ফিলিস্তিনিদের বয়কট পথে বসাচ্ছে স্টারবাকস-কে, কতটা বিপদে আন্তর্জাতিক এই কফিখানা?

Starbucks: এবার নাকি সেই ইজরায়েলের প্রতি সমর্থন দেখানোর জন্যই ব্যাপক ক্ষতির মুখে মার্কিন এই কফি প্রস্তুতকারক সংস্থা। ক্রমশ নাকি তলানিতে ঠেকেছে তাদের আয়।

কফির জগতে প্রসিদ্ধ নাম স্টারবাকস। তবে শুধু প্রসিদ্ধ বললে তাকে কম বলা হবে, বিলাসবহুল কফি চেইনগুলির মধ্যে অন্যতম মার্কিন এই সংস্থা। সেই জনপ্রিয় কফিপ্রস্তুতকারক সংস্থা নাকি এবার বেশ বিপাকে। আর সেই বিপাকের জন্য দায়ী প্রায় চার মাস ধরে চলা ইজরায়েল-গাজা যুদ্ধ। কমতে কমতে তলানিতে ঠেকেছে স্টারবাকসের সেল। বিপুল ক্ষতির মুখে জনপ্রিয় এই কফি প্রস্তুতকারক সংস্থা।

সেই অক্টোবর মাসে ইজরায়েলে ঢুকে হামলা চালিয়েছিল প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। তার পরেই হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করে দেয় ইজরায়েল। তার পর থেকে হামলার পর হামলায় গাজাকে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইজরায়েল। ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল, ধর্মস্থান, শরণার্থী শিবির, কোনও কিছুই ছাড়েনি ইজরায়েল সেনা। গাজা তো বটেই, একই সঙ্গে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও প্যালেস্টাইনের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ধ্বংসলীলা চালিয়ে যাচ্ছে নেতানিয়াহু সেনা।

বিশ্বের প্রায় সবকটি দেশের শান্তির প্রস্তাবকে কার্যত ধুলিস্যাৎ করে যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছে ইজরায়েল। আমেরিকা ও ব্রিটেন ছাড়া প্রায় সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন দেশই সেই যুদ্ধের প্রতিবাদ করেছে। আর এই ইজরায়েল-গাজা যুদ্ধের আবহেই বিতর্কে জড়াই মার্কিন কফি প্রস্তুতকারক সংস্থা স্টারবাকস। প্রাথমিক ভাবে স্টারবাকসের শ্রমিক ইউনিয়নের তরফে প্যালেস্টাইনের পক্ষ নেওয়া হয়েছিল। কীভাবে একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর সমর্থন নিতে পারে স্টারবাকসের শ্রমিক ইউনিয়ন, সে নিয়ে ব্যপক বিতর্ক শুরু হয়। ফ্লোরিডার সেনেটর কফি চেইনটিকে তীব্র আক্রমণও করেন। রাতারাতি তার বিরোধিতা করে স্টারবাকস কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, শ্রমিক ইউনিয়নের বক্তব্যের দায়িত্ব তাদের একান্ত ব্যক্তিগত। তার দায় স্টারবাকসের নয়। রাতারাতি স্টারবাকস কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়ায়। তার ফল হয় আরও ভয়াবহ।

আরও পড়ুন: কফিতে রক্তের দাগ! ইজরায়েল প্যালেস্তাইনের যুদ্ধে কেন স্টারবাকস বয়কটের ডাক?

কিন্তু তাতেও বিতর্ক থামেনি। এর পর থেকেই 'স্টারবাকসের কফিতে রক্ত' এমন দাবি করে ব্যাপক প্রচার চলতে থাকে। সে সময় স্টারবাকস বয়কটেরও ডাক ওঠে বহু পক্ষ থেকে। ফ্লোরিডার সেনেটর এ-ও বলে বসেন, সমস্ত আমেরিকাবাসীর উচিত, ফিলিস্তিনি এই হামলার কড়া নিন্দা করা। তবে এবার নাকি সেই ইজরায়েলের প্রতি সমর্থন দেখানোর জন্যই ব্যাপক ক্ষতির মুখে মার্কিন এই কফি প্রস্তুতকারক সংস্থা। ক্রমশ নাকি তলানিতে ঠেকেছে তাদের আয়। বয়কটের বড়সড় প্রভাব পড়ছে স্টারবাকসের জনপ্রিয়তায়। যতদূর জানা গিয়েছে, গত ১৬ নভেম্বর থেকে সংস্থাটির শেয়ারের দাম ৮.৯৬ শতাংশ কমেছে। যা ১১ বিলিয়ন ডলারের সমান বলে জানিয়েছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকেরা। ১৯৯২ সালে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি সম্ভবত সবচেয়ে দীর্ঘ শেয়ারের পতন। স্টারবাকস বর্তমানে বার্ষিক সর্বোচ্চ ১১৫ ডলার থেকে নেমে শেয়ার প্রতি প্রায় ৯৫.৮০ ডলারে অবস্থান করছে।

Starbucks' weak earnings are a warning that boycotts could hurt

সমকামী বিবাহ থেকে শুরু করে সমস্ত জ্বলন্ত বিষয় নিয়েই বরাবর নিজেদের মতপ্রকাশ করে এসেছে স্টারবাকস। প্যালেস্টাইন-ইজরায়েল সঙ্কট নিয়ে কথা বলাও তার মধ্যেই একটি। তবে তা যে সংস্থাটিকে এমন বিপাকে ফেলতে পারে, তা কি ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পেরেছিলেন কর্তৃপক্ষ! সংস্থার ওয়েবসাইটে বারংবার জানানো হয়েছে, নিজের অবস্থান থেকে না সরেও তারা মানবতার পক্ষে। স্টারবাকসের সিইও লক্ষ্মণ নরসিমহান জানিয়েছেন, তিনি আশাবাদী যে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও গ্রাহকদের আচরণ পরিবর্তন সত্ত্বেও তারা গ্রাহকদের ফের ফিরিয়ে আনবেন। তবে অভিজ্ঞমহলের দাবি, গাজায় ইজরায়েলের আগ্রাসনকে সমর্থন করেই এবার বিপাকে স্টারবাকস। ফলে এই যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বজুড়ে, তা সংস্থার পক্ষে কাটিয়ে ওঠা যথেষ্ট কঠিন হবে বলেই মনে করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: সাত দিন ধরে টানা যোগাযোগহীন গাজা, ব্ল্যাকআউটই কি গণহত্যার নয়া ‘অস্ত্র’ ইজরায়েলের?

মধ্যপ্রাচ্যেও ব্যাপক ক্ষোভের মুখে পড়েছে স্টারবাকস। শুধু স্টারবাকসই নয়, একাধিক মার্কিন সংস্থাই মধ্যপ্রাচ্যে বয়কটের মুখে পড়েছে। পৃথিবী জুড়ে ৮৬টি দেশে অন্তত ৩৫ হাজারের বেশি শাখা রয়েছে স্টারবাকসের। যার মধ্যে বেশিরভাগই অবশ্য আমেরিকার। তবে গাজা-ইজরায়েল যুদ্ধের আবহে যে ভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে স্টারবাকসের শেয়ার, সেখান থেকে মোড় ঘুরিয়ে ফের পুরনো জায়গায় ফেরা সংস্থার পক্ষে সম্ভব হবে কিনা, যথেষ্ট সংশয়ে ওয়াকিবহাল মহল।

More Articles