কলকাতার প্রেমিক, পাকিস্তানের প্রেমিকা! ভালবাসা জুড়ে দিল দুই দেশকে

Cross-Border Love Story: মঙ্গলবার অমৃতসরের আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারত-পাক আন্তর্জাতিক বর্ডার পার করে ভারতে এসে পৌঁছেছেন জাভেরিয়া। ঢাকঢোল বাজিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান প্রেমিক সমীর।

কথায় বলে, প্রেম নাকি 'আগ কা দরিয়া'। আর তা ডুব দিয়ে পার করাই দস্তুর। কিন্তু পাকিস্তানের মেয়ে জাভেরিয়ার কাছেও তাঁর এই প্রেম সেই আগুনের চেয়ে কিছু কম ছিল না। পাকিস্তানের মেয়ে ভালোবেসে ফেলেছিল ভারতীয় এক যুবককে। এক দেশের মানুষের সঙ্গে ভিনদেশের মানুষের বিয়ে হয় না কি আর! কিন্তু এ যে ভারত-পাকিস্তান। গত কয়েক দশকে যাঁদের সম্পর্ক সাপে আর নেউলের। যে দেশে ক্রিকেট টিম পাঠাতে পর্যন্ত রাজি হয় না ভারত, সে দেশের প্রেমিকার এদেশের ভিসা পাওয়া কি আর সহজ হবে।

না, সহজ ছিল না মোটেও। দু-দুবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন জাভেরিয়া। তবে হাল ছাড়েননি। প্রমাণ করে দিয়েছেন রূপকথা হয়। মঙ্গলবার আটারি ওয়াঘা সীমান্ত পার করে ভারতে এসেছেন পাকিস্তানের ডেরা ইসমাইলের বাসিন্দা জাভেরিয়া। পূরণ হয়েছে স্বপ্ন। কলকাতার বাসিন্দা সমীর খানের সঙ্গে আগামী জানুয়ারি মাসে গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছেন জাভেরিয়া।

কলকাতার বাসিন্দা সমীরের সঙ্গে জাভেরিয়ার আলাপ বছর পাঁচেক আগে। মায়ের মোবাইলে জাভেরিয়ার ছবি দেখেই তাঁকে প্রথম দর্শনেই মন দিয়ে ফেলেন সমীর। সবে সবে তখন জার্মানি থেকে ফিরেছেন তিনি। একবাক্যে মাকে সমীর জানান, বিয়ে যদি করেন, এই মেয়েকেই করবেন। সমীরের মা পাকিস্তানে জাভেরিয়ার মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। রাজি হয়ে যায় দুই পরিবারই। না, এ গল্পে অমরিশ পুরী ছিল না বটে, তবে সমীর-জাভেরিয়ার মিলনের পথে ছিল বিস্তর কাঁটা।

আরও পড়ুন: পথের কাঁটা ভিসা, পাক প্রেমিকার গলায় ভার্চুয়াল মালা দিলেন ভারতীয় যুবক

ভারতে আসার জন্য ভারতীয় হাইকমিশনে ভিসার আবেদন করেন জাভেরিয়া। কিন্তু লাভ হয়নি। হাইকমিশন ফিরিয়ে দেয় তাঁর আবেদন। একবার নয়, পর পর দু-বার। এর মধ্যেই আবার চলে এল করোনা। সমস্ত যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেল দু-দেশের মধ্যে। তাদের গল্পের হ্যাপি এন্ডিংয়ের পথটা ক্রমশ অস্পষ্ট হচ্ছিল। তবু আশা ছাড়েননি জাভেরিয়া। একদিন করোনা অতিমারির প্রভাব কমে। পৃথিবী ক্রমে সুস্থ হয়ে ওঠে। ফের ভিসার আবেদন করেন জাভেরিয়া। বিস্তর লড়াইয়ের পর প্রসন্ন হন ভাগ্যদেবতা। কীভাবে যেন ভিসার আবেদনখানা গৃহীত হয়ে যায় এবার।

মঙ্গলবার অমৃতসরের আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারত-পাক আন্তর্জাতিক বর্ডার পার করে ভারতে এসে পৌঁছেছেন জাভেরিয়া। এত দূর পথ পেরিয়ে প্রেমিকা দেশে আসছে, আর প্রেমিক তাঁকে নিতে আসবেন না, তা আবার হয় নাকি! বাগদত্তা জাভেরিয়াকে নিতে ঢোল-বাজনা নিয়ে ওয়াঘা সীমান্তে হাজির হয়েছিলেন সমীর। রীতিমতো হইহই করে তাঁকে সেখানে স্বাগত জানান সমীর ও তাঁর পরিবার।

Cross-Border Love Story Pakistani woman arrives in India to marry Kolkata man

পরিবারের বাঁধায় কত ভালোবাসা শেষ পর্যন্ত রাস্তা খুঁজে পায় না। যে দেশে সম্মান রক্ষার নামে খুনের প্রথা চলে আসে, সেখানে যে শুধুই এসবই ঘটে, তা নয়। মাঝেমধ্যে সেই পাথুরে জমিতে জাভারিয়া-সমীরদের মতো ভালোবাসার গাছে ফুলও ধরে। আর তা কেবল সিনেমায় বা বড়পর্দায় নয়, ঘটে বাস্তবেও। আর এমন রূপকথা সত্যি হওয়ার পর সমীর জানালেন, তিনি আপ্লুত। একই রকম খুশির ঝলক জাভেরিয়ার মুখেও। জানালেন, ভারতে ঢুকে থেকে সকলের কাছ থেকে এত ভালোবাসা পেয়েছেন, যে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন, তাতে তিনি মুগ্ধ। এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে এমনও হয়।

Cross-Border Love Story Pakistani woman arrives in India to marry Kolkata man

পাঁচ বছরের এই প্রেমে মাত্র তিন বার জাভেরিয়ার সঙ্গে দেখা হয়েছে সমীরের। দু-বার থাইল্যান্ডে ও একবার দুবাইতে। কিন্তু এ বার একটা স্থায়ী সমাধানে পৌঁছতে চাইছিলেন পাত্র-পাত্রী দু'জনেই। বারবার সোশ্যাল ব্লগিং সাইট টুইটার তথা অধুনা এক্সে ভারত সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েছেন যুগল। অবশেষে তাঁদের সেই কাতর আবেদনে সাড়া দিয়েছে দু-দেশই। আর তার জন্য ভারত ও পাকিস্তান, দু-দেশের প্রশাসনকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন যুগল। সমীর জানান, তিনি যে ঠিক কতটা খুশি, তা তাঁর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ভারত সরকার এবং জনাব মকবুলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সমীর, তাঁদের ভিসা প্রক্রিয়ায় সাহায্য করার জন্য।

আরও পড়ুন: ভুলতে পারেননি নিজের প্রথম প্রেমিকাকে, এই শহরের নামে তাঁকে অমর করে গেলেন বিধান চন্দ্র রায়

সামনের মাসেই চার হাত এক হতে চলেছে সমীর-জাভেলিয়ার। তার পর হাতে থাকতে চলেছে আরও কয়েকটা মাস। মোট পাঁচ মাসের ভিসা পেয়েছেন জাভারিয়া। ততদিন এ দেশেই থাকার কথা তাঁর। ততদিন নববধূকে কাছে পাবেন সমীর। তারপরে কী হবে, তা নিয়ে এখনই ভাবছেন না তাঁরা। আপাতত এই মুহূর্তটাকেই প্রাণ ভরে উপভোগ করতে চান তাঁরা। পাশাপাশি দুদেশের সরকারের কাছেই যুগলের আবেদন, বিয়ে করতে চায় এমন যুগলদের জন্য বিশেষ ভিসা তৈরি করা হোক। যাতে প্রেমের জন্য কাঁটাতার টপকাতে রক্তাক্ত না হতে হয় কোনও প্রেমিক বা প্রেমিকাকে। তবে আপাতত দুই পরিবারেই খুশির আমেজ। বিয়ের প্রস্তুতিও তুঙ্গে। দুই সংস্কৃতির দুই দেশের মেলবন্ধন বলে কথা। আয়োজন প্রচুর। জানা গিয়েছে, আফ্রিকা, স্পেন, আমেরিকা ও অন্যান্য দেশ থেকে আসতে চলেছেন সমীরের বন্ধুবান্ধব। কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে যতই যুজুধান হোক না কেন দুই দেশ, এই ধরনের রূপকথা বারবার হোক, এমনটাই বোধহয় চান দু-দেশের আমআদমির হৃদয়।

 

More Articles