রাগে ফেটে পড়তে যার কাছে যাওয়া যায় তিনিই কুন্দেরা

Milan Kundera: জীবনের কোনও না কোনও বিন্দুতে দাঁড়িয়ে আমরা সকলেই মিলান। আর তাঁর প্রতিটা উপন্যাস, কলমের প্রতিটি আঁচড় যেন আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা।

'শাস্তি' ধার্য হওয়ার পর স্বামীর উদ্দেশে একটিই মাত্র শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন রবিঠাকুরের ছোটগল্পের নায়িকা চন্দরা, 'মরণ'। দেশের উদ্দেশেও কি তেমনই কিছু ভেবে নির্বাসন নিয়েছিলেন আধুনিক গদ্যসাহিত্যের আধুনিকতম কথাকার মিলান কুন্দেরা। ছেড়ে যাওয়া সহজ নয়। নিজের দেশ, নিজের জন্মভূমি, এমনকী নিজের ভাষাও! তবু সেই কাজটাই অবলীলায় করে ফেলেন কাফকার 'উত্তরসুরী' মিলান। ছাড়লেন দেশ, ছাড়লেন ভাষা। তবে ছাড়লেন না নিজের শব্দকে। নিজের দৃপ্ত কণ্ঠস্বরকে। সাহিত্য নয়, আসলে তো ভাবনার জন্ম দেওয়াই কাজ যে কোনও মহান সাহিত্য়িকের। তা তাঁকে প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি দিক ছাই না দিক! আর সেখানেই এসে ভোঁতা হয়ে যায় মাথার কাছে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের 'উঁচিয়ে থাকা ছুরি'। বড় হয়ে ওঠে শব্দ এবং ভাবনা। ভাষা, ভূখণ্ড, রাজনীতির গণ্ডি ছাড়িয়ে হয়ে ওঠে চিরকালের।

খুন-জখম-রাহাজানি নয়, শব্দের জন্য শাস্তি। শব্দের জন্য কারাগার, নির্বাসন, যেন কোনও নতুন বিষয় নয় আর এই পৃথিবীতে। সন্ত্রাসবাদী, খুনি কিংবা লুঠেরারা এ বিশ্বে যত বেশি শাস্তি পায় তাদের কৃতকর্মের জন্য, তার চেয়ে অনেক বেশি শাস্তি পান কবি-সাহিত্যিক, শিল্পীরা। তাঁদের শব্দের জন্য, সৃষ্টির জন্য। কথায় বলে, অসির চেয়ে মসির জোর বেশি। তবে সত্যিই কি শব্দ এতটা ধারালো হতে পারে, যার জন্য দেশে দেশে কালে কালে ভূমিহীন হয়ে যেতে পারে শিল্পী-সাহিত্যিকদের। হালের সলমন রুশদি বা তসলিমা নাসরিন, যুগ যুগ ধরে শব্দের জন্য সাহিত্যিকদের এই হেনস্থা যেন বাঁধা, দেশহীন হওয়া বাঁধা। কখনও শুধু কবিতা লেখার দায়ে জেল খাটতে হয় ভারভারা রাওয়ের মতো কবিকে। কখনও 'রাত ভ'রে বৃষ্টি' উপন্যাসে অশ্লীলতার অভিযোগে আদালতের এজলাশে গিয়ে দাঁড়াতে হয় বুদ্ধদেব বসুর মতো অধ্যাপক, সাহিত্যিককে। 'প্রজাপতি' উপন্যাসের জন্য প্রায় একই রকম হেনস্থা সহ্য করতে হয়েছিল সমরেশ বসুকেও। মৌলবাদীর হাতে খুন হতে হয় বাংলাদেশের মুক্তমনা ব্লগার অভিজিৎ রায়কে, বা প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে ছুরি খেতে হয় রুশদিকে। এ-ও এক শাস্তি। বিচারকের ভূমিকায় কখনও ব্যক্তি, তো কখনও রাষ্ট্র।

আরও পড়ুন: যৌন শোষণই নিয়তি! বাংলা সাহিত্যের নারীমন তবু চেনা ছকের বাইরে

সময় ফুরোলে কলম নামিয়ে রাখতে হয়, শিখিয়েছিলেন সমর সেন। কিন্তু সময় যতদিন রয়েছে, ততদিন যে কোনও শর্তেই ময়দান না-ছাড়তে শিখিয়েছেন সম্ভবত মিলান কুন্দেরা। পিঁপড়ের সামনে হঠাৎ করে একটা বাধা এনে হাজির করলে, সে থমকায় কিন্তু থামে না। বাধা এড়িয়ে অন্য রাস্তা ধরে এগিয়ে যায় গন্তব্যের অভিমুখে। মিলান যেন তেমনই। মিলানের জন্ম ১৯২৯ সালে, চেকোস্লোভোকিয়ার বার্নোয়। বাবা ছিলেন খ্যাতনামা পিয়ানোবিদ ও সঙ্গীতজ্ঞ। তাঁর হাত ধরেই সম্ভবত শিল্পের জগতে ঢুকে পড়া মিলানের। তবে গানবাজনার থেকে ঢের বেশি ভালো লাগত তাঁর লেখালিখি। কবিতা, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ- সাহিত্যের প্রায় সমস্ত শাখাতেই সমান দক্ষতায় লেখালিখি করেছেন তিনি, তবে পৃথিবী তাঁকে চিনল সর্বকালের অন্যতম এক সেরা কথাকার হিসেবেই। প্রায় প্রতিবছর নোবেলের মঞ্চে মনোনীত হয়েছে তাঁর লেখা, কিন্তু শিকে ছেঁড়েনি। না, এই অপারগতা মিলান কুন্দেরার নয়। বরং তাঁদের, যাঁরা না বুঝেছে কাফকার মর্ম, না বুঝেছে মিলানকে।

বড় হতে না হতেই কমিউনিস্ট রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন মিলান। ১৯৪৮ সালে নাম লেখান দলীয় রাজনীতিতে। কিন্তু সেখানে ঢুকেই চোখে পড়তে শুরু করে ফাঁকফোকরগুলি। ঢাল-তলোয়ার-বল্লম কোনও কিছুই তাঁর ছিল না, ছিল শুধুই কলম। আর সেই কলমের মাধ্যমেই নাকি তিনি সেরে ফেলেছিলেন সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপ। তার জেরেই ১৯৫০ সালে দল থেকে বিতাড়িত করা হল মিলানকে। প্রাগেই পড়াশোনা শেষ করে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন তিনি। এরই মাঝে ১৯৫৬ সাল নাগাদ ফিরে পেলেন পার্টির সদস্যপদ। ১৯৭০ সালে ফের একই ঘটনা। ফের বহিষ্কার করা হল মিলানকে। তার পাঁচ বছরের মাথায় নামল বড় প্রত্যাঘাত। শুধু দল নয়, এবার ছাড়তে হল অধ্যাপনা, এমনকী নিজের দেশও। শরণার্থী হয়ে উঠলেন ফ্রান্সে গিয়ে। ১৯৮১ সালে তাঁকে নাগরিকত্ব দেয় ফ্রান্স। সেখানেই অধ্যাপনা শুরু করেন মিলান। থামেনি লেখালিখি। এখানে শুরু হয় তাঁর সাহিত্যের দ্বিতীয় পর্ব। চেক ভাষায় নয়, এবার ফরাসিতেই একের পর এক কালজয়ী উপন্যাস বেরোতে থাকে তাঁর কলমের ডগা থেকে।

বদলায় তাঁর লেখার ধরণ। প্রথম পর্বের লেখায়, বিশেষত যে সময়টায় তিনি নিজের দেশে ছিলেন, সে সময়কার লেখায় তাঁর রাজনৈতিক উচ্চারণ ছিল অনেক বেশি প্রকট। কিন্তু জীবনে পরের পর ঘটনাপ্রবাহ যেন তাঁর দেখার চোখকে পাল্টে দিয়েছে অনেকটাই। প্রবাসে থাকাকালীন তিনি নিজেকে, নিজের সাহিত্যসত্তাকে আমূল ভেঙে ফেলেন। তিনি নিজেই বলতেন, ইউরোপীয় নবজাগরণ পর্বের সাহিত্যের উত্তরাধিকার তিনি বহন করার চেষ্টা করেছেন তাঁর লেখায়। ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয় 'দি আনবিয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং' উপন্যাসটি। আর তার পর থেকেই কুন্দেরা পরিচিত হতে থাকেন দার্শনিক লেখক হিসেবে। কিন্তু তাঁর সেই যাত্রা শুরু হয়েছিল আরও কয়েক বছর আগেই। তবে 'দি আনবিয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং' প্রকাশের পরেই আলোচনা শুরু হল তাঁর আগের রচনা 'দ্য বুক অফ লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং' নিয়েও। সেই সব লেখালিখির মধ্যে সর্ভেন্তিস, জভান্নি বোকাচ্চিও বা রাবেলাইয়ের মতো রেনেসাঁ পরবর্তী লেখকের প্রভাব কতখানি, সেসব নিয়েও শুরু হল কথাবার্তা। নিজেও অবশ্য সে কথা খানিকটা মেনেছেন কুন্দেরা। 'ইম্মর্টালিটি', 'আইডেন্টিটি' বা 'ইগনোর‌্যান্স' -র মতো উপন্যাসের মাধ্যমে এর পর ধীরে ধীরে আরও স্পষ্ট হতে শুরু করল তাঁর নিজস্বতা।

আধুনিকতা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন নদীর বাঁক নেওয়ার কথা। নদী চলতে চলতে যেখানে বাঁক নেয়, সেই বাঁক বা মোড়টাকেই বলে আধুনিকতা। তবে সেই আধুনিকতা কতখানি আধুনিক, তার কষ্টিপাথর রাখা সময়ের কাছে। সে কথা একশো শতাংশ খাঁটি। কোনও প্রকৃত সাহিত্যিকই তো আর জোর করে আধুনিকতার পুরিয়া গুঁজে দেন না তাঁর সৃষ্টিতে। বরং সেই আধুনিকতা সাহিত্যের শরীরে এঁকে দেয় সময়। সেই সময়ের প্রেক্ষিতে তা হয়ে ওঠে বাঁক ঘোরানো, আধুনিক। সমাজচারী, মানুষচারী সাহিত্য কখনও স্বৈরাচারকে সমর্থন করতে পারে না। করেনি মিলানের সাহিত্যও। তবে তার কোনও রকম উচ্চকিত উচ্চারণ ছিল না কোনওদিনই। সাহিত্যের মোড়কে কোনওরকম বার্তা দেওয়ার প্রচেষ্টা ছিল না তাঁর কোনওদিনই। বরং তার বদলে তিনি বেছে নিয়েছিলেন সূক্ষ্ম রসবোধ আর তির্যক বাচনভঙ্গির মতো শক্তিশালী হাতিয়ার। মিলানের সাহিত্যে ছিল এক অদ্ভুত নির্লিপ্তি। যা তাঁকে করে তুলেছিল সমসাময়িক সকলের থেকে একেবারে আলাদা, ব্য়তিক্রমী। আসলে কোনও একমাত্রিক সাহিত্য সৃষ্টির ইচ্ছা তাঁর কোনও কালেই ছিল না। বরং প্রতিটি লেখায় নিজেকে ভাঙতে ভাঙতে গিয়েছেন মিলান। জীবন থেকে যতটুকু শিখেছেন, সেই শেখা থেকে সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর সাহিত্যও। নির্দিষ্ট বা আদর্শ বলে যে কিছু হয় না আধুনিকতর সাহিত্যে, তা বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনের নির্যাস দিয়ে একটি মখমলের বিছানা সাহিত্যে নির্মাণ করতেন মিলান, পরমুহূর্তেই পাঠককে পৌঁছে দিতেন এক বিপন্নতার রাজ্যে। যেখান থেকে উঠে আসছে ফ্যাসিজম বা স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক মুক্তস্বর। যা আদতে বিপন্ন করে শাসককেও। তাই বোধহয় ভুখণ্ডহীন হতে হয় মিলানকে। বেছে নিতে হয় অন্য ভাষা, অন্য দেশ।

'দ্য জোকস' উপন্যাসের মাধ্যমে তথাকথিত কমিউনিস্টদের চক্ষুশূল হয়েছিলেন মিলান। স্তালিন-বিরোধী বলে দেগে দেওয়া হল তাঁকে। অথচ নিজে সাক্ষাৎকারে মিলান বলেছেন, আসলে শেষপর্যন্ত প্রেমের গল্পই বলতে চেয়েছিলেন তিনি। এমন অনেক অভিযোগের তিরই বরাবর এসে বিঁধেছে তাঁকে। যে কমিউনিস্ট পার্টির কাছে বরাবর কোণঠাসা মিলান, ২০০৮ সালে তাঁর বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠল চেকোস্লোভাকিয়ার কমিউনিস্ট সরকারের চরবৃত্তির। কোনও কালেই এসবে আমল দেননি লেখক। দিলেন না সেবারেও। বরং শ্লেষের সঙ্গেই উড়িয়ে দিলেন যাবতীয় অভিযোগ। যে দেশ তাঁকে ভূমিছাড়া করল, তাদের হয়েই চরবৃত্তির অভিযোগ। হাসবেন না কাঁদবেন মিলান। অবশেষে ব্যান উঠল নিজভূমে। ২০১৯ সালে এসে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হল চেকোস্লোভোকিয়ার নাগরিকত্ব। তাঁর নিজের শহর বার্নোতে প্রতিষ্ঠা করা হল মিলান কুন্দেরা লাইব্রেরি। ২০২০ সালে এসে তাঁকে ফ্রানজ কাফ্কা পুরস্কার দিল চেক সরকার। এদিকে ততদিনে তাঁর ঝুলিতে জমেছে বহু পুরস্কার। ১৯৮৫-তে পেয়েছেন জেরুজালেম পুরস্কার, ১৯৮৭ সালে অস্ট্রিয়ার স্টেট প্রাইজ ফর ইউরোপিয়ান লিটারেচার 'দি আর্ট অব নভেল' প্রবন্ধগ্রন্থের জন্য। ইতিমধ্যেই তাঁর উপন্যাস 'দি আনবিয়ারেবল লাইটনেস অফ বিইং' অবলম্বনে হলিউডে তৈরি হয়েছে ছবি।

নিজের জন্মভূমির কাছে থেকে যে স্বীকৃতি প্রাপ্য ছিল অনেক আগেই, শেষবয়সে এসে শুধুমাত্র কাফকা পুরস্কারটুকু হাতে তুলেই ক্ষান্ত হল চেক সরকার। অবশ্য একদিক থেকে এ তাঁর যোগ্য পুরস্কারও বটে। জীবৎকালে কাফকারও কি সঠিক কদর করতে পেরেছিল বিশ্বসাহিত্যের মঞ্চ! নোবেল পুরস্কার জোটেনি তাঁর কপালেও। ঠিক যেমন ভাবে নোবেলের স্বীকৃতিটুকু জুটল না মিলানের ভাগ্যেও। অন্তত তিনি তা দেখে যেতে পারলেন না। ৯৪-এ এসে থামতে হল তাঁকে। সময়ের কাছে এসে হাত গুটিয়ে নিতে হল চিরকালের মতো। অথচ সময়ের কষ্টিপাথরে তিনি থেকে গেলেন আধুনিকতম কথাকার হিসেবে। মিলান নিজেই জানিয়েছেন বারবার, ইউরোপীয় নবজাগরণ ও তার পরবর্তী সময়ের উত্তরাধিকার বয়ে বেড়িয়েছেন তিনি তাঁর সাহিত্যে। তবে বিংশ শতাব্দী উর্ত্তীর্ণ ছেলেমেয়েরা আগামী দিনেও কি আদৌ পড়বে মিলানকে? পড়লেও কেনই বা পড়বে?

"A single metaphor can give birth to love."

- এই শব্দবন্ধ, এই উচ্চারণ মিলানের। আর এটাই বোধহয় উত্তর। আর সেই জন্মের খোঁজেই বারাবার পাঠক ফিরে যাবেন লেখকের কাছে। প্রায় প্রতিটি সময়ে একদল ছেলেমেয়ে থাকবেই, যারা বছরের বছর ধরে চলে আসা সমাজের ভুল নীতি, ভুল রাস্তাকে ভেঙে গড়ে নিতে চাইবে এক নতুন সমাজ। প্রতিষ্ঠানের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করবে। তারা সকলেই কি গুলি-বোমা-বন্দুক নিয়ে রাস্তায় ঝাঁপিয়ে পড়বে সমাজ পাল্টাতে! না, কারণ বিপ্লব আসলে যতটা না সশস্ত্র, তার চেয়েও বেশি বৌদ্ধিক। ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখব, সমস্ত বিপ্লব, সমস্ত পাল্টে ফেলার শুরুটা আসলে কোথাও না কোথাও শুরু হয়েছে চেতনায়। আর তাঁরাই ফিরে যাবেন মিলানের দরজায়। আসলে সেই জায়গাটাতেই শিকড় চাড়িয়ে দিতে পেরেছেন মিলান। শ্লেষ, রসবোধের পাশাপাশি যেভাবে তাঁর সাহিত্যে দর্শন ও বৌদ্ধিক খেলা চলতে থাকে অবিরত, সেই স্বাদটুকু পেতেই পাঠক বারবার পৌঁছে যাবেন মিলানের কাছে।

আরও পড়ুন:বারবার নিজের স্মৃতির ময়নাতদন্ত, নোবেল জয়ী অ্যানি এরনোঁর সাহিত্য যে কারণে জনপ্রিয়

আমরা ক্রমশ এমন একটা সময়ের দিকে পৌঁছে যাচ্ছি, যেখানে সমস্তটাই বড় উচ্চকিত। চিৎকার না-করে কোনও কথাই আজকাল শোনানো কঠিন। সেই সময় দাঁড়িয়ে মিলান শেখান, কীভাবে কৌশলে পুরে দিতে হয় প্রতিবাদের স্বরটুকু। টের না পাইয়ে গিলিয়ে দিতে হয় বিপ্লবের বড়ি। সমাজ আসলে সেভাবেই বদলায়। আমরা মিলান পড়ব কারণ আমরা সকলেই মিলান হতে চাই কোথাও না কোথাও। কিংবা জীবনের কোনও না কোনও বিন্দুতে দাঁড়িয়ে আমরা সকলেই মিলান। আর তাঁর প্রতিটা উপন্যাস, কলমের প্রতিটি আঁচড় যেন আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। আমরা যা বলতে চাই অথচ বলতে পারি না, সেই কথাটাই অবলীলায় হাসতে হাসতে বলে দেন তিনি। জীবনের কোনও না কোনও পর্যায়ে এসে আমাদের দেখিয়ে দেওয়া হয়, কোনটা উচিত আর কোনটা নয়। সমাজ হাত ধরে চিনিয়ে দিতে চায় ঠিক ভুল। তখন রাগে ফেটে পড়তে পড়তে যার কাছে যাওয়া যায়, তিনিই বোধহয় মিলান। আর সেখানে দাঁড়িয়েই মিলান শোনান এক অন্যতর দর্শনের কথা।

"what can life be worth if the first rehearsal for life is life itself? That is why life is always like a sketch. No, "sketch" is not quite a word, because a sketch is an outline of something, the groundwork for a picture, whereas the sketch that is our life is a sketch for nothing, an outline with no picture."

আর জীবনের এই অন্যস্বরেই প্রাসঙ্গিক থেকে যান মিলান, তা তাঁকে প্রতিষ্ঠান প্রাধান্য দিক বা না-দিক।

 

More Articles