সব অভিযোগ মনগড়া! 'উপহারের বিনিময়ে প্রশ্ন' বিতর্কে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন মহুয়া?

Mahua Maitra, Cash For Query Row: টাকার বিনিময়ে আদানি-মোদিকে জড়িয়ে প্রশ্ন করা তো দূর, তিনি যাতে সংসদে এ নিয়ে প্রশ্ন না করতে পারেন, সে জন্যই তাঁর মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে বলে বিস্ফোরক দাবি করেছেন মহুয়া।

সংসদে বিরোধীদের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করার জন্য খ্যাতি ছিল তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের। তবে সেই গুণের মাশুল যে এই ভাবে গুনতে হতে পারে তা কে-ই বা জানত। আদানির সঙ্গে মোদিকে জড়িয়ে প্রশ্ন করার জন্য বিপাকে পড়েছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ। দুবাইয়ের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নিয়েই নাকি এমন প্রশ্ন করেছেন মহুয়া, এমন অভিযোগ তুলে লোকসভার স্পিকারের দ্বারস্থ হন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। একই অভিযোগ আইনজীবী জয় অনন্ত দেহাদ্রাইয়েরও। মহুয়ার বিরুদ্ধে ওঠা ‘টাকা ও উপহারের বিনিময়ে প্রশ্ন’-এর এই মারাত্মক অভিযোগ যায় লোকসভার এথিক্স কমিটিতে।

বৃহস্পতিবার এথিক্স কমিটির বৈঠকে শোনা হয়েছিল দুই অভিযোগকারীর বক্তব্যই। তাঁরা দুজনেই অভিযোগ করেছেন দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে উপহার-নগদ নেন তৃণমূল সাংসদ, আর তার পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও আদানিকে জড়িয়ে লোকসভায় প্রশ্ন করেন মহুয়া মৈত্র। ইতিমধ্যে আবার দুবাইয়ের ওই ব্যবসায়ী দর্শন, যিনি কিনা আবার মহুয়ার বন্ধুও বটে। তিনি হলফনামা দিয়ে সমস্ত অভিযোগ স্বীকারও করে নিয়েছেন। যদিও সেই সমস্ত অভিযোগই উড়িয়েছেন মহুয়া। সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে ধরে ধরে প্রায় প্রতিটি অভিযোগকেই খণ্ডন করেছেন তৃণমূল সাংসদ।

বরাবরই বিতর্ক তাড়া করে ফিরেছে মহুয়াকে। কখনও কালী বিতর্ক তো, কখনও আবার অন্য কিছু। তবে এবার তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা কার্যত বিস্ফোরক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি দল। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি নিয়ে মুখ খোলেন মহুয়া। নিশিকান্ত ও জয়, দুজনেই অভিযোগ করেছিলেন, দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে উপহার-নগদ নিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ। সেই বিস্ফোরক অভিযোহ সম্পর্কে মহুয়া জানান, বছর কয়েক আগে জন্মদিন উপলক্ষে মহুয়াকে বিদেশি একটি প্রসাধনী সংস্থার আইশ্যাডো ও লিপস্টিক উপহার দিয়েছিলেন দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানি। দুবাই বিমানবন্দর থেকে কেনা হয়েছিল ওই সামগ্রী, তা ছিল ডিউটি ফ্রি অর্থাৎ নিঃশুল্ক। মহুয়া জানিয়েছেন, দর্শনের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব অনেকদিনের। মুম্বই গেলে দর্শন বন্ধু হিসাবে বিমানবন্দরে তাঁর জন্য গাড়ি পাঠাতেন। ভবিষ্যতেও মুম্বই গেলে তিনি বন্ধু দর্শনকে তা জানাবেন বলেই জানিয়েছেন মহুয়া।

আরও পড়ুন: “গোটা দেশকে টুপি পরিয়েছে ও”, আদানি ইস্যুতে রণংদেহী মহুয়া মৈত্র, আদৌ কি সঠিক সেই বক্তব্য?

মহুয়ার বিরুদ্ধে নগদ নেওয়ার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সর্বৈব ভাবে মিথ্যা বলেই জানিয়েছেন মহুয়া। তিনি দর্শনের থেকে ২ কোটি টাকা নিয়েছেন বলে দাবি অভিযোগকারীদের। অথচ দর্শনের হলফনামাতেও ওই টাকার উল্লেখ নেই কোথাও। নিশিকান্ত ও জয়, দু'জনেই মনগড়া অভিযোগ করছেন বলে দাবি করে মহুয়া জানান, জয় অনন্ত দেহাদ্রাই তাঁর পুরনো বন্ধু। তবে পোষ্যের মালিকানা নিয়ে বিবাদ হয়েছিল তাঁদের মধ্যে। আর সাংসদ নিশিকান্ত দুবে বিরোধী দলের নেতা ও সাংসদ। ফলে মহুয়ার সঙ্গে দ্বৈরথের কারণটা আলাদা করে বলে দিতে হয় না। গত তিন-চার বছর ধরেই দুবের সঙ্গে মহুয়ার রাজনৈতিক সংঘাত লেগেই রয়েছে। দর্শনের কাছ থেকে মহুয়া দামি ব্র্যান্ডের জুতো, ব্যাগ-সহ অন্যান্য জিনিস উপহার নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই দু'জন। মহুয়া জানান, অভিযোগ পত্রে আদানপ্রদানের যে দীর্ঘ তালিকা লোকসভা স্পিকারের সামনে এনেছেন তাঁরা, তার কোনও প্রমাণই নেই অভিযোগকারীদের কাছে। কোনও নথিও তাঁরা দেখাতে পারবেন না অভিযোগের স্বপক্ষে।

Open to answering questions to CBI & Ethics Committee said by Mahua Moitra on 'Cash for Query' scandal

টাকার বিনিময়ে আদানি-মোদিকে জড়িয়ে প্রশ্ন করা তো দূর, তিনি যাতে সংসদে এ নিয়ে প্রশ্ন না করতে পারেন, সে জন্যই তাঁর মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে বলে বিস্ফোরক দাবি করেছেন মহুয়া। তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, দিল্লির টেলিগ্রাফ লেনের বাংলোটি নাকি নতুন করে সাজিয়েছিলেন মহুয়া। আর সে সমস্তটাই হয়েছে নাকি ব্যবসায়ী দর্শনের টাকায়। তবে সেই অভিযোগ উড়িয়ে মহুয়া জানান, দর্শনকে তিনি অনুরোধ করেছিলেন, তাঁর সংস্থার আর্কিটেক্টরা যাতে নকশাটুকু করে দেন। ব্যস ওটুকুই। তাঁর বাংসো সংস্কারের কাজ কিন্তু গোটাটাই করেছে সরকারি সংস্থা সিপিডব্লিউডি। সেখানে দর্শন বা তাঁর সংস্থার কোনও ভূমিকাই ছিল না। মহুয়ার দাবি, প্রয়োজন হলে এথিক্স কমিটি দর্শনকে ডাকুক। দুজনকে মুখোমুখি বসিয়ে প্রশ্ন করা হোক। তাহলেই সত্যিটা সামনে এসে যাবে।

নিশিকান্ত যে অভিযোগগুলি জানিয়েছেন চিঠি লিখে, তার মধ্যে মূল ছিল মহুয়ার বিরুদ্ধে দুবাই-যোগের অভিযোগ। তাঁর বক্তব্য ছিল, সংসদের ওয়েবসাইটে লগ-ইন করার জন্য নিজের কোড এবং পাসওয়ার্ড হীরানন্দানিকে দিয়ে দিয়েছিলেন মহুয়া। ওই ব্যবসায়ী দুবাইয়ে বসে তার ‘সুযোগ’ নিয়েছেন। আর এটি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন। মহুয়ার বক্তব্য, বহু সাংসদই নিজেদের লগইন পাসওয়ার্ড অন্যকে দিয়ে রাখেন। লোকসভায় এই সংক্রান্ত তেমন কোনও নিয়ম নেই। মহুয়া বেশির ভাগ প্রশ্ন হাতে লিখে সই করে দেন। কোনও কোনও সময়ে অবশ্য তা সাংসদের লগ ইন আইডি ব্যবহার করেও লেখেন। তাছাড়া প্রশ্ন লিখলেও ফোনে ওটিপি আসে। সেটা অন্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। মহুয়ার বক্তব্য, সমস্ত সাংসদের লগ-ইন কোড এবং পাসওয়ার্ড প্রকাশ করা হোক। তাহলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, অন্য সাংসদেরা এই কাজ করেন কিনা।

আরও পড়ুন: ইটের বদলে পাটকেল! ‘জ্বালাময়ী’ মহুয়াকে যে ভাবে পাল্টা উত্তর দিলেন নির্মলা সীতারামন

যবে থেকে 'টাকা ও উপহারের বিনিময়ে প্রশ্ন' বিতর্কে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে মহুয়াকে, আশ্চর্যজনক ভাবে মুখে কুলুপ এঁটেছে তৃণমূল। এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য তো দূরের, বরং একটু সাবধানী দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে দল। এমনকী বিষয়টি নিয়ে কোনও কিছু বলতে দেখা যায়নি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সপাট জবাব মহুয়ার, তিনি তৃণমূলকর্মী। মমতা বন্দ্যাপাধ্যায় তাঁর রাজনৈতিক মা। তাঁর অনেক বড় লড়াই রয়েছে। এই লড়াইটা তিনি নিজেই লড়তে পারবেন বলেই জানান কৃষ্ণনগরের সাংসদ। তবে মুখে যাই বলুন না কেন, সত্যিই কি এই অভিযোগ থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন মহুয়া, আপাতত সেটাই প্রশ্ন।

 

 

More Articles