২৩০ টির বেশি আসন পাবে না বিজেপি! কেন বলছেন নির্মলার স্বামী?

Nirmala Sitharaman Husband: নির্মলার স্বামী প্রভাকরের দাবি, বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদির ভিত ধসে গিয়েছে। যোগ্যতম একজন প্রধানমন্ত্রীর যে কর্তব্য পালন উচিত তা ১০ বছরে দেখা যায়নি।

১৮ তম লোকসভা ভোটের প্রথম দফার নির্বাচনের কিছু ঘণ্টা বাকি। সব দলেরই প্রচারও চলছে জোরকদমে। এর মধ্যেই আরও একবার চর্চায় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সীতারমণের স্বামী পরাকলা প্রভাকর। বেশ কিছুদিন ধরেই খবরের শিরোনামে ছিলেন প্রভাকর। নির্বাচনী বন্ডকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি মনে করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, এর ফল ভুগতে হবে বিজেপিকে। বিজেপি যখন বুক বাজিয়ে প্রচার করে চলেছে তারা '৪০০ পার' করবে, নির্মলার স্বামী স্পষ্ট বলছেন বিজেপি ২৩০ টির বেশি আসন পাবে না।

২০১৯ সালে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ পেয়েছিল ৩০৩ টি আসন। প্রভাকর দাবি করেছেন, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে ২৩০ টির বেশি আসন পাবে না ভারতীয় জনতা পার্টি। তাঁর কথা বাস্তব হলে, প্রায় ৭৩ টি আসন হারাবে পদ্মশিবির। ২০১৪, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির মূল সমর্থিত রাজ্য - বিহার, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান থেকেই ৫০ টি আসনে খেলা ঘুরে যাবে মোদি সরকারের বলেও দাবি করেছেন প্রভাকর। কর্নাটকে ১৫ টি আসন পাওয়াও বিজেপির জন্য নাকি কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। 'The Wire'-এর একটি সাক্ষাৎকারে তাঁর এই কথাগুলির ভিত্তি কী জানতে চাওয়া হলে পরাকলাআ প্রভাকর বলেন, "দেশের পরিস্থিতি দেখুন, তাহলেই বুঝতে পারবেন"। দেশের পরিস্থিতি কী? তা জানাতে প্রভাকর কিছু বিষয় স্পষ্ট করে সামনে এনেছেন।

আরও পড়ুন- নির্বাচনী বন্ডের চেয়েও ভয়াবহ! ১২০০০ কোটি টাকার দুর্নীতি PM CARES ফান্ডে?

প্রভাকরের কথায়, ২০১৪-তে খুব সুকৌশলে বিজেপি নির্বাচনী প্রচার করেছিল। প্রচারের মূলে ছিল - দুর্নীতি প্রতিরোধ। ২০১৯- এ বালাকোট, পুলওয়ামা। কিন্তু ২০২৪-এ গেরুয়া শিবিরকে সমস্যায় ফেলবে ইলেক্টোরাল বন্ডের দুর্নীতি। তিনি বলেছেন, মানুষ ইলেক্টোরাল বন্ড নিয়ে আলোচনা করছে। এই খবর জনগণের মধ্যে দ্রুত প্রবেশ করছে। তাঁদের কাছে বিস্তারিত তথ্যর জোগান না থাকলেও, মানুষ বুঝতে পেরেছে বড় মাপের আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে।

প্রভাকরের দাবি, ভারতীয় জনতা পার্টি এবং নরেন্দ্র মোদির ভিত ধসে গিয়েছে। যোগ্যতম একজন প্রধানমন্ত্রীর যে কর্তব্য পালন উচিত তা ১০ বছরে দেখা যায়নি। বরং সমস্যাগুলির সমাধান না করে পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছেন। লাদাখ, মণিপুর, কৃষক আন্দোলন নিয়ে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের নীরবতার দিকে আঙুল তুলতেই একথা বলেন প্রভাকর।

পরাকলা প্রভাকর নোটবন্দি, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের মতো ইস্যুগুলি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। দাবি করেছেন, মূলত যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে বেকারত্বের হার অত্যন্ত বেশি রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, তা ২৪%। তারপরও সরকার পক্ষ প্রচার করে চলেছে 'সব ভালো আছে'। প্রভাকর আরও বলছেন, ভারতে বেকারত্বের হার বেশি বলে শ্রমিকরা যাচ্ছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত ইজরায়েলে কাজ করতে। জীবনের ঝুঁকি জেনেও তাঁদের সেখানে পাঠানো নিয়ে সরকারের নিন্দে করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন- চৌকিদারই চোর? বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি নির্বাচনী বন্ডই?

প্রভাকরের বিশ্লেষণ, ৩৭০ বা '৪০০ পার' কথাগুলি ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীর খুবই বুদ্ধি করে দেওয়া চাল। তাঁর যুক্তি, যদি বিজেপি এটা না প্রচার করত তাহলে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হতো, 'বিজেপি ক্ষমতায় আসবে কিনা?' কিন্তু ওরা যখনই প্রচার শুরু করছে ৩৭০ আসন বা '৪০০ পার' বলে, তখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে "বিজেপি ৩৭০ আসন বা '৪০০ পার' করতে পারবে কিনা?"

মোদি সরকার 'মোটেই গণতান্ত্রিক নয়' বলেও দাবি প্রভাকরের। ১৪৫ জন সাংসদকে বরখাস্ত করে কোনও আইন পাশ করানো হলে আর গণতন্ত্র বেঁচে থাকে না বলেই তাঁর মত।

দেশের কৃষকদের সঙ্গে ১০ মিনিটও কথা না বলে, তিনটি কৃষি বিল পাশ করানো নিয়েও মন্তব্য করেছেন প্রভাকর।

এই সব কিছুকেই বিজেপির ক্ষমতা হ্রাসের কারণ হিসেবে দেখছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর স্বামী। সম্প্রতি তিনিই বলেছিলেন, "নির্বাচনী বন্ড কেবলমাত্র দেশ নয় গোটা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি।" রীতিমতো সতর্ক করে দাবি করেছিলেন তিনি যে, নরেন্দ্র মোদি ২০২৪ সালে আবার প্রধানমন্ত্রী হলে "এটাই হবে দেশের শেষ নির্বাচন।" তাঁর দাবি ছিল, মানচিত্র বদলে দেওয়া হবে বলেও। বিজেপি দলনেতাদের মুখে যে ঘৃণাসূচক মন্তব্য শোনা যায়, তা দিল্লির লালকেল্লা থেকে শোনা যাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেছিলেন প্রভাকর। মণিপুরের মতো হিংসাত্মক পরিস্থিতি গোটা দেশে দেখা যাবে বলেও তাঁর দাবি। প্রশ্ন হচ্ছে, বিজেপির মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের স্বামী পরাকলা প্রভাকর যা বলছেন, তার প্রভাব কি ব্যালট বাক্সে পড়বে? সাধারণ মানুষ, বিজেপির একনিষ্ঠ ভোটাররা কি আদৌ এই ইস্যু নিয়ে চিন্তিত?

More Articles