কারও আছে ল্যামবোর্গিনি, কারও ২,২০০ কোটির বাড়ি || এই নেতাদের সম্পত্তি দেখে লজ্জা পাবেন কুবেরও

ভারতে এমন বহু রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন, যাদের সংগ্রহে রয়েছে বেশ কিছু মহামূল্যবান জিনিস এবং বহুমূল্য সম্পত্তি। কারো কাছে রয়েছে বিদেশি কোম্পানির রেসিং কার, তো আবার কারো কাছে রয়েছে কোটি কোটি টাকার জমি।

মা কালী নিয়ে মন্তব্য হোক বা হাতের ঝোলা নিয়ে বিতর্ক, মহুয়া মৈত্রকে সহজে দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তৃণমূলে তার জায়গাটা বলা যেতে পারে 'ইরিপ্লেসেবল'। একটা সময় মা কালীকে নিয়ে তার মন্তব্য ঘিরে তাকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছিল শাসক দল বিজেপি। এমনকি দলের তরফ থেকেও তার মন্তব্য থেকে দূরত্ব রচনা করা হয়েছিল। তৃণমূলের তরফ থেকে ট্যুইট করে জানানো হয়েছিল, মহুয়া মৈত্র নাকি ওই মন্তব্য সম্পন্ন ব্যক্তিগত স্তরে করেছেন এবং দল ওই মন্তব্যকে সমর্থন করছে না।

অন্য কোন নেতা হলে হয়তো এতো বিতর্কের পর কিছুটা নিজেকে গুটিয়ে নিতেন। কিন্তু মহুয়া মৈত্র একেবারেই অদম্য। নিজের মন্তব্য থেকে সরে আসা নয়, বরং নিজের মন্তব্যকে আরো জোরালো ভাবে পেশ করতে শুরু করলেন মহুয়া মৈত্র। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারী প্রসঙ্গ চলে আসায় এই মুহূর্তে কালি বিতর্ক কিছুটা দূরে সরলেও, সম্প্রতি একটি নতুন বিতর্কের সম্মুখীন মহুয়া মৈত্র।

এবারে বিতর্ক শুরু হয়েছে তার ফরাসি ফ্যাশন ব্র্যান্ড 'লুই ভিতোঁ' একটি হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে। ভারতীয় মুদ্রায় এই হ্যান্ডব্যাগ এর দাম নাকি প্রায় দুই লক্ষ টাকা মতো। মহুয়া প্রথম থেকেই ছিলেন ফ্যাশনিস্তা। তার টিপটপ পোশাকের পাশাপাশি, তার সর্বক্ষণের সঙ্গী তার ঐ মহার্ঘ ব্যাগ। শোনা যায়, ওই ব্যাগে তিনি জলের বোতল, ময়শ্চারাইজার, সানস্ক্রিন লোশনের মতো আরো অনেক জিনিস ক্যারি করেন। তবে তাতে বিরোধীদের আপত্তি নেই। তবে আপত্তি একটি অন্য বিষয় নিয়ে।

বিজেপির বক্তব্য, সোমবার সংসদে যখন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মহুয়ার সতীর্থ সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ঝাঁঝালো বক্তব্য রাখছেন, সেই সময় তার পাশের আসনে বসা মহুয়া সন্তর্পনে তার পাশে রাখা দামি ব্যাগটিকে নামিয়ে পায়ের কাছে রেখে দেন। লোকসভার ক্যামেরায় বিষয়টি ধরা পড়তেই মুহূর্তের মধ্যে হয়ে যায় ভাইরাল। আর তেমনিভাবে দ্রুত ট্রোল্ হতে শুরু করেন মহুয়া মৈত্র। বিজেপির বক্তব্য, যখন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তারই দলের সাংসদ বক্তৃতা করছেন, তখন মহুয়া তার বহুমূল্য ব্যাগটি নজরের আড়ালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। বিজেপির শাহজাদ পুনওয়ালা টুইট করে লিখেছেন, 'দ্বিচারিতার এটাই মুখ'।

নানা সূত্রে থেকে বিঁধতে শুরু করে বিজেপি। কিন্তু, মহুয়াও ছাড়বার পাত্রী নয়। সোশ্যাল মিডিয়াতে তিনি সটান জানান, ২০১৪ সালে মহুয়ার স্বামী তাকে ওই বিশেষ কোম্পানির একটি ব্যাগ গিফট করেন। আর সেই থেকেই সেই ধরনের ব্যাগ তার সঙ্গী। বিতর্কিত হাত ব্যাগের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ের ছবির কোলাজ বানিয়ে তিনি টুইট করে লিখছেন, "২০১৯ থেকেই আমি সংসদের ঝোলাওয়ালা ফকির। ঝোলা নিয়ে এসেছিলাম... আর ঝোলা নিয়ে চলেও যাব"

তবে এরকম মহার্ঘ জিনিস যে শুধুমাত্র তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র ব্যবহার করেন, এরকমটা কিন্তু নয়। ভারতে এমন বহু রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন, যাদের সংগ্রহে রয়েছে বেশ কিছু মহামূল্যবান জিনিস এবং বহুমূল্য সম্পত্তি। কারো কাছে রয়েছে বিদেশি কোম্পানির রেসিং কার, তো আবার কারো কাছে রয়েছে কোটি কোটি টাকার জমি। এ সম্পত্তির পরিমাণ এতটাই যে, তা দেখে লজ্জা পেতে বাধ্য স্বয়ং কুবেরও।

১. নিখিল কুমারস্বামী

ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডী দেবেগৌড়ার পৌত্র নিখিল কুমারস্বামী নিজেও একজন রাজনীতিবিদ এবং অভিনেতা। তার কাছে রয়েছে একাধিক দামি দামি বিলাসবহুল গাড়ি। তবে তার গাড়ির কালেকশনের সবথেকে দামি গাড়িটি হলো বিদেশি কোম্পানির Lamborghini Gallardo মডেলের একটি গাড়ি। যে সময় এই গাড়িটি তৈরি করা হয়েছিল সেই সময় এই গাড়ির দাম ছিল ২.৮ কোটি টাকা। নিখিলের কাছে যে এডিশনের গাড়িটি রয়েছে, সেই গাড়িটি খুব কম সংখ্যায় তৈরি করা হয়েছিল। তাই ওই বিশেষ মডেলের গাড়িটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকারও বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২. জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া মধ্যপ্রদেশের রাজ পরিবারের একজন সদস্য। রাজ্যসভায় তিনি বিজেপির একজন সাংসদও বটে। তার সংগ্রহে এই মুহূর্তে নানা ধরনের নামিদামি সম্পত্তি রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই মুহূর্তে তার স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৩২৮ কোটি টাকা। তবে এখানেই শেষ নয়, গোয়ালিয়রে তার পরিবারের নামে থাকা রানীমহলের এই মুহূর্তে নেট মূল্য প্রায় ২৮ কোটি টাকার কাছাকাছি। এছাড়াও তার কাছে BMW কোম্পানির ১৯৬০ সালের একটি ভিন্টেজ গাড়িও রয়েছে। এই গাড়িটির বাজার মূল্য এই মুহূর্তে প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি। বলতে গেলে সেই যুগের ন্যানো গাড়ি ছিল BMW কোম্পানির এই গাড়িটি। তাছাড়াও তার কাছে রয়েছে প্রচুর অস্থাবর সম্পত্তি। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে তার সম্পত্তির মূল্যায়ন করলে দাঁড়ায় ২,৯৭০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন-গর্জাচ্ছে ইডি, বর্ষাবে ইডি? দু’দশকে ৪,৭০০ মামলা, শাস্তি মাত্র ২৩ জনের!

৩. এমটিবি নাগরাজ

ভারতের রাজনীতিতে নাগরাজ অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন নেতা। কর্ণাটকের হোসকোট এলাকার বিধায়ক ছিলেন তিনি একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত। তার সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় বেশ কয়েক কোটি টাকা। প্রচুর ধনসম্পত্তির পাশাপাশি তার কাছে এই মুহূর্তে রয়েছে Rolls Royes Phantom সিরিজের VIII মডেলটি। এটি হলো এই কোম্পানির ফ্যান্টম সিরিজের সর্বশেষ গাড়ি। তবে এখানেই শেষ নয়, লকডাউন থাকাকালীন সময়ে, নাগরাজ একটি Ferrari F8 গাড়িও ক্রয় করেন।

৪. প্রমোদ মাধবরাজ

কর্নাটকের অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন কংগ্রেস নেতাদের নেতা হলেন প্রমোদ মাধবরাজ। সেই রাজ্যের মৎস্য, ক্রীড়া এবং যুব কল্যাণ দপ্তরের প্রাক্তন মন্ত্রীও ছিলেন তিনি। এই মুহূর্তে তার কাছে পূর্ববর্তী জেনারেশনের একটি বিশেষ এডিশনের Rolls Royce Ghost মডেলের গাড়ি রয়েছে। এই ব্রিটিশ বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাণকারী কোম্পানির একেবারে এন্ট্রি-লেভেল মডেল হল এই ঘোস্ট। যে সময় এই গাড়িটি তৈরি করা হয়েছিল, তখন এই গাড়িটির এক্স-শোরুম মূল্য ছিল ৬ কোটি টাকা। এই মুহূর্তে দেখতে গেলে এই গাড়িটির বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকার কাছাকাছি হবে।

৫. চিরঞ্জীবী

চিরঞ্জীবী শুধুমাত্র একজন রাজনৈতিক নেতা নন, পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতের একজন সুপারস্টারও বটে। সঙ্গেই, বলিউড অভিনেতা রামচরনের পিতা হিসেবেও তার যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে। তিনি অত্যন্ত দামি দামি গাড়ি ব্যবহার করতে ভালোবাসেন এবং এই মুহূর্তে তার সংগ্রহে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল রেসিং কার রয়েছে। তার রোলস রয়েসের গাড়িতে একটি সিগনেচার ১১১ রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। তার অন্যান্য গাড়িতেও এইরকম ধরনের রেজিস্ট্রেশন দেখতে পাওয়া যায়। Rolls Royce Phantom ছাড়াও তার সংগ্রহে রয়েছে Aston Martin Vantage V8, Mercedes Benz এবং Range Rover।

৬. সাজিয়া ইলমি

আম আদমি পার্টির নেত্রী সাজিয়া ইলমি আপের ১৫ জন কোটিপতি নেতা-নেত্রীদের মধ্যে সব থেকে বেশি সম্পত্তির অধিকারী। নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সাজিয়া ইলমের স্বামী সাজেদ সিরাজ মালিকের কাছে এই মুহূর্তে Mercedes Benz ও একটি Jeanneau yacht গাড়ি রয়েছে।

৭. রাজীব চন্দ্রশেখর

রাজ্যসভার সদস্য তথা বিজেপি নেতা রাজিব চন্দ্রশেখর নিজে একজন মাল্টিমিলিয়নিয়ার এবং নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভার একজন মন্ত্রী। রাজীব চন্দ্রশেখরের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় কয়েক কোটি টাকা এবং তার কাছে আছে বেশ কিছু বিলাসবহুল গাড়ির সংগ্রহ। তার কাছে এই মুহূর্তে রয়েছে Lamborghini Murcielago Barchetta, Ferarri F355 Spyder, BMW M5 (E60), HUMMER H2 এর মত কিছু অত্যাধুনিক গাড়ি।

৮. প্রিয়া কৃষ্ণা

কংগ্রেস বিধায়ক প্রিয়া কৃষ্ণার কাছে এই মুহূর্তে সংগ্রহে রয়েছে ১৮টি বিদেশি দামি গাড়ি। এর মধ্যে Bemi Dozer,

Mantego, Benz GL এর মত কিছু গাড়ি। এছাড়াও তার নামে ১৬০.১০ কোটি টাকার একটি বাড়ি রয়েছে।

৯. নকুল নাথ

মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের পুত্র নকুল নাথের নামে এই মুহূর্তে আছে একটি এমন সম্পত্তি যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।

১০. প্রতীক যাদব

উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদবের পুত্র এবং অখিলের যাদবের ভাই প্রতীক যাদবের কাছে রয়েছে বেশ কিছু দামি দামি গাড়ির কালেকশন। তবে এর মধ্যে সবথেকে দামি গাড়িটি হলো Lamborghini Huracan Spyder। এই গাড়িটি ৬১০ বিএইচপি সর্বাধিক পাওয়ার এবং ৫৬০ নিউটন মিটার টর্ক উৎপন্ন করতে পারে। এই গাড়িটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা। এটি ছাড়াও প্রতীক যাদবের সংগ্রহে একাধিক দামি দামি গাড়ি রয়েছে যাদের মূল্য প্রায় কয়েক কোটি টাকা।

১১. রাম কদম

বিজেপি বিধায়ক রাম কদমের কাছেও রয়েছে মার্সিডিজ, জাগুয়ার, বেন্টলির মতো নামিদামি বিভিন্ন কোম্পানির একাধিক গাড়ি। তার সংগ্রহে থাকা দামি গাড়িগুলির মধ্যে অন্যতম হলো Mercedes E350 Cabriolet, Jaguar XJ L, Rolls Royce Ghost, Bentley. এছাড়াও নিজের অপ্রাপ্তবয়স্ক পুত্রকে তার জন্মদিনে তিনি একটি মার্সিডিজ গাড়ি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন, যার দরুন তাকে বিতর্কের সম্মুখীন হতে হয়েছিল একটা সময়ে।

More Articles