হু হু করে কমছে ধান উৎপাদন, পাতে ভাতটুকুও জুটবে না? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

যেহেতু ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গম উৎপাদক, তাই এতদিন গোটা বিশ্বকে সামলাতে হচ্ছিল সেই সমস্যা। এখন তার সঙ্গে যোগ হলো চাল উৎপাদন।

রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ ইতিমধ্যেই গোটা পৃথিবীতে তৈরি করেছে এক জটিল খাদ্যসংকট। সেই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে বহু দেশ। এই সমস্যার তালিকায় আরও একটি বিষয় যোগ হয়েছে, যা কপালে ভাঁজ ফেলছে বিশেষজ্ঞদের।

যেহেতু ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গম উৎপাদক, তাই এতদিন গোটা বিশ্বকে সামলাতে হচ্ছিল সেই সমস্যা। এখন তার সঙ্গে যোগ হলো চাল উৎপাদন। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী দেশ, এবং চলতি বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বৃষ্টিপাতের হার স্বাভাবিকের তুলনায় বেশ কম। বৃষ্টিপাতের হার এইভাবে হ্রাস পাওয়া সরাসরি প্রভাব ফেলেছে ধান উৎপাদনের ওপর। তার প্রভাব এতটাই যে, চাষের জায়গা কমে গেছে প্রায় ১৩ শতাংশ। সবথেকে চিন্তার বিষয় হলো, সেই স্থানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরপ্রদেশ, যে দু'টি রাজ্য সবথেকে বেশি ধান উৎপাদন করে।

ব্যবসায়ীদের মতে, একেই ভারত এই মুহূর্তে মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে বেশ কঠিন লড়াই করছে, তার ওপর যদি ধান উৎপাদন কমে যায়, তাহলে সরকার চাল রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে, ঠিক যেভাবে করা হয়েছিল গম ও চিনি রফতানির ওপর। সেই নিষেধাজ্ঞা চালু হলে শুধু সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমবে না, সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কোটি কোটি চাষি এবং এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষরা। ভারত এই মুহূর্তে পৃথিবীর ধানের চাহিদার ৪০ শতাংশ পূরণ করে, যা একটি বিরাট সংখ্যা।

আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না ভারতের সিদ্ধান্ত? বিশ্বজোড়া খাদ্যসংকটের জন্য দায়ী কে?

পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, ছত্তিশগড়ে এই চলতি বছরে স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টি হয়েছে অনেক কম। তার প্রভাবে ইতিমধ্যেই দাম বাড়তে শুরু করেছে চালের। সেই সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশ থেকে চাহিদা। এই মুহূর্তে চাল রফতানির বাজারে প্রতি টন বিক্রি করে দাম পাওয়া যায় ৩৬৫ ডলার। সেপ্টেম্বরে সেই দাম পৌঁছে যেতে পারে ৪০০ ডলারে।

ধান উৎপাদন এবং চালের চাহিদা সব থেকে বেশি এশিয়াতে। সেই কারণে এই মহাদেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য স্বাভাবিক হারে এর উৎপাদন খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়ার যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এর স্বাভাবিক উৎপাদন আরও বেশি প্রয়োজনীয় এবং তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ গম এবং ভুট্টা উৎপাদন ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত এই মুহূর্তে।

বিজ্ঞানী যদিও বলছেন, যে এখনও দু'মাস সময় রয়েছে। এর মধ্যে বৃষ্টিপাতের হার যদি বাড়ে, সেক্ষেত্রে অনেকটাই ক্ষতি এড়ানো যেতে পারে। অগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে পূর্বাভাস রয়েছে বৃষ্টিপাতের হার বৃদ্ধি পাওয়ার। সেক্ষেত্রে চিন্তার কারণ অনেকটাই কমবে।

ভারত বিশ্বের একশোটিরও বেশি দেশে চাল রফতানি করে। তার মধ্যে সবথেকে বেশি চাল পাঠানো হয় বাংলাদেশ, চিন, নেপাল এবং বেশ কিছু মধ্যপ্রাচ্যের দেশে।

তবে পরিস্থিতির সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। আমেরিকাতে গমের উৎপাদন ভালো হয়েছে এবং সেখান থেকে আগামী মাসে দেশে গম আসার কথা। ইউক্রেনও এই যুদ্ধের মধ্যেই আবার শুরু করতে চলেছে গম রফতানি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ধান উৎপাদনের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে, সরকারের উচিত ইথানল উৎপাদনের জন্যে চাল বরাদ্দ কমানো। জ্বালানির খরচ কমানোর জন্য সরকার গত কয়েক মাস জোর দিয়েছে ইথানল উৎপাদনে, যাতে ব্যবহার করা হচ্ছে চিনি এবং চাল। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, যেখানে দেশের মানুষ খাদ্যসংকটে ভুগছেন, পণ্যের দাম এত বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে এই পদক্ষেপ ঠিক কতটা যথাযথ?

জলবায়ু পরিবর্তন ইতিমধ্যেই মারাত্মক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে গোটা বিশ্বে। তাপপ্রবাহ, অতি বৃষ্টি, খরা। প্রায় সব জায়গাতেই তার জেরে ধাক্কা খাচ্ছে কৃষিকাজ। সব দেশের সরকার যদি এখনই সমস্যার গোড়ায় না পৌঁছতে পারে, তাহলে খাদ্য স‌ংকট উঠবে চরমে। সেই ভবিষ্যতের আশঙ্কা ক্রমে বাড়ছে আবিশ্ব।

More Articles