মন্দির নির্মাণই কি দেশের কাজ, বাংলা যা ভাবছে
Ram Mandir: কট্টর হিন্দুত্বের পালটা দাওয়াই সফট হিন্দুত্ব—কী বলছেন বামেরা? এর নামই আচ্ছে দিন? উন্নয়ন মানে কি স্রেফ মন্দির? উৎকর্ষ মানে কি শুধু ভক্তি আর সমর্পণ? এই নিয়েই বাংলা যা ভাবছে অনুষ্ঠানে কথা বলেছিলেন বিশিষ্টজনেরা।
৬ ডিসেম্বর। প্রায় তিন দশক আগে এই দিনটিতেই বাবরি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঘটনাটা আকস্মিক নয়। এর একটা দেড় শতকের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। তারই পরিণতি বাবরি ধ্বংস। ১৯৯১ সালে চার ইতিহাসবিদ, আর এস শর্মা, এম আতহার আলি, ডি এন ঝা ও সুরজ ভান, একটা রিপোর্ট পেশ করেন। তাতে বলা হয়, অযোধ্যা রামের জন্মভূমি কোনওদিনই ছিল না। এমন কি ১৮৫০-এর আগে ভক্তদের মনেও অযোধ্যার বিশেষ গুরুত্ব ছিল না।
ইতিহাস জানাচ্ছে, ১৮৫৩ সালে বাবরি মসজিদ নিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত। প্রথমবা মসজিদে আক্রমন চালাল নির্মোহী আখড়ার অনুগামীরা। ঘটনা সামাল দিতে ইংরেজ সরকার মঞ্চে নামল। বাবরি মসজিদকে দুটো ভাগে ভাগ করে, তার একটায় হিন্দুদের উপাসনার অধিকার দেওয়া হল। এক অংশে মুসলমানেরা তাঁদের উপাসনা চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু উভয়পক্ষই নিমরাজি হয়ে এ ব্যবস্থা মেনে নিয়েছিল। ফলে, টুকটাক ঝামেলা লেগেই রইল। স্বাধীনতার আগে সেই হানাহানি চরমে উঠল। অসহিষ্ণুতায় হাওয়া দিল দেশ জোড়া সাম্প্রদায়িক হিংসা। তারই ধারাবাহিকতায়, স্বাধীনতার ঠিক দু বছর পর, বাবরি মসজিদের মূল গম্বুজের নিচে পাওয়া গেল রামলালার মূর্তি। অভিযোগ, ১৯৪৯-এর ২২ ডিসেম্বর, রাতের অন্ধকারে কিছু হিন্দু কট্টরপন্থী মসজিদের ভিতর ওই মূর্তি রেখে দেয়। ঘটনা সে সময় খতিয়ে দেখে না কেউ। নেহেরুর উদ্বেগে কান না দিয়ে মসজিদে তালা ঝুলিয়ে দেন গোবিন্দ বল্লভ পন্থ। মসজিদ তালাবন্ধ অবস্থায় ছিল প্রায় চার দশক। কিন্তু ১৯৮৬-তে ফৈজাবাদ আদালত তালা ভেঙে ফেলার রায় দিল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে ফেলা হল মসজিদের তালা। এবারও অভিযোগের তীর হিন্দুদের দিকে। আজকাল কমলনাথের মতো কংগ্রেসি নেতারা অবশ্য প্রচার করছেন তালা ভাঙার কৃতিত্ব রাজীব গান্ধীরই। সেই তালা ভেঙে ফেলার পর ১৪ ফেব্রুয়ারি কালা দিবস পালন করলেন মুসলিমরা। দিল্লি মেরঠ উত্তরপ্রদেশ জম্মু-কাশ্মীর—এইসব অঞ্চলে শুরু হল সাম্প্রদায়িক হানাহানি। দেশ জুড়ে তখন রামমন্দিরের হাওয়া। ১৯৮৭ সালে দূরদর্শনে রামায়ণ সম্প্রচারিত হতে শুর করে। রামমন্দিরের দাবি তোলে বিজেপি। এই দাবি সম্বল করে দু বছরেই দুটি থেকে পঁচাশিটি আসনে পৌঁছয় তারা। ১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর, রাজীব গান্ধীর অনুমতি নিয়ে মন্দিরের শিলান্যাস হয়। পরের বছর লালকৃষ্ণ আডবানীর রথযাত্রা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে গন্তব্য ছিল অযোধ্যা। কিন্তু তার আগেই বিহারের সমস্তিপুরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। নেপথ্যে ছিলেন লালুপ্রসাদ যাদব। ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর মহন্ত রামচন্দ্র পরমহংস এবং নিত্যগোপাল দাসের নেতৃত্বে প্রায় দু লক্ষাধিক করসেবক ভাঙচুর চালায় বাবরি মসজিদে। মসজিদের জমি নিয়ে মামলা শুরু হয়। প্রায় তিন দশক মামলা চলার পর সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রামমন্দিরের জন্যই বরাদ্দ হল মসজিদ চত্বরের সমস্ত জমি।সেই জমিতেই ২০২৪ সালের বাইশে জানুয়ারি রামমন্দির উদ্বোধন। এই হল রামমন্দিরের ইতিহাস।
২০১৪ সালে ইউপিএ সরকারের ব্যর্থতা ছিল বিজেপির তুরুপের তাস। ২০১৯-এ পুলওয়ামা, ঠিক তেমনই বুঝতে অসুবিধে হয় না, ২০২৪-এ সেই জায়গায় নিচ্ছে রামমন্দির। বিজেপির সাফল্য এই যে রামমন্দির শুধু অযোধ্যায় আটকে থাকেনি। 'হাম মন্দির ওঁহি বানায়েঙ্গে' এই তোপ ধ্বনি সংক্রমণের আকার নিয়েছে। কংগ্রেসের নেতা ভূপেশ বাগেলকে বলতে শোনা যায়, ভোটে জিতলে রামবনগমনপথ নির্মাণ করবেন তিনি। তেলেঙ্গানায় অমিত শাহ বলেন, ভোটে জিতলে তেলেঙ্গানাবাসীদের জন্যে বিনামূল্যে অযোধ্যার রামমন্দির দর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। কলকাতায় দুর্গা পুজোর থিম হয় রামমন্দির। সব রাজ্যই এই মন্দির দাওয়াইয়ে মজেছে। দীঘায় জগন্নাথ মন্দির হচ্ছে। পাঁচশো কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে ২০২২-২৩-এর বাজেটে। গঙ্গার ঘাটে গঙ্গারতি এই তালিকায় নতুন সংযোজন। পাড়ায় পাড়ায় হনুমান মন্দিরের বাড়বাড়ন্ত। রোটি-কাপড়া-মকানের আগে মানুষের চাই মন্দির। মন্দিরের শিলান্যাস হয়ে গিয়েছে আমাদের মগজেই। মন্দিরের আফিম খাওয়া মানুষ রোজগারের দাবি তুলবে না। জিডিপি নিয়ে মাথা ঘামাবে না। সংখ্যালঘু আক্রান্ত হলে তার কিছু যাবে আসবে না। বিদেশের মাটিতে দেশের মুখ চুন হলে হোক। সে জানে, তার কিছু থাকুক না থাকুক, মন্দির আছে। ভোটে জিততে পারলে মন্দির বানিয়ে দেবই—এ প্রতিশ্রুতি দিতে হয় সবাইকেই। কট্টর হিন্দুত্বের পালটা দাওয়াই সফট হিন্দুত্ব—কী বলছেন বামেরা? এর নামই আচ্ছে দিন? উন্নয়ন মানে কি স্রেফ মন্দির? উৎকর্ষ মানে কি শুধু ভক্তি আর সমর্পণ? এই নিয়েই বাংলা যা ভাবছে অনুষ্ঠানে কথা বলেছিলেন বিশিষ্টজনেরা। তাদের বক্তব্যের সার এখানে তুলে ধরা হলো।
আরও পড়ুন: মারা গিয়েছেন ২ হাজার মানুষ, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের আখ্যান শুনলে শিউরে উঠতে হয় আজও
সুমন ভট্টাচার্য
৯২-এর ৬ ডিসেম্বর দিনটা এখনও মনে আছে। বিভিন্ন বিরোধী দলেরা প্রতিবাদী মিছিল বের করেছিল। এমনকি বিভিন্ন কলেজও বের করেছে। ২০০২ অবধিও বাবরি ধ্বংসের উল্লেখ থাকত খবরের কাগজে। কিন্তু আজকের দিনে মসজিদটা যে ধ্বংস হয়েছিল, সেই কথাটাই আর শোনা যায় না। কেবল রামমন্দির গড়ার কথা। বয়ানটাকেই পালটে ফেলা গেছে। বিজেপি এই জায়গাটায় মারাত্মক সফল। ইতিহাস বড় বিচিত্র জিনিস। তুর্কীতে মিউজিয়ামকে ফের মসজিদ করে দেওয়া হয়েছে। এরদোয়ানের মতো শক্তিশালী নেতা ক্ষমতায় এলে তাঁরা এই উলটপুরাণ লেখেন। কামাল আতাতুর্কের তুর্কীকে আবার অতীতের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। যেখানে হিজাব পরা নিয়ে আন্দোলন হয়। নরেন্দ্র মোদীও ভারতে তেমনটাই করছেন। আডবাণীর পাশে আমরা যে মোদীকে দেখি, তিনি তখনও সিংহ হয়ে ওঠেননি।
মোদী কিন্তু এই বিপুল জনপ্রিয়তা গড়লেন সেই রামমন্দিরকে ভিত্তি করেই। মনে রাখা উচিত, গোধরা কাণ্ড যে হয়েছিল, তারাও সবাই অযোধ্যা থেকেই ফিরছিল। গত কয়েক দশক জুড়ে বিজেপির রাজনীতির যে প্রধান দুটি স্তম্ভ, তার একটি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ হলে, অপরটি রামমন্দির। কেন মুসলিম বিদ্বেষ? কারণ এটা সোজা পথ। জাতীয়তাবাদী উন্মাদনাকে স্বাধীন ভারতে ফের গড়ে তুলতে গেলে সবার আগে প্রয়োজন একজন শত্রুর, যাকে আপনি ধর্ম দিয়ে চেনেন না, অর্থাৎ যে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী। যাকে হারাতে পারলে পাওরলে আপনার ভয়ঙ্কর আত্মতুষ্টি হবে। একে ভিত্তি করেই পঁচাশিটি আসন থেকে তিন শতাধিক আসনে পৌঁছন বিজেপির। বিরোধীদের, বামেদের এটাই সবথেকে বড় ব্যর্থতা। তারা বুঝেই উঠতে পারল না একটা ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তি ক্ষমতায় এলে কী হতে পারে! সৈফুদ্দিন চৌধুরী যখন সিপিএম ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখনও দলে তাঁকে নিয়ে নোংরা মস্করা চলছে। লোকে বলাবলি করছে, বিজেপি কী এমন শত্রু! এদিকে আরএসএস মাটি কামড়ে ক্রমাগত কাজ করে চলেছে। আদিবাসীদের মধ্যে তারা কী কাজ করেছে, বনবাসীকল্যাণ পরিষদ কী কাজ করেছে তা তো ছত্তিশগড়ের ইলেকশনেই দেখা যাচ্ছে। অথচ এক দ্রৌপদী মূর্মূ রাষ্ট্রপতি হওয়া ছাড়া বিজেপি জমানায় আদিবাসীদের কী লাভ হয়েছ? কিচ্ছু না। বিজেপি একটা পুনরাবৃত্তির ইকোসিস্টেম তৈরি করেছে। যেখানে একই কথা জপ করে করে মানুষের মাথায় গেঁথে দেওয়া হয়। চারজন ইতিহাসবিদ যে তথ্য দিয়েছিলেন, সেই ইতিহাস একেবারে মুছে ফেলা সম্ভব হয়েছে। আশি কোটি মানুষকে বোঝানো সম্ভব হয়েছে ওখানে মাটির নিচে কিছু পাওয়া গেছে। অথচ তার কোনও ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। আজ ইতিহাস নিয়ে কোনও আলোচনাই হয় না। আজ কটা সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছে আজ বাবরি ধ্বংসের একত্রিশতম বর্ষ? কটা প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে? পুরো ইকোসিস্টেম বদলে দিয়েছে বিজেপি। এইখানেই তাদের সাফল্য।
সীমন্তিনী মুখোপাধ্যায়
লিঙ্গসাম্য বা অন্যান্য বিভিন্ন সূচকে আজ যেটা স্পষ্ট, যে ভারত বেশ খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকও প্রতি বছর এই কথাকেই সমর্থন করে। এই রিপোর্ট যখন বেরোয়, তখন বিজেপি প্রতিবার অস্বীকার করে, বিরোধীরা প্রতিবার বিজেপিকে দোষ দেন। এটুকুতেই তাঁদের কাজ শেষ। কিন্তু এই সূচকের হিসাব কি সত্যিই এতখানি সরল? তা কি খতিয়ে দেখার দাবি রাখে না? দেখলে আমাদের চোখে পড়বে, এর মধ্যে শিশু অপুষ্টি রয়েছে। তার তথ্য কোথা থেকে নেওয়া হয়? না, জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা থেকে। যা ভারত সরকারেরই রিপোর্ট। কিন্তু সেই সমীক্ষার রিপোর্ট যখন বেরোয়, তখন শিশু অপুষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কিন্তু কেউ আলোচনা করেন না। শাসক দলের এক প্রতিনিধিকে আমি বলেছিলাম, গুজরাট মডেল খুব ভালো, মেনে নিলাম। কিন্তু আসুন, একটু গুজরাটের শিশু অপুষ্টি নিয়ে কথা বলি। ভদ্রলোক প্রচণ্ড রেগে চিৎকার করে উঠলেন, আপনারা শুধু ওই নিয়েই পড়ে থাকুন। মানে শিশু অপুষ্টির গুরুত্ব নিয়ে তাঁর কোনও ধারণাই নেই! তাহলে কীসের উন্নয়ন?
মন্দিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে মহিলারা একটু বাইরে বেরোনোর সুযোগ পান। বিজেপির ম্যানিফেস্টো অত্যন্ত পিতৃতান্ত্রিক ঠিকই, কিন্তু লাডলিবেন জাতীয় প্রকল্প থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট যে গত কয়েক দশকে ভারতীয় রাজনীতিতে মহিলাদের একটা আলাদা গুরুত্ব তৈরি হয়েছে। সেটা অস্বীকার করতে পারছে না কেউই। মহিলা ভোট যে পরিবারের ভোটের থেকে আলাদা-এই জায়গাটা তৈরি হয়ে গিয়েছে। গরীব মানুষের কাছে টাকা গেলে অর্থনীতির কিন্তু একটা লাভ হয়। আর এতে তারা খানিকটা হলেও ক্ষমতায়ীত হচ্ছে। শিশু পুষ্টিতে ব্যবহৃত হচ্ছে টাকাগুলো। ফলে সেটা একটা আশার দিক। তাই নিয়ে বিরোধীদের সমস্যা থাকলে বলতে হয়, যে তাদের ধারণা অত্যন্ত অস্বচ্ছ। এত অস্বচ্ছ ধারণা নিয়ে বিজেপির মতো সংগঠিত শক্তির সঙ্গে লড়া যায় না।
সম্বিত পাল
২০০৮-২০০৯ সালে মানুষ আলোচনা করছিল শিল্প হবে? না হবে না? কর্মসংস্থান হবে কি? শিল্প ভালো হল না খারাপ হল? এক দশকে সেটা পালটে গিয়ে দাঁড়াল, হিন্দু ভোটটা কোনদিকে যাবে, আদিবাসী ভোটটা কোনদিকে বা মুসলমান ভোটটা কে পাবে-এই জাতীয় প্রশ্নে! এই যে পরিচয়ের রাজনীতির দিকে হাওয়াটা ঘুরে গেল, তার ফলে আবেগ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াল। আরএসএস দীর্ঘদিন কাজ করে এই আবেগ গড়ার কাজ করে গিয়েছে। ফলে ভারতে বিজেপি একটা শক্ত ভিত্তি পেয়ে গেল। মোদী খুব সুচারুভাবে রামমন্দির, হিন্দুত্ব এইগুলি রাজনীতির মধ্যে নিয়ে এসেছেন। ফলে তথাকথিত শিক্ষিতদের বেশিরভাগই আজ যুক্তিপূর্ণ ভাবে এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে নারাজ। কারণ, আবেগে আঘাত দেওয়া হবে। এই জায়গাটা আনা গিয়েছে।
শুধু ভোটগণনার পাটিগণিতে ভোট পাওয়া যায় না। পালটা বয়ান তৈরি না করতে পারলে বিজেপি-র বিরুদ্ধে জেতা যাবে না।
আরও পড়ুন:যোগী বলছেন রাষ্ট্রীয় ধর্ম সনাতন, আদৌ কোনো রাষ্ট্রধর্ম আছে? কী বলছে সংবিধান?
অমিতাভ গুপ্ত
বিজেপি মন্দির তৈরি করা শুরু করেছে বটে, কিন্তু এখন সব দলই করছে। সব দল সংখ্যাগুরু তোষণ করছে। কিন্তু এর আরও একটা আঙ্গিক রয়েছে। সেটা উন্নয়নের আঙ্গিক। একটা মন্দির তৈরি করতে কত টাকা খরচ হয়? সেই অঙ্ক উন্নয়নের খাতে বরাদ্দ টাকার মোট অঙ্কের কাছে কিছুই নয়। ফলে মন্দির তৈরি করতে গিয়ে উন্নয়নের তেমন কোনও ক্ষতি হচ্ছে না। তবে স্বাধীন ভারতে ইউপিএ সরকার উন্নয়নের যে ধারণা নিয়ে এসেছিল, চাকরি, অন্ন, বাসস্থান সবটা মিলিয়ে তা ছিল সাধারণ মানুষের অধিকার। কিন্তু এই দশ বছরে নরেন্দ্র মোদী অত্যন্ত সফলভাবে উন্নয়নকে পরিণত করেছেন রাষ্ট্রের দয়ায়। তিনি যাই করুন, রাস্তা, পানীয় জল, জ্বালানি-সবটাকেই দিওয়ালির উপহার, বা অমুক সময়ের উপহার বলে উল্লেখ করেন। অর্থাৎ তাঁর রাজ দরবারে বাকিরা বাঁচেন তাঁর বদান্যতায়। বিজেপি মানুষের বুনিয়াদী দাবি মেটানোর রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়, বরং ধারকর্জ করে চালাক সাধারণ মানুষ, তাতে নাকি অর্থনীতির লাভ! অর্থাৎ উন্নয়নের আদিকল্পটি পালটে গিয়েছে। এর সঙ্গে দুটি স্লোগান, ভারত মাতা কি জয় এবং জয় শ্রীরাম। মানুষকে বোঝানো গিয়েছে রাষ্ট্রে এবং হিন্দুরাজ্যে কোনও তফাৎ নেই। অর্থাৎ মন্দির নির্মাণ দেশেরই কাজ। ফলে এটা আর শুধু সংখ্যাগুরু তোষণের কাজ নয়, বাকি দলেরাও এই কাজ করছেন, কারণ তাঁরা জানেন, একে দেশের উন্নয়ন হিসেবেই দেখা হবে। উন্নয়নের সামগ্রিক ধারনা এভাবে বদলে দিয়েছে বিজেপি। তাই অলিতে গলিতে এই মন্দিরের রাজনীতি।