মীনাক্ষীকে কেন উপনির্বাচনে প্রার্থী করল না সিপিএম?

পশ্চিমবঙ্গে একটি লোকসভা ও একটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন গঠিত হয়েছে। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রটি, সেখানকার বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় পদত্যাগ করার ফলে খালি হয়েছে । বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র টি সেখানকার তৃণমূল বিধায়ক সুব্রত মুখোপাধ্যায় জীবনাবসানের হলে খালি হয়েছে। এই দুটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন ঘোষিত হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ঘোষণা করেছে। আসানসোলে তারা প্রার্থী করেছে বিজেপি ত্যাগী অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহাকে। আর বালিগঞ্জে তারা প্রার্থী করেছে বিজেপিতে-ত্যাগী বাবুল সুপ্রিয়কে। বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে আসানসোল কেন্দ্র প্রার্থী করা হয়েছে একটা সময় পশ্চিমবঙ্গে ছাত্রনেতা হিসেবে যথেষ্ট পরিচিত, বর্তমানে পশ্চিম  বর্ধমান জেলার বিশিষ্ট সি পি আই ( এম)  নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায় কে। বালিগঞ্জ কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে শ্রীমতি সায়রা হালিমকে।

আসানসোল কেন্দ্রটি বামপন্থী রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে  বিশেষ রকমের প্রত্যাশার  দাবি রাখে। এই কেন্দ্র থেকেই একটা সময় কয়লা খনি অঞ্চলের কিংবদন্তি বামপন্থী নেতা হারাধন রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং জিতেছেন। খনি অঞ্চলে হারাধন রায়ের ভূমিকা, গোটা রাজ্যে বামপন্থী আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে একটা ঐতিহাসিক অবদান রেখে গিয়েছে। শ্রমিক আন্দোলনে সততা,  একনিষ্ঠতা, সর্বোপরি শ্রমিকশ্রেণীর সঙ্গে একাত্মতা স্থাপন করে শ্রমিকদের একজন হয়ে ওঠার যে কমিউনিস্ট মানসিকতা,সেটি স্থাপনের ক্ষেত্রে হারাধন রায় ছিলেন কেবল আসানসোল ,পশ্চিমবঙ্গে নয়, গোটা ভারতে একটি দৃষ্টান্ত। দুর্ভাগ্যের বিষয়  পরবর্তীকালে এই হারাধন রায়ের সঙ্গে একটা বড়ো অংশের বামপন্থীরা সঠিক আচরণ করেননি। ক্ষমতার রাজনীতির সঙ্গে আপস করা হারাধন রায়ের পক্ষে  কোনোদিনও সম্ভব ছিল না। সেই কারণে দল যখন ক্ষমতায় আর দলের একটা বড় অংশ যখন অর্থ আর ক্ষমতার কাছে নিজেদের সঁপে দিচ্ছে, তখন হারাধন রায় তাদের কাছে ছিলেন মূর্তিমান শ্রেণীশত্রু। তাই হারাধন রায়ের  মত প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্বকে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ,অপমান, অসম্মান ,এমনকি চরিত্রহনন করবার নোংরা পথ থেকেও বামপন্থী নামধারী একদল মানুষ নিজেদের নিবৃত্ত রাখেননি। অথচ এই নিবন্ধকারের নিজের চোখে দেখা, দলের ক্ষমতাসীন অংশ যখন হারাধন রায়কে ঘিরে নানা কদর্য কথা বলে তাঁকে দলীয় বৃত্তের বাইরে বের করে দিচ্ছে, তখন জ্যোতিবাবুর মত মানুষ, ইন্দিরা ভবনে কতখানি মর্যাদা এবং সমাদরের সঙ্গে হারাধন রায় কে আপ্যায়ন করছেন।

হারাধন রায় তাঁর কাছে এসেছেন, এই খবর জানবার সঙ্গে সঙ্গে স্বভাব বিরুদ্ধ ভাবে জ্যোতিবাবু ইন্দিরা ভবনে, তাঁর বসার ঘর থেকে উঠে এসে, সামনের ব্যালকনি পেরিয়ে, সিঁড়ি ভেঙে উঠোনে গিয়ে  হারাধন রায়কে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে এই আসানসোল কেন্দ্র টি যে  বামপন্থীদের নাগালের বাইরে রয়েছে, মুনমুন সেনের মতো একজন অভিনেত্রী অতি সহজে বামপন্থীদের হারিয়ে আসানসোল কেন্দ্রটি তৃণমূলের ঝুলিতে পুড়তে  পেরেছিলেন, অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে ,এই গোটা ঘটনার পেছনে হারাধন রায়ের মতো ব্যক্তিত্বকে অসম্মান করা,অমর্যাদা করা, অপমান করা-- একটা বড় অনু ঘটক হিসেবে কাজ করেছিল। একটা বড় অংশের বামপন্থীও মন থেকে কখনোই মেনে নিতে পারেননি হারাধন রায়ের প্রতি সি পি আই(এম) দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর অমানবিক আচরণ।

 হারাধন রায় স্মৃতিবিজড়িত আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে সি পি আই(এমে)র প্রার্থী হিসেবে প্রাক্তন ছাত্র নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়কে নির্বাচন করা সমসাময়িক রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসানসোলের ভূমিকন্যা হলেন  যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ।এই সময়ের নানা রাজনৈতিক গণ আন্দোলনের সঙ্গে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের নামটি সাধারণ মানুষের কাছে বিশেষ পরিচিত হয়ে আছে । গত  ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মীনাক্ষী নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন।

কার্যত যুব আন্দোলনের নেতৃত্ব আসবার পর থেকে, নানা গণআন্দোলনে মীনাক্ষীর ভূমিকা ধীরে ধীরে  বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে একটা বড় রকমের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে। মীনাক্ষী অত্যন্ত সুবক্তা। তাঁর সহজ-সরল অনাড়ম্বর জীবনযাত্রা বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের কাছেই শুধু নয়, বামপন্থী পরিমণ্ডলের বাইরের মানুষদের কাছে ও তার সম্পর্কে একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছে। অতি সাম্প্রতিককালে আনিস খানের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর সি পি আই(এমে)র যুব সংগঠনের নেতৃত্বে যে আন্দোলন গুলি হয়েছে, তার নেতৃত্ব দিয়ে মীনাক্ষী পুরনো দিনের বামপন্থী আন্দোলনের স্মৃতিকে বহু মানুষের মনে উস্কে দিয়েছেন। আনিস খানের মৃত্যুর প্রতিবাদে আন্দোলন করার দায়ে বেশ কয়েকদিন মীনাক্ষী কারাবাস পর্যন্ত করতে হয়েছে।

আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ঘোষিত হওয়ার পর বেশকিছু স্বঘোষিত বামপন্থী ফেসবুক ইত্যাদি বিকল্প প্রচারমাধ্যমে বামপন্থী প্রার্থী হিসেবে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের নাম পর্যন্ত লিখে দিতে শুরু করেছিলেন। এই অবস্থায় পার্থ মুখোপাধ্যায়ের মত একাধারে তাত্ত্বিক, অপর দিকে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে গণআন্দোলনের মধ্যে মিশে গিয়ে নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিত্বকে প্রার্থী করা ,এই বিষয়টি সিপিআই(এম)-এর আগামী দিনের রাজনৈতিক অভিপ্রায়ের গতিমুখ ঘিরে একটা বিশেষ রকমের ধারণার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

গত দু'বছরে কোভিডের সময়কাল ভার্চুয়াল আন্দোলনের আধিক্যের ফলে একদম মাটিতে নেমে গণ আন্দোলন করার পথ থেকে বামপন্থী রাজনীতির নেতা-কর্মী-সমর্থকরা কি ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছেন-- এই প্রশ্নটা যখনই তীব্র হয়ে উঠতে শুরু করেছে ,সেই রকম একটা সময় ভূমিকন্যা মীনাক্ষীর পরিবর্তে প্রাক্তন ছাত্র নেতা পার্থকে প্রার্থী করার বিষয়টি সি পি আই(এমে)র রাজনীতির আগামী দিনের যে ইঙ্গিত দেখাচ্ছে তাতে এটাই মনে হয় যে , ফ্রাকশন পলিটিক্সের ঊর্ধ্বে উঠে, সি পি আই(এম )ধীরে ধীরে গ্রাউন্ড রিয়েলিটিতে ছয়, সাত, আটের দশকের মত আবার উপলব্ধি করতে শুরু করেছে।

বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকাকালীন পার্থ যখন সি পি আই(এম) এর ছাত্রসংগঠন এসএফআইয়ের দায়িত্বে ছিলেন ,তখন বহু মানুষই তাঁর মধ্যে আগামী দিনের একজন পরিনত সম্ভাবনাময় নেতৃত্বকে খুঁজে পেয়েছিলেন ।পার্থর সঙ্গে একই সাথে যিনি এসএফআইয়ের দায়িত্বে ছিলেন, সেই সোমনাথ ভট্টাচার্য এখন একজন পরিনত রাজনৈতিক নেতা। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার গণ্ডি অতিক্রম করে তিনি এখন সিপিআই(এমে) র রাজ্য কমিটির সদশ্য ।কিন্তু পার্থর নাম একাধিকবার , একাধিক ব্যক্তিত্বের দ্বারা সি পি আই(এম)  রাজ্য কমিটির সদস্য করার জন্য প্রস্তাবিত হলেও কোন রহস্যজনক কারণে আজ পর্যন্ত পার্থ, সি পি আই(এমে)র রাজ্য কমিটির সদস্য হতে পারেননি তা নিয়ে বিস্তর চাপানউতোর আছে। গোষ্ঠী রাজনীতির কোন্দলে পার্থের  রাজনৈতিক কেরিয়ার একটা সময় সংকটাপন্ন হতে যাচ্ছে কিনা, সেই সন্দেহ সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তীব্র হয়ে উঠছিল।

সেই পার্থকে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের সি পি আই(এম) প্রার্থী করা বাস্তব রাজনীতির দিকে সি পি আই(এমে)র অভিমুখে স্পষ্ট হচ্ছে, সেটা ক্রমশ দলীয় সমর্থকদের কাছে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে । ২০১৯  সালে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সময় কালে পার্থ যেভাবে গোটা আসানসোল শিল্পাঞ্চলে সম্প্রীতির পক্ষে ,বিশেষ করে সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের জানমালের নিরাপত্তার প্রশ্নে ,জীবন তুচ্ছ করে পথকেই নিজের ঘরবাড়ি করে নিয়েছিল, সেই বিষয়টি কিন্তু প্রচারমাধ্যমের আওতাভুক্ত হয় নি। কারণ ,পার্থ অনেক প্রচারপ্রিয় নেতার মতো, একটা নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী, নিজের জন্য নিয়োগ করে রাজনীতি করেন না - এটাই একটা বড় অংশের বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের অভিমত ।এই বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে যে কেবলমাত্র সি পি আই(এম )কর্মী-সমর্থক আছেন তা নয়, সিপিআই ,আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে শুরু করে, আসানসোল অঞ্চলে যাঁরা বামফ্রন্টের আওতার বাইরে বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ,সেই সমস্ত মানুষজনেরা পার্থ সম্বন্ধে এই অভিমত পোষণ করেন।

সেই জায়গা থেকে আসানসোলে আসন্ন লোকসভার উপ-নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক বিভাজন ,ভাষাভিত্তিক বিভাজন ,জাতপাত ভিত্তিক বিভাজন --এই সমস্ত কিছুর মোকাবিলা করার প্রশ্নে, বয়সে তরুণ অথচ ছাত্র আন্দোলনের প্রবাহী ধারার ভেতর দিয়ে  রাজনীতিতে নিজের স্থান করে নেওয়া পার্থ মুখোপাধ্যায় নিঃসন্দেহে একটি ভাল নির্বাচন।

বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের সাথেই হচ্ছে। বিশিষ্ট রাজনীতিক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর কারণে এই আসনটি ফাঁকা হয়েছে। বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরেই বামপন্থীদের দখলে ছিল। ১৯৭৭  সালে এই কেন্দ্র থেকে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন সি পি আই(এমে)র শচীন সেন। অনুশীলন সমিতির প্রাক্তন বিপ্লবী নেতা শচীন সেন পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিক আন্দোলনের এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। প্রথম জীবনে তিনি ছাত্রাবস্থাতেই ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যুক্ত থেকে ,নানা বিপ্লব কাজকর্মের ভিতর দিয়ে তিনি ব্রিটিশ পুলিশের কাছে ক্রমে বিভীষিকা হয়ে উঠেছিলেন। ব্রিটিশ পুলিশ বহু চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত তাঁকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। যদিও বয়সের কারণে কঠিন সাজা হয়নি। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার বামপন্থী আন্দোলনের কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব সুকুমার সেনগুপ্ত যেমন জেলাশাসক বার্জ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে অভিযুক্ত হয়েও বয়সের কারণে তাঁর ফাঁসি হয়নি, ঠিক তেমনই শচীনবাবুও  বয়সের কারণেই ব্রিটিশের বড় রকমের শাস্তির হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন।
 

শ্রীহট্ট থেকে এপার  বাংলায় চলে এসে তিনি ধীরে ধীরে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন ।তাঁর কর্মক্ষেত্র ছিল মূলত শ্রমিক আন্দোলন। মেটিয়াবুরুজ অঞ্চলের ওস্তাগরদের  জীবন-জীবিকার সংগ্রামের সঙ্গে শচীন সেন নিজেকে সংযুক্ত করে শ্রমিক শ্রমিক আন্দোলনের এক কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন।১৯৯২ সালে তাঁর মৃত্যুর সময়কাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক। বিধানসভায় বামফ্রন্টের মুখ্য সচেতকের  দায়িত্ব ও তিনি পালন করেছিলেন।

বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র টি কেবলমাত্র অভিজাত ও ধনী মানুষের বসবাস নয়। সেখানে একাধিক বস্তি আছে। বস্তিতে মিশ্র জনজাতির বাস আছে। একটা বড় অংশের মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষও এই বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দা। বালিগঞ্জের মোট মুসলমান ভোটারদের একটা বড় অংশই অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত খারাপ অবস্থার মধ্যে দিন কাটান। এই বিধানসভা কেন্দ্রে রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস , সদ্য বিজেপি ত্যাগী বাবুল সুপ্রিয় কে প্রার্থী করেছে। যে বাবুল সুপ্রিয় মাত্র দু'বছর আগে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে সরাসরি মুসলমান বিরোধী একতরফা দাঙ্গায় প্রত্যক্ষভাবে মদত  দিয়েছে ,সেখানে এক ইমাম সাহেবের শিশুপুত্রের অকাল মৃত্যু কে ঘিরে বাবুল সুপ্রিয়র ভূমিকা নিয়ে গোটা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির সেই সময় উত্তাল হয়েছিল ।

এই বাবুল সুপ্রিয় ২০১৯  সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ার পর পরবর্তী সময় যখন মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন হয়, তখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন। আর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার কারনেই তিনি বিজেপি সঙ্গ করেন এবং কিছুদিন রাজনৈতিক সন্ন্যাস পালন করবার পর ,তৃণমূলে যোগদান। আর প্রায় সাথে সাথেই  তৃণমূলের প্রার্থী হন ।

এ হেন  একজন প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দিতার ক্ষেত্রে বামপন্থীরা যদি কুলশীলমান বিচার করে কাউকে প্রার্থী করার পরিবর্তে , একদম গণআন্দোলন থেকে উঠে আসা কোন ব্যক্তিত্বকে প্রার্থী করতেন, তাহলেই আসনটিতে শাসকের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের যে ক্ষোভ,  সেই ক্ষোভের বিষয়টি অনেক বেশি প্রকাশ পেতে সাহায্য করতো ।বুর্জোয়া রাজনীতির ক্ষেত্রে যেটা বৈশিষ্ট্য ,সেই কারো স্ত্রী, কারো ভাইজি, ভাইপো বা কারোর জামাতা বা কন্যা, এহেন  বিষয়টি  ,বামপন্থীরা যদি তাদের প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়, তাহলে আর বামপন্থীদের সঙ্গে বুর্জোয়া রাজনীতির ফারাকটা কোথায় থাকে? সাধারণ কলকারখানায় কাজ করা মানুষের কি আর বামপন্থী দলগুলোর পক্ষ থেকে গণ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া থেকে শুরু করে নির্বাচনী সংগ্রামে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা ক্রমশ হারাতে বসেছে? বংশগৌরবের  শংসাপত্র না থাকলে কি আর বামপন্থী দলের নির্বাচনী সংগ্রামে প্রার্থী হওয়া আগামীদিনের সম্ভবপর হবে না?

More Articles