খারিজ করেন বিমানকর্মী হওয়ার প্রস্তাব, যেভাবে প্রথম মহিলা বাণিজ্যিক পাইলট হলেন দুর্বা

First Woman Commercial Pilot Of India: ছোট থেকেই উড়ন্ত প্লেনের প্রতি অদ্ভুত একটা টান অনুভব করতেন দুর্বা। হাঁ করে তাকিয়ে থাকতেন আকাশের দিকে। সেই স্বপ্ন বোনার শুরু।

অন্যের ইচ্ছার হাতে বন্দি হয়ে বাঁচার নামই যেন মেয়েমানুষ। অন্তত বছর বিশেক আগে পর্যন্ত তেমনটাই ছিল। দু-পা এগোতে বাধা। দু-পা পিছোতেও তাঁর বাড়ির পুরুষের অনুমতি চাই। নচেৎ সমাজের চোখে সে মহিলা বিদ্রোহিনী। আর যুগে যুগে এই সব বিদ্রোহিনীরাই ভেঙেছেন ট্যাবু, দেখিয়েছেন পথ।

মেয়ে মানেই শুধুমাত্র চুলোর সামনে বসে রান্না নয়, ঘর মোছা, বাসনমাজা নয় বা সন্তান মানুষ করাও নয়। পুরুষেরা যা যা করে, করতে পারে, সেই সমস্ত কাজ করার অনুমতি রয়েছে মেয়েদেরও। আর সেই অধিকারটুকু ছিনিয়ে নিতেই বহু রক্ত জল ঘাম খরচ হয়ে গিয়েছে। তবু তার পরেও হার মানেননি যাঁরা, আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন হারাননি যাঁরা, তাঁরাই নারীপ্রগতির মশালটাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন অনেকদূর।

আরও পড়ুন: দেশের প্রথম মহিলা সিনেমাওয়ালা, স্পর্ধার নাম ফতমা বেগম

আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন। মেঘের মধ্য়ে দিয়ে স্বপ্নযান উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটা আজও জলবৎতরল নয়। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে প্রয়োজন অদম্য সাহস আর প্রচুর পড়াশোনা। যে কাজটা আজকের দিনেও দারুণ কঠিন, আজ থেকে ষাট-সত্তর বছর আগে যে সহজ ছিল না, তা তো বলাই বাহুল্য। তবুর বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে একদিন আকাশ ছুঁয়েছিলেন তিনি।

তিনি দুর্বা ব্যানার্জি। পরিবারের প্রথম প্রজন্মের বিমানচালক। না, শুধু পরিবারেই নয়। গোটা ভারতবর্ষের প্রথম বাণিজ্যিক বিমানের চালক তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই সহজ ছিল না পথটা। কিন্তু আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নটা ছিল।

ছোট থেকেই উড়ন্ত প্লেনের প্রতি অদ্ভুত একটা টান অনুভব করতেন দুর্বা। হাঁ করে তাকিয়ে থাকতেন আকাশের দিকে। সেই স্বপ্ন বোনার শুরু। আকাশে উড়াল দেওয়ার স্বপ্ন। তার সঙ্গে প্রস্তুতি। ১৯৫৯ সালে এয়ার সার্ভে ইন্ডিয়ার হয়ে ডিসি-থ্রি পাইলট হিসেবে বিমান ওড়ান দুর্বা। পরে যোগ দেন ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের সঙ্গে।



বিমানচালক নাকি মহিলা! এ কথা ভাবাটাও সেসময় কম অবাক করা ছিল না। কিন্তু সেই ট্যাবুটাই ভাঙেন দুর্বা। বিমান চালানোর ব্যাপারে এতটাই নাছোড় ছিলেন তিনি, সোজা নাকি চলে গিয়েছিলেন সেসময়ের কেন্দ্রীয় বিমানমন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের দরজায়। সোজা গিয়ে বাণিজ্যিক পাইলট হওয়ার জন্য দরখাস্ত করে বসেন দুর্বা। সেসময় বিমানকর্মীর পদে বহাল করা হয়েছিল তাঁকে। আর সেই পদ মোটেই মনপসন্দ হয়নি তাঁর। এ কথাটা কতটা খাঁটি, কতটা জল মেশানো বলা কঠিন। তবে শেষপর্যন্ত বাণিজ্যিক বিমান চালানোর গুরুভার এসেছিল তাঁর কাঁধে।

তবে সেটুকুতেই থেমে থাকেননি দুর্বা। পরবর্তীকালে ই-27 টার্বোপ্রপ বিমানেও হাত পাকান দুর্বা। এটি ছিল একটি পোর্তুগিজ বিমান। এছাড়া তিনি চালিয়েছেন টর্নেডো এ-200, এয়ারবাস 300 এবং বোয়িং 737। এমনকী চালিয়েছেন জেট প্লেনও।

তখন সবে সবে ব্রিটিশ শাসন শেষ হয়েছে। সমাজ এগোলেও নারী স্বাধীনতার প্রশ্ন তখনও ছিল সেই তিমিরেই। তবু হার মানেননি দুর্বা। মন্ত্রীর দরবার করেছেন। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সমস্ত স্তরে। কেউ তাঁকে যাচাই করে নিয়েছেন। কেউ বা শুধু মেয়ে বলে ঠেলে রেখেছেন। তবে সেসবকে পাত্তা না দিয়েই উঠে এসেছেন এই বাঙালি কন্যা।

আরও পড়ুন: আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন! পথ দেখাচ্ছেন ভারতের প্রথম রূপান্তরকামী ড্রোন পাইলট

প্রায় ৯ হাজার ঘণ্টা একটানা বিমান ওড়ানোর রেকর্ড রয়েছে দুর্বার। যা সেসময় দাঁড়িয়ে খুব একটা সহজ ছিল না। লিঙ্গবৈষম্য তখনও ছিল, এখনও আছে। আজও মেয়েদের প্রতিপদে পদে এমন অনেক 'মেনে নেওয়া'-র সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। ঘরে-বাইরে, নানা ধরনের অনুশাসনের চাপে ছাইচাপা দিতে হয় স্বপ্ন। তবু আজও কেউ কেউ পাহাড় ডিঙানোর স্বপ্ন দেখেন। আর তাঁদেরই হিম্মত জোগান ক্যাপ্টেন দুর্বা ব্যানার্জির মতো আরও অনেক 'প্রথম'-রা। যাঁরা সমস্ত রক্ষণশীলতার বেড়ে ভেঙে পাল্টে দিয়েছিলেন সময়টাকে।

More Articles