ভগৎ সিংয়ের ভক্ত! সংসদে ধোঁয়া হামলার মাস্টারমাইন্ড কে এই কলকাতার শিক্ষক?

Parliament Security Breach : বিহারের বাসিন্দা হলেও কলকাতাতেই কর্মরত ললিত। স্বাধীনতা সংগ্রামী শহিদ ভগৎ সিং ললিতে অনুপ্রেরণা।

সংসদের চোখ ধাঁধানো নিরাপত্তাকে হেলায় ডিঙিয়ে সাংসদ-স্পিকারদের উপস্থিতিতে হলুদ গ্যাসের ক্যানেস্তারা নিয়ে ঢুকে পড়েছিল মানুষ। সংসদ হামলার পুরনো স্মৃতি ও আতঙ্ক এক লহমার জন্য থমকে দিয়েছিল দেশকে। আর এই গোটা ঘটনা, এই নিরাপত্তা লঙ্ঘনের পিছনের মূল যে মাথা, সেই ললিত ঝা আত্মসমর্পণ করেছেন। সোজা কর্তব্য পথে থানায় গিয়ে (দিল্লির কেন্দ্রস্থলে বুলেভার্ডটির নামই কর্তব্য পথ বা 'পাথ অফ ডিউটি') আত্মসমর্পণ করেছেন এই ব্যক্তি। আপাতত গ্রেফতার করে ললিতকে নয়াদিল্লি জেলা পুলিশ স্পেশাল সেলের কাছে পাঠিয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে, এই ললিত ঝা আসলে এক শিক্ষক, কলকাতার মানুষ!

প্রায় দুই দিন পলাতক থাকার পর দিল্লিতেই গ্রেফতার করা হয় কলকাতার এই শিক্ষককে। বিহারের বাসিন্দা হলেও কলকাতাতেই কর্মরত ললিত। স্বাধীনতা সংগ্রামী শহিদ ভগৎ সিং ললিতে অনুপ্রেরণা। পুলিশ বলছে, ললিতের দাবি, সে বাসে করে নিমরানা হয়ে রাজস্থানের নাগৌরে গিয়েছিল। এখানেই তাকে শেষ দেখা যায়। এই নাগৌরে দুই বন্ধুর সঙ্গে একটি হোটেলে উঠেছিলেন তিনি। পরে পুলিশ তাকে খুঁজছে বুঝতে পেরে তিনি ফিরে আসেন। পুলিশ স্টেশনে আত্মসমর্পণে যখন তিনি আসেন তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন মহেশ নামে আরেকজন।

আরও পড়ুন- মোদীর ‘সুরক্ষিত’ লোকসভায় ঢুকে পড়ল হানাদার! কী তাদের পরিচয়?

সংসদে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের জন্য চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল আগে। দুই ব্যক্তির নাম সাগর এবং মনোরঞ্জন। এই সাগর আর মনোরঞ্জনই ধোঁয়ার বোমগুলি নিয়ে সংসদের মধ্যে ঢোকে এবং লোকসভার কার্যক্রম চলাকালীন গ্যাসের বোমা ফাটায়। অন্য দু'জন, নীলম দেবী এবং অমল শিন্ডে, সংসদে প্রবেশের পাস পাননি। ধরা পড়ার আগে সংসদ ভবনের বাইরেই বিক্ষোভ করেছিলেন তারা, ধোঁয়ার ক্যানেস্টার নেড়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

ললিত ঝা নিজেও পাস পাননি, তিনি ঘটনাটি নিজের মোবাইলে রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেন। ললিত কলকাতাই এক সহযোগীকেও এই ঘটনার রেকর্ডটি পাঠান। ওই ব্যক্তির নাম নীলাক্ষ আইচ। নীলাক্ষ আবার একটি অলাভজনক সংস্থা চালান, সেই সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ললিত। জানা গিয়েছে, এই অভূতপূর্ব 'ধোঁয়া প্রতিবাদ'-এর উদ্দেশ্য ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, কৃষকদের দুর্দশা এবং মণিপুরের পরিস্থিতি তুলে ধরা। বিক্ষোভকারীরা চেয়েছিল দেশের সংসদে এই বিষয়ে আলোচনা হোক। তাই দৃষ্টি আকর্ষণ করার উপায় হিসেবেই এই হইচই। দলটি 'ফ্যানস অফ ভগত সিং' নামে একটি ফেসবুক পেজেরও সদস্য।

আরও পড়ুন- নতুন পার্লামেন্ট গড়তে ৮৩৬ কোটি! পুরনো সংসদ ভবন তৈরি হয়েছিল কত টাকায়?

মানুষ হিসেবে ললিত ঝা নিতান্তই শান্ত, স্থানীয় ছাত্রদের মাস্টামশাই। কয়েক বছর আগেই কলকাতার বড়বাজারে আসেন তিনি, একাই। জীবনযাপন নিতান্ত সাদামাটা। হঠাৎ করে দুই বছর আগে এই এলাকা ছেড়ে চলে যান তিনি।

তদন্তকারীরা বলছেন, এই ধোঁয়া হামলার চক্রান্তের পিছনে কোনও সংগঠিত সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী নেই বলেই মনে হচ্ছে। তবে বিষয়টির আরও তদন্ত প্রয়োজন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ইউএপিএ এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা হয়েছে ইতিমধ্যেই।

More Articles