রমশক্তির ৮২% রয়েছে অসংগঠিত ক্ষেত্রে। এমনকী সংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের একটা বড় অংশ অসংগঠিতরূপে কাজ করে। এছাড়া শ্রমশক্তির একটা বড় অংশ স্বনিযুক্ত, অর্থাৎ তারা কোন নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকই পায় না।
  • কর্মে নিযুক্ত মানুষদের আয়ের হিসাবটাও কর্মসংস্থানের লজ্জাজনক পরিস্থিতি উন্মোচিত করে। ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী একজন স্থায়ী শ্রমিকের গড় আয় ১৯,০১০ টাকা, স্বনিযুক্ত মানুষের ১১,৯৭৩ টাকা, ক্যাজুয়াল শ্রমজীবী মানুষের গড় আয় ৮,২৬৭ টাকা।
  • কর্মসংস্থানের হিসাব বোঝার জন্য একটি জরুরি হিসাব হলো, দেশের শ্রমশক্তি কাজে অংশ নিতে পারছে কিনা (Labour force participation rate)।এই প্রতিবেদন অনুসারে শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ ছিল ২০০০ সালে ৫৪% যা এই অমৃতকালে (২০২২) কমে হয়েছে ৪২%। ছেলেদের অংশগ্রহণ ৬১.২%, মেয়েদের ২১.৭%।

আরও পড়ুন- দশ বছরে দেশের বেকার, চাকরিপ্রার্থীদের কী দিলেন নরেন্দ্র মোদি?

আইএলও যে রিপোর্ট পেশ করেছে তা কিন্তু কোনও নতুন তথ্যের উন্মোচন নয়। একথা ঠিক যে, মোদি জমানা সমস্ত রকমের তথ্যকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। স্বাধীনতার পর এই প্রথমবার সঠিক সময়ে জনগণনা (২০২১) হলো না। জনগণের ব্যয় সমীক্ষা, জাতীয় নমুনা সমীক্ষা, কর্মসংস্থান ও বেকারত্বের পিরিওডিক সার্ভের তথ্যও অমিল। এই প্রতিকূলতার মধ্যেও ভারতের কর্মসংস্থানের খবরাখবর নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে চলেছে সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি (CMIE)। এই সংস্থার সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ১৫ বছর ও তদুর্ধ্ব মানুষদের মধ্যে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি ছিল ৮% যা গত দু'বছরে ছিল ৭.৫% ও ৭.৭%। এই মুহূর্তে দেশের বেকার যুবকদের মধ্যে কাজ খুৃঁজছে ৩ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ। তথ্যের খাতিরে শুধু একথা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, অতিমারীর সময় দেশের কর্মহীনতার হার ছিল ৮ শতাংশের সামান্য বেশি। সিএমআইই-এর সমীক্ষা অনুসারে, শহরাঞ্চলের প্রতি দশজনের মধ্যে একজন বেকার। এক্ষেত্রে একটা কথা খুব স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন, মোদি জমানার সূচনালগ্ন থেকেই বেকারত্বের ছবিটা এরকম ভয়ঙ্কর। অতিমারী পর্বের আগে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল ২০১৭ সালে ভারতে কর্মরত মানুষের সংখ্যা ছিল ৪০ কোটি ৮৪ লক্ষ যা ২০১৮ সালে হয়েছিল ৩৯ কোটি ৭৫ লক্ষ (মাত্র ১ বছরে ১ কোটির বেশি চাকরি ভ্যানিশ)।

একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, চাকরির বাজারে কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন পদে নিযুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রেও মোদি সরকার পরিকল্পিতভাবে কর্মসংকোচন করছে। ২০২৩ সালের বর্ষাকালীন সংসদ অধিবেশনে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং যে তথ্য দিয়েছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন শূন্যপদের সংখ্যা ৯.৬৪ লক্ষ। এর মধ্যে উচ্চকোটির চাকরি যেমন আইএএস-এ শূন্যপদ ১,৩৬৫, আইপিএস-এ ১,৩১৮, ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিসে ১,৬৪২, ইন্ডিয়ান রেভেনিউ সার্ভিসে ৩০১। সিআরপিএফ, বিএসএফ ও দিল্লি পুলিশে মোট শূন্যপদের সংখ্যা ১,১৪,২৪৫। রেলে শূন্যপদ ২.৬৩ লক্ষ যার মধ্যে রেলওয়ে সেফটি সংক্রান্ত শূন্যপদের সংখ্যা ৫৩,১৭৮। এই শূন্যপদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। ২০১৮ সালের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্র সরকারে শূন্যপদের সংখ্যা ছিল ৪,১২,৭৫২। এই অবস্থায় সামান্য কয়েকটি সরকারি পদের জন্য কীভাবে বেকার প্রজন্ম ঝাঁপিয়ে পড়ছে তার এক-দুটো উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি ভারতীয় রেল সর্বনিম্ন গ্রুপ ডি ক্যাটাগরির (লেভেল-১) ৬২,৯০৭ টি পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। পদগুলোর জন্য যোগ্যতামান ছিল মাধ্যমিক বা আইটিআই সার্টিফিকেট। পদগুলো ছিল - খালাসি, গেটম্যান, ট্র্যাকম্যান, পয়েন্টসম্যান ইত্যাদি। শূন্যপদগুলোর জন্য দরখাস্ত জমা পড়ে প্রায় দু'কোটি। এর মধ্যে এম.টেক (পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইঞ্জিনিয়ারিং) - ৪০,৭৫১/  বি.টেক. (গ্র্যাজুয়েট ইঞ্জিনিয়ারিং) - ৪,১৯,১৩৭। আর্টস গ্র্যাজুয়েট - ১৯.১ লক্ষ। আর্টস পোস্ট গ্র্যাজুয়েট - ৩.৮৩ লক্ষ। সায়েন্স গ্র্যাজুয়েট - ৯.৫৭ লক্ষ। সায়েন্স পোস্ট গ্র্যাজুয়েট - ১.১৭ লক্ষ। বাকিরা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বা আইটিআই সার্টিফিকেট পাশ। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন!

দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চলছে যে, ভারত এই মুহূর্তে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হতে চলেছে এবং এই অর্থনীতির মূল্য ৪.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। একইসঙ্গে এই তথ্যটি অস্বীকার করা হচ্ছে যে, এই অর্থনীতির সুফল ভোগ করছে সমাজের উপরতলার কিছু মানুষ। ভারতের মতো দেশে যেখানে বেকারত্ব  জ্বলন্ত সমস্যা, সেখানে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারছে না। কারা বেকার বা কারা কর্মরত সেই হিসাবের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতি হলো কাজের বিনিময়ে যারা অর্থ উপার্জন করেন না সেই অংশটিকে হিসাবের বাইরে রাখতে হয়। সেই হিসাবে ২০২২-২৩ আর্থিক বর্ষে ৪৮ শতাংশ ভারতীয় পুরুষ এবং মাত্র ১৩ শতাংশ ভারতীয় মহিলা এমন কাজে যুক্ত ছিলেন যাতে অর্থ উপার্জন হয়। মহিলা শ্রমশক্তির এই হার আমাদের সবাইকে লজ্জিত করে। সিএমআইই-এর হিসাব অনুযায়ী ভারতে প্রতিবছর কাজের বাজারে নতুনভাবে (অর্থাৎ যারা সাবালক হয়েছে) প্রবেশের যোগ্য হয় ২ কোটি ৪৯ লক্ষ লোক। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে এদের অর্ধেক তখনই চাকরির লাইনে নাম লেখাবে না, তাহলেও সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ। এই হিসাবে বছরে এক কোটি ২৫ লক্ষ শুধু নতুন কাজ দরকার। আর ইতিমধ্যেই কাজ হারিয়েছে বা কৃষিকাজ থেকে উৎখাত হওয়া মানুষের সংখ্যাটা যদি যোগ করি তাহলে ছবিটা আরও জটিল হবে। এক্ষেত্রে আমরা যদি মোদি সরকারের দেওয়া তথ্যে বিশ্বাস রাখি, তাহলে এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন এবং ন্যাশনাল পেনশন স্কিমের নতুন Payroll addition-এর তথ্য অনুযায়ী ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে নতুন কাজ তৈরি হয়েছে মাত্র ৬১ লক্ষ। এই সংখ্যাটাও প্রশ্নের উর্ধ্বে নয় কারণ নতুন সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী অস্থায়ী বা ঠিকা শ্রমিকদের নাম নথিভুক্তকরণ বর্তমানে বাধ্যতামূলক হয়েছে। তাই মনে করা হচ্ছে, ৬১ লক্ষের মধ্যে একটা অংশ আসলে আগে থেকেই কর্মরত ছিল। আবার এই কর্মরত শ্রমশক্তির ২৫% অস্থায়ী শ্রমিক এবং মাত্র ২৩% নিয়মিত মাইনে পায়।

আরও পড়ুন- ২ কোটি চাকরি কোথায়? ১০ বছরে দেশের বেকারদের অবস্থা কী? ভয়াবহ তথ্য প্রকাশ্যে

মোদি জমানার কর্মহীনতার সবচেয়ে বিপদজনক দিক হলো এর বহুমাত্রিকতা। এক কথায়, সমস্ত ধরনের কাজের বাজারে মন্দা। এক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষ যে কাজগুলো ভিত্তি করে বেঁচে থাকেন তার আলোচনা ব্যাতীত কোনও ছবিই সম্পূর্ণ হতে পারে না। ভারতে কর্মক্ষম মানুষের ৯২ শতাংশ হলো অদক্ষ ও স্বল্প দক্ষ মানুষ যারা অসংগঠিত ক্ষেত্রগুলিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। প্লাস্টিক, দেশলাই, বাসনপত্র, রং, জামাকাপড় সেলাই, স্টোন ক্র্যাশার, চামড়া, প্রিন্টিং, ইলেকট্রনিক  অজস্র শিল্প ইউনিট, শিল্প তালুক। গত দশ বছরে এই ক্ষেত্রগুলোতে ধারাবাহিক বিপর্যয় নেমেছে। একথা বলার উদ্দেশ্য এটা নয় যে মোদি জমানার আগে এই ক্ষেত্রগুলোতে সোনা ফলছিল কিন্তু পরিসংখ্যান প্রমাণ করছে ইউপিএ জমানায় এই অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পক্ষেত্রে অনেক বেশি কর্মসংস্থান হয়েছিল। ২০০৪-২০১৪ সময়পর্বে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল গড়ে ৮%। গড়ে কর্মসংস্থান ছিল ৭৫ লক্ষ। ২০০৪ সালে ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে কাজ করত ৫৩ মিলিয়ন মানুষ যা ২০১২ সালে বেড়ে হয় ৬০ মিলিয়ন। অথচ মোদি জমানার প্রথম ছয় বছরে এমএসএমই সেক্টরে কাজ হারায় ২৫-৩০ মিলিয়ন মানুষ। আর লকডাউন পর্বে যখন মুকেশ আম্বানি প্রতি ঘণ্টায় মুনাফা করছেন ৯০ কোটি টাকা তখন ভারতে কাজ হারায় ১ কোটি ২২ লক্ষ মানুষ। আবার তুলনায় দামি চাকরির ক্ষেত্রে ছবিটা আরেক ধরনের সংকটবাহী। ইদানীং আইআইটি ও বিজনেস স্কুলগুলোতে পড়েও কর্মহীন থাকার খবর মূলধারার মিডিয়াতে বহু আলোচিত। আমরা এক্ষেত্রে আনস্টপ ট্যালেন্ট রিপোর্টের (২০২৪) সমীক্ষায় নজর ফেরাতে পারি যেখানে বিভিন্ন পেশাদারি কোর্স শেষ করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশ মনে করছে, তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাবেন না। প্রতি ছ'জনের মধ্যে তিনজন মাইনের চেয়ে কাজের স্থায়িত্বের উপর বেশি জোর দিয়েছেন। আর সমীক্ষাকৃত পেশাদারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশের সমস্ত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস প্লেসমেন্ট পেয়েছেন। পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ বোঝা যায় যখন সংঘর্ষদীর্ণ ইজরায়েলে নির্মাণ শিল্পে কাজ করতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার বেকার কাজের আবেদন করে। নরেন্দ্র মোদির শাসনাধীন এই অমৃতকালের ভারতবর্ষ আজ বেকারত্বে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে। চিনের বেকারত্বের হার ভারতের থেকে ১৩.২% কম। এমনকী প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বেকারত্বের হার ভারতের থেকে যথাক্রমে ১২.৯% এবং ১১.৩% কম।

এই ভয়ংকর বেকারত্বের দায় অবশ্যই নরেন্দ্র মোদি সরকারকে নিতে হবে। একের পর এক জনবিরোধী ও কর্পোরেটবান্ধব নীতি দেশের যুব সমাজকে খাদের কিনারায় এনে দাঁড় করিয়েছে। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর দেশের প্রধানমন্ত্রী নোটবন্দির নামে দেশের গরিব মানুষের উপর এক সার্জিকাল স্ট্রাইক করেন যার ফলে শুধু অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ হারায় ১৫ লক্ষ মানুষ। নগদ টাকার অভাবে অর্থনীতি বেসামাল হয়ে যায়। এরপর ২০১৭ সালের ১ জুলাই মধ্যরাত থেকে সারা দেশ জুড়ে অভিন্ন কর ব্যবস্থা 'জিএসটি' চালু হয়। পশ্চিমবঙ্গের পোশাক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ত্রিচুরের যন্ত্র উৎপাদক, বেনারসের তাঁতি থেকে লখনউয়ের চিকন শিল্পী, ঘরের পাশের রসগোল্লা বিক্রেতা জগুদা থেকে চানাচুর বিক্রি করা রাজু- তিনমাসের মধ্যেই জিএসটি বিপ্লব অসংগঠিত অর্থনীতির কোমর ভেঙে দেয়।এরপর এল অতিমারী পর্বে অপরিকল্পিত লকডাউন। এর ফলে কর্মসংস্থানের পথ আরও রুদ্ধ হয়ে গেল অসংগঠিত ক্ষেত্রে। আর সংগঠিত ক্ষেত্রেও ফারাক হলো না। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোকে জলের দরে বিক্রি কর্মসংস্থানের উন্নতি ঘটাল না। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নির্ভর উন্নয়ন মডেলও ব্যর্থ হলো কারণ লগ্নি পুঁজির সংকট। তাই দক্ষ ও উচ্চ শিক্ষিতরাও কর্মহীনতার ফাঁদে পড়ল। অমৃতকালের এই বেকারত্বের কাহিনির খলনায়কদের আজ আমাদের প্রশ্ন করতেই হবে। রাম মন্দির, শ্রাবণ মাসে নিরামিষ ভোজন বা বুলেট ট্রেনের গল্পে না ভুলে আমাদের সজোরে প্রশ্ন করতে হবে চাকরিগুলো কোথায় গেল!

More Articles