বেসরকারি হলে পরিষেবা ভালো হবে! আদানির জল থইথই বিমানবন্দরে কী পাচ্ছেন যাত্রীরা?

Adani Ahmedabad airport flooded: মালপত্তর নিয়ে প্যান্ট গুটিয়ে, শাড়ি তুলে, জল ঠেঙিয়ে বেরোতে হচ্ছে আদানির বিমানবন্দর থেকে।

ছিল বিমানবন্দর, হয়ে গেল নদী বন্দর। হতেই পারে, বড় বড় দেশে, বড় বড় ব্যবসায়ীরা পিপিপি ধারায় কাজ করলে এমন হতেই পারে। এদিকে তেমন না হলেও, আহমেদাবাদে বেজায় বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হলে কলকাতায় জল দাঁড়ায়। কিন্তু আহমেদাবাদ স্বয়ং মোদির দেশে (দেশই ধরা যাক)। সেখানকার উন্নয়ন নিয়ে অনেকেই অনেকসময় বিবিধ দাবি করে থাকেন। এই আহমেদাবাদেই একটি বিমানবন্দর রয়েছে আদানির। আদানির বিমানবন্দর ছিল ঠিকই, কিন্তু কালের (বা বৃষ্টির) জলে এখন সেটি নদী বন্দর! প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের ফলে সে শহরের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক (এসভিপিআই) বিমানবন্দরে থইথই বন্যা! দেশ, বিদেশ থেকে আসা বিমানযাত্রীদের অবস্থা তথৈবচ! মালপত্তর নিয়ে প্যান্ট গুটিয়ে, শাড়ি তুলে, জল ঠেঙিয়ে বেরোতে হচ্ছে আদানির বিমানবন্দর থেকে। এমন হতেই পারে, মোদি হ্যায়, তো মুমকিন হ্যায়!

বিমানবন্দর নিজস্ব বিবৃতিতে বলেছে, ২২ জুলাই সন্ধ্যায় ৭ টা থেকে অভূতপূর্ব বৃষ্টিপাত হয়েছে শহরে। যার ফলে আহমেদাবাদ শহর জুড়েই বন্যা হয় এবং স্বাভাবিক জীবন থমকে যায়। এর ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিমানবন্দরের চারপাশের এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ওইদিন মাত্র ৪ ঘণ্টায় (বিকেল ৫.৩০ টা থেকে রাত ৮.৩০ টা পর্যন্ত) ১৫৯ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে যা এই মরসুমে এক দিনে রেকর্ড করা সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃষ্টিপাত। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শহরে ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে তাই প্রথম এক ঘণ্টায় এর সর্বোচ্চ প্রভাব পড়েছে। সেই হিসেবে রবিবার সকাল পর্যন্ত ৪৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তার ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। এত বৃষ্টির জল যাবে কোথায়? জল জমে গিয়েছে আদানির বিমানবন্দরে।

 

প্রবল ভারী বর্ষণ এবং বিমানবন্দরের চারপাশে জল জমে যাওয়ার কারণে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সমস্ত যাত্রীদের যাত্রা শুরুর আগে নিজ নিজ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। পার্কিং করতে বারণ করা হয়। যাত্রীদের একাংশ বুঝেই পান না, বিমানবন্দরে ওই হাঁটু জলের মধ্যে তারা মালপত্র নিয়ে কীভাবেই বা কী ব্যবস্থা করবেন। বিমানবন্দরের এমন অনিয়ন্ত্রিত অবস্থাতে যাত্রী পরিষেবা চরম ব্যাহত হয়। হাজার হাজার যাত্রী আটকা পড়ে যান এবং বেশ কিছুজনের যাত্রাই বাতিল হয়ে যায়।

২০২০ সালের নভেম্বরে আদানি গ্রুপ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম অধিগ্রহণ করে। আদানি আহমেদাবাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেডকে আহমেদাবাদ বিমানবন্দর হস্তান্তর করার পরেই ঝাঁ চকচকে 'বিশ্বমানের' রূপ দেওয়া শুরু হয় এই বিমানবন্দরকে৷ এর আগে, ভারতের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ লখনউ বিমানবন্দর এবং ম্যাঙ্গালুরু বিমানবন্দরকে ৫০ বছরের লিজে আদানি গ্রুপকে দিয়ে দেয়। কেন্দ্রীয় সরকার, মানে বিজেপি সরকার ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের ছয়টি বড় বিমানবন্দর - লখনউ, আহমেদাবাদ, জয়পুর, ম্যাঙ্গালুরু, তিরুবনন্তপুরম এবং গুয়াহাটির বেসরকারিকরণ করে। দর হাঁকা হয়। সেই প্রক্রিয়াতে মোদি ঘনিষ্ঠ আদানি গোষ্ঠী ৫০ বছরের জন্য এই সব বিমানবন্দর চালানোর অধিকার অর্জন করে।

 

গৌতম আদানি-নিয়ন্ত্রিত আদানি এন্টারপ্রাইজেস আহমেদাবাদ, ম্যাঙ্গালুরু এবং লখনউতে বিমানবন্দর অধিগ্রহণের জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়াকে (AAI) ১,১০৩ কোটি টাকা দেয়। দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরে দেশের দ্বিতীয় ব্যস্ততম মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনাকারী MIAL (মুম্বই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেড)-এ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরে আদানি এন্টারপ্রাইজেস দেশের বৃহত্তম বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে। তারপর কালের নিয়মে বৃষ্টি হয় আর কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগের উপর জল জমে যায়!

বিমানবন্দর বলছে, এমন নতুন না। অতীতেও রানওয়ে ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে এবং বিমানের ওঠানামাও বন্ধ হয়েছে একাধিকবার। বিমানবন্দরে ৮.৫ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা রয়েছে যাতে রানওয়ের কাজ কোনওভাবেই ব্যাহত না হয়। তাই রানওয়ে ভাসেনি, কিন্তু ভেসে গিয়েছেন যাত্রীরা। হতেই পারে, মোদি হ্যায় তো...

More Articles