দক্ষিণ ২৪ পরগণায় ইডির উপর হামলা: নেপথ্যে কোন দুইজন?

Attack on ED: গত শুক্রবার সকালে সন্দেশখালির সরবেড়িয়াতে ইডি অফিসারেরা তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল। সেখানেই হামলা হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী ও আধিকারিকদের উপরে। ভাঙচুর চলে আধিকারিকদের গাড়িতেও। আহত হন তিনজন আধিকারিক।

গত শুক্রবার সকালে সন্দেশখালির সরবেড়িয়াতে ইডি অফিসারেরা তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল। সেখানেই হামলা হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী ও আধিকারিকদের উপরে। ভাঙচুর চলে আধিকারিকদের গাড়িতেও। আহত হন তিনজন আধিকারিক। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সারা দেশে।

১৮টি জায়গায় তল্লাশি চালানোর পরিকল্পনা ছিল ইডি-র। রেশন দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতেই তৃণমূল নেতা শাহজাহান সেখের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল আধিকারিকদের দলটি। সেখানেই স্থানীয় মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়েন তাঁরা। আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, প্রায় ৮০০-১০০০ জন হামলা চালায় তাঁদের উপরে। গাড়ি ভেঙে ছিনিয়ে নেয় জিনিসপত্র, ল্যাপটপ। ইডি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগানও তোলে তারা। এই ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শাহজাহান শেখ

এই ঘটনার নেপথ্যে যে শাহজাহান শেখ, তাঁর পরিচয় কী? শাহজাহানের উত্থান কাহিনির শুরু বাম আমলে। মামা মোসলেম শেখ ছিল সরবেড়িয়ার পঞ্চায়েত প্রধান, তৎকালীন সিপিএমের বেশ প্রভাবশালী নেতা। শুরুতে সন্দেশখালি-সরবেড়িয়া রুটে ট্রেকারের পাদানিতে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের থেকে ভাড়া সংগ্রহ করত শাহজাহান। পরে মামার আশীর্বাদে একটা মাছের ভেড়ি হয়। প্রথম স্বচ্ছল জীবন যাপনের এই শুরু। হাতে আসছিল কাঁচা টাকা। বাম জমানার শেষদিকে মোসলেম প্রভূত ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে। উত্তর ২৪ পরগণা-র বারাসাতে ভেড়ি দেখতেন সিপিএমের নেতা মজিদ মাস্টার, ঠিক তেমনই দক্ষিণ ২৪ পরগণায় মোসলেম-শাহজাহান জুটি ভেড়ি নিয়ন্ত্রণ করত। সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক অধুনা প্রয়াত অবনী রায়ের সঙ্গেও দহরম মহরম ছিল শাহজাহানের। তবে ২০১০ থেকেই সিপিএমের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে শুরু করে সে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগেই স্থানীয় মানুষের কাছে শাহজাহান জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছিল। শুধু ব্যবসা নয়, পাশাপাশি কার কী প্রয়োজন, কখন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে─সবটাই দেখত সে। ফলে মানুষের কাছে ধীরে ধীরে মুসকিল আসান হয়ে উঠেছিল। ২০১৩ সালে হাওয়া বুঝে তৃণমূলে চলে এল শাহজাহান।

আরও পড়ুন: তৃণমূলের বিরুদ্ধে এত দুর্নীতির অভিযোগ, তাও ইডি-সিবিআই তদন্ত শেষ করে না কেন?

মোসলেম থেকে গিয়েছিল পুরনো দলেই। কিন্তু তাতে বাধ সাধল ভাগ্নে। মোশলেমের তৈরি ক্যাডারদের ধীরে ধীরে তৃণমূলে আনতে শুরু করল সে। শেষে উপায়ন্তর না দেখে তৃণমূলে নাম লেখাতে হল মোসলেমকেও। তৃণমূলে এলেও ভেড়ির নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি শাহজাহান। উত্তর ২৪ পরগণার সন্দেশখালি-১ মহকুমার সভাপতি সে। পাশাপাশি জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষও।

shahjahan

                                                                                  শাহজাহান সেখ

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, শাহজাহানের মাথার উপর অধুনা জেলবন্দি তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাত ছিল। মোসলেমের মতো প্রতিদ্বন্দীকে ঠেকাতে জ্যোতিপ্রিয় ঘরশত্রু বিভীষণ তৈরি করেছিল শাহজাহানকেই। স্থানীয় মানুষদের মধ্যে শাহজাহানের জনপ্রিয়তা যে এখনও কমেনি, তাই আরেকবার প্রমাণিত হল। ইডির উপর হামলার ঘটনায় তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, 'এই ঘটনা নিঃসন্দেহে খুবই নিন্দনীয়। তবে এই ঘটনার পেছনে প্ররোচনা রয়েছে। যেভাবে যেখানে সেখানে কেন্দ্রীয় এজেন্সিদের লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষ ক্ষেপে যাচ্ছেন। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।'

শঙ্কর আঢ্য

অন্যদিকে প্রায় একই রকমের ঘটনা ঘটেছে বনগাঁ-তে। প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যকে গ্রেফতারের সময় জনতার রোষের মুখে পড়েন আধিকারিকেরা। রাত সাড়ে বারোটায় শঙ্করকে গ্রেফতার করেন আধিকারিকেরা। সেখানেই বাধার মুখে পড়তে হয় তাদের। তদন্তকারীদের উদ্দেশ্যে গালিগালাজ চলে। পথ আটকানোর চেষ্টা করেন মহিলারা। ইট পাটকেলও ছোঁড়া হয় ইডির গাড়িতে।

শঙ্কর আঢ্যের পরিচয় কী? দু'টি প্রসঙ্গেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম উঠে আসছে। জ্যোতিপ্রিয়র ঘনিষ্ঠ ছিল শঙ্করও। রেশন দুর্নীতির অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধেও। শঙ্করের বাবা ছিলেন কংগ্রেসমনস্ক। তবে শঙ্কর এলাকার দাপুটে ব্যবসায়ী। নিজের হাতে ব্যবসা তৈরি করেছে সে। অবশ্য নিজের এলাকায় 'ডাকু' হিসেবেই পরিচিতি ছিল তার। শঙ্করের স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্য বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান। শংকরের গ্রেফতারির পরেই তাঁর স্ত্রী চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন।

shankar

                                                                                 শঙ্কর আঢ্য

বর্তমান পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন, 'বিষয়টি বিচারাধীন। তদন্তে সত্যিটা অবশ্যই সামনে আসবে।' শুক্রবার রাতেই শংকরকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয় সিজিও কমপ্লেক্সে। ওইদিন শংকরের শ্বশুরবাড়ি এবং ভাইয়ের আইসক্রিম কারখানাতেও অভিযান চালায় ইডি। তবে শাহজাহান শেখ এখনও পলাতক। তাকে ধরে উঠতে পারেনি পুলিশ।

More Articles