হামলাকারীরা ভারতের নাগরিক? সরবেড়িয়া কাণ্ডে বিস্ফোরক অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

Justice Abhijit Ganguly: সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “রাজ্যে কোনও আইনশৃঙ্খলা আছে বলে আপনার মনে হয়? তদন্ত আটকানোর জন্য এর আগে মানুষের টাকা খরচ করা হচ্ছিল মামলা মোকদ্দমা করে।"

গত শুক্রবার তল্লাশি করতে গিয়ে সন্দেশখালির সরবেড়িয়াতে আক্রান্ত হন ইডি আধিকারিকেরা। তিনজন আধিকারিক গুরুতর আহত। গাড়ি ভাঙচুর করে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে তাঁদের ফোন, ল্যাপটপ ও অন্যান্য সামগ্রী। রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে গিয়ে একই অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে বনগাঁতেও। ঘটনা কেন্দ্র করে নিন্দার ঝড় উঠেছে দেশের সর্বত্র। নড়েচড়ে বসেছে দিল্লি। ইতিমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনা প্রসঙ্গে বারবার উঠে আসছে অধুনা জেলবন্দি তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম। শাহজাহান শেখ এবং শঙ্কর আঢ্য─দুজনেই তার ঘনিষ্ঠ। সারা বাংলার বিশিষ্ট জনেরা এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারই মধ্যে এই হামলা নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “রাজ্যে কোনও আইনশৃঙ্খলা আছে বলে আপনার মনে হয়? তদন্ত আটকানোর জন্য এর আগে মানুষের টাকা খরচ করা হচ্ছিল মামলা মোকদ্দমা করে। কোনও অন্যায় বা দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিলেই তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে চলে যাওয়া হচ্ছিল। সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার অধিকার অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু কী করার জন্য যাওয়া হচ্ছে? আমি তো আজকে জানতে চাইব, মোট কত টাকা খরচ হল! এই তদন্ত আটকানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কত কোটি টাকা খরচ করল? আশা করি, যাঁকে খুঁজতে গিয়েছিল সেই শেখ শাহজাহান রাত ১২ টার মধ্যে ইডি অফিসে এসে ধরা দেবেন। আশা করব, তাঁর যাঁরা নেতা আছেন, তাঁরাই সেই নির্দেশ দেবেন।”

এর আগেও রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি নিয়ে বারবার সোচ্চার হতে দেখা গেছে তাঁকে। তিনিই সেই দুর্নীতি নিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপর থেকে বারবার বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। অথচ ঝড়ের মুখে তিনি অবিচল। ইডি আধিকারিকদের উপর আক্রমণের পর ওইদিন উচ্চ আদালতে অন্য এক মামলার শুনানি চলাকালীন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি বলেন, "আপনাদের সঙ্গে বন্দুক, লাঠি থাকে না? চালাতে পারেন না?”

আরও পড়ুন: দক্ষিণ ২৪ পরগণায় ইডির উপর হামলা: নেপথ্যে কোন দুইজন?

রেশন দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতেই তৃণমূল নেতা শাহজাহান সেখের বাড়িতে শুক্রবার তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল ইডি আধিকারিকদের দলটি। সকালে তাঁরা খবর পেয়েছিলেন শাহজাহান বাড়িতেই রয়েছে। কিন্তু বারবার ডাকা সত্ত্বেও দরজা খোলে না শাহজাহান। বাধ্য হয়ে দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন তাঁরা। আর তখনই স্থানীয় মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাঁদের। আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, প্রায় ৮০০-১০০০ জন হামলা চালায় তাঁদের উপরে। গাড়ি ভেঙে ছিনিয়ে নেয় জিনিসপত্র, ল্যাপটপ। ইডি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগানও তোলে তারা। এই ঘটনায় এ'পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

অন্যদিকে প্রায় একই রকমের ঘটনা ঘটেছে বনগাঁতেও। প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যকে গ্রেফতারের সময় জনতার রোষের মুখে পড়েন আধিকারিকেরা। রাত সাড়ে বারোটায় শঙ্করকে গ্রেফতার করেন আধিকারিকেরা। সেখানেই বাধার মুখে পড়তে হয় তাদের। তদন্তকারীদের উদ্দেশ্যে গালিগালাজ চলে। পথ আটকানোর চেষ্টা করেন মহিলারা। ইট পাটকেলও ছোঁড়া হয় ইডির গাড়িতে।

এ'দিন এজলাসে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “কেন এখনও রাজ্যপাল ঘোষণা করছেন না যে, রাজ্যের সাংবিধানিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে? যদি তদন্তকারীরাই মার খান, তাহলে তদন্ত হবে কী করে?” রাতেও সেই বক্তব্যকেই সমর্থন করলেন তিনি। বললেন, "দুপুরে যা বলেছি, তা সচেতনভাবে বলেছি। আমি বিশ্বাস করি, পশ্চিমবঙ্গের সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে।” হামলাকারীদের আসল পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শুক্রবার রাতে সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে আহত ইডি আধিকারিকদের দেখতে গিয়ে তিনি বলেন, "যাদের লেলিয়ে দেওয়া হল, তারা ভারতবর্ষের নাগরিক তো? অন্য কোনও জায়গার না তো? তারা নৌকা করে আসেনি তো? সঠিক তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে কারা কাকে আশ্রয় এ'সব করছে।” এই মন্তব্য বসিরহাটে বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেই মনে করছেন কেউ কেউ।

More Articles