গাজায় গণহত্যার দলিল হাতে আন্তর্জাতিক আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার সওয়াল, ন্যায়বিচার পাবে প্যালেস্টাইন?

Israel's Genocidal Intent: দক্ষিণ আফ্রিকার বক্তব্য, “ইজরায়েল যেভাবে ক্রমাগত সেনা হামলা করে চলেছে, তা ইজরায়েলের গণহত্যার অভিপ্রায়টিকেই স্পষ্টতর করে তোলে।"

গাজায় ইজরায়েলের লাগাতার আক্রমণকে 'ইচ্ছাকৃত গণহত্যা' বলে উল্লেখ করল দক্ষিণ আফ্রিকা। সম্প্রতি, দক্ষিণ আফ্রিকার উচ্চ আদালতের উকিল ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের (আইসিজে) ১৭ জন বিচারপতির সামনে এই মন্তব্য করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার তরফে তাঁর বক্তব্য, “ইজরায়েল যেভাবে ক্রমাগত সেনা হামলা করে চলেছে, তা ইজরায়েলের গণহত্যার অভিপ্রায়টিকেই স্পষ্টতর করে তোলে। গাজাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিতে চায় ইজরায়েল। এবং এই পরিকল্পনার নেপথ্যে রয়েছেন ইজরায়েলের প্রভাবশালী উচ্চ নেতৃত্ব।"

দক্ষিণ আফ্রিকার তরফে আদিলা হাসিম গত বৃহস্পতিবার আদালতে বলেন, “প্রতিদিন অগণিত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। সম্পত্তি ধ্বংস হচ্ছে। মানবতার অপমান হয়ে চলেছে নিরন্তর। ফিলিস্তিনি মানুষদের আত্মসম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই যন্ত্রণা থেকে কেবলমাত্র এই আদালতের নির্দেশই জনগণকে মুক্ত করতে পারে।"

আদালতে প্রমাণ দাখিল করেন দক্ষিণ আফ্রিকার উকিলেরা। আইসিজেতে দক্ষিণ আফ্রিকা যে প্রমাণপত্র জমা দিয়েছে তাতে দাবি করা হয়েছে যে ইজরায়েলের যে কার্যক্রম তার সঙ্গে গণহত্যার বৈশিষ্ট্যের মিল আছে কারণ তারা ফিলিস্তিনিদের জাতীয়, জাতিগত এবং নৃগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। ইজরায়েল গাজায় যা করেছে এবং যা করতে চেয়েছে─উভয় প্রেক্ষিতেই এ'মন্তব্য দক্ষিণ আফ্রিকার। অর্থাৎ ইজরায়েল এখন লাগাতার বিমান হামলা চালাচ্ছে। অথচ গাজার অসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেনি তারা। এই মামলায় গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ্যে ইসরায়েল যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে সেটিকে তুলে ধরা হয়েছে ‘গণহত্যার অভিপ্রায়ে’র প্রমাণ হিসেবে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর করা কিছু মন্তব্যও আছে।

আরও পড়ুন: ইজরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে ‘গণহত্যা’র নালিশ! কবে ফিরবে গাজায় শান্তি?

আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় জাতি, বর্ণ বা নৃগোষ্ঠী বা ধর্মীয় কোনো সম্প্রদায়কে আংশিক বা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে পরিচালিত একটি বা একাধিক কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এ'সব কর্মকাণ্ডের মধ্যে আছে, কোনো গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা বা শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি, কোনো গোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিক ধ্বংস করা, কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর মধ্যে নতুন জন্ম প্রতিরোধের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া এবং জোর করে স্থানীয় শিশুদের অন্যত্র স্থানান্তরিত করা। দক্ষিণ আফ্রিকা জানিয়েছে, গত তিন মাসে ২৩ হাজার ২১০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইজরায়েলি সেনা। যার ৭০ শতাংশ সম্ভবত মহিলা ও শিশু। এত বেশি পরিমাণ মানুষ মারা গিয়েছেন, যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের দেহ শনাক্ত করা যায়নি। ৭ অক্টোবর থেকে প্রতি সপ্তাহে ৬০০০টি করে বোমা বর্ষন করেছে ইজরায়েল। প্যালেস্টাইনের 'নিরাপদ' চিহ্নিত অংশে, অন্তত ২০০ বার ২০০০ পাউন্ড বোমা ফেলেছে ইজরায়েল। এমনকি উদ্বাস্তু ক্যাম্পেও বোমা ফেলা হয়েছে।

যদিও এই অভিযোগের উত্তরে জার্মান সরকার জানিয়েছে, তারা এই 'গণহত্যা' বা 'জেনোসাইডে'র অভিযোগটি অস্বীকার করছে। এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাদের বক্তব্য, জার্মানির ইতিহাসে মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ হয়েছিল, সেই 'শোয়াহ' বা 'হলোকাস্ট'কেই সাধারণত 'জেনোসাইড' বলে চিহ্নিত করে পৃথিবী। এই ঘৃণ্য ঘটনাকে রুখতেই জেনোসাইড কনভেনশন হয়েছিল। তাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের তীব্র বিরোধিতা করছে তারা।

ইজরায়েলের দাবি, তথ্যবিকৃত করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। জাতি সংঘের সর্বোচ্চ আদালত আইসিজের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদন, গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হোক ইজরায়েলকে। এইদিন আদালত থেকে একটি লাইভ ফিড স্ট্রিম করা হয়। আদালতের বাইরের থেকে শুনানির দৃশ্য দেখতে দেখতে ফিলিস্তিনি পতাকা নাড়েন হাজার হাজার সমর্থক। ব্যানারে দেখা যায় নেলসন ম্যান্ডেলার ছবি। এইদিন আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকা জানায়, ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনের নিয়ম লঙ্ঘন করছে ইজরায়েল।

ব্রিটেনের তরফে জানানো হয়েছে, ব্রিটিশ সরকার মনে করে আন্তর্জাতিক নিয়মের অধীনে আত্মরক্ষার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে ইজরায়েলের। দক্ষিণ আফ্রিকার এই মামলাকে সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় এবং মিথ্যে বলেই মনে করছে তারা। গণহত্যার অভিযোগে আইসিজে-র রায় কেবল মতামত মাত্র। সেই রায়ের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে সমস্ত বিশ্ব। তবে চূড়ান্ত রায় প্রকাশে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ন্যায় কি পাবে প্যালেস্টাইন? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

More Articles