সাত দিন ধরে টানা যোগাযোগহীন গাজা, ব্ল্যাকআউটই কি গণহত্যার নয়া 'অস্ত্র' ইজরায়েলের?

Israel War on Gaza: আপাতত গাজা স্ট্রিপ সম্পূর্ণ ভাবে অন্ধকার। এই নিয়ে প্রায় সাত দিন হতে চলল গাজায় টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভাবে বিপর্যস্ত।

ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে একশো দিন পেরিয়ে গিয়েছে এর মধ্যেই। তবে যুদ্ধে কোনও বিরতির সম্ভাবনা নেই এখনও। আপাতত গাজা স্ট্রিপ সম্পূর্ণ ভাবে অন্ধকার। এই নিয়ে প্রায় সাত দিন হতে চলল গাজায় টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভাবে বিপর্যস্ত। ফলে এই মুহূর্তে গাজা স্ট্রিপে ঠিক কী ঘটছে, তার হদিস পাচ্ছে না কেউ। কারণ ইচ্ছাকৃত ভাবে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয়েছে গাজাকে। এরই মধ্যে মুহুর্মুহু ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলা যেন লেগেই রয়েছে।

গাজা জুড়ে শুধু যুদ্ধের চিহ্ন। চারদিক জুড়ে শুধু গণকবর আর ধ্বংসস্তূপ। এর মধ্যে হামলার তীব্রতা দফায় দফায় আরও বাড়াচ্ছে ইজরায়েল। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের পরিস্থিতি ভাবনার বাইরে। সেই হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই অন্ধকার অবস্থার সুযোগ নিয়ে একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। হাসপাতালকে নিশানা করে নেমেছে একের পর এক আঘাত। ফলে হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে কার্যত।

এদিকে গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে ইজরায়েলকে কাঠগড়ায় তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে তার পরেও আগ্রাসন কমানো যায়নি বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকারের। এমনিতেই সব দিক থেকে খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে গাজা। যুদ্ধের সঙ্গে অবশ্যম্ভাবি ভাবে এসে জুটেছে খাদ্যসংকট। ওষুধ নেই, চিকিৎসা পরিষেবা নেই। তার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাও সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ এখন। বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা।

আরও পড়ুন: খিদের মার, শীতের ছোবল! যুদ্ধের একশো দিন পেরিয়ে যেমন আছে গাজা…

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, এই পরিস্থিতিতির সুযোগ আরও ধ্বংসের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে ইজরায়েল। ডিজিটাল নাগরিক অধিকার গ্রুপ অ্যাকসেস নাও ইন্তত তেমনটাই আশঙ্কা করেছে। ওই সংস্থার পলিসি ও অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর মারয়া ফাতাফতা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ইন্টারনেট বন্ধকে কখনও যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। গাজা উপত্যকায় যাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা যায়, তার জন্য আবেদন করেছেন একাধিক মানবাধিকার সংগঠন।

প্যালেস্টাইনের একটি অন্যতম ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা প্যালটেল জানিয়েছে, ইজরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় সমস্ত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ রূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্লাউডফ্লেয়ারের ব়্যাডারে ধরা পড়েছে সেখানকার টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিসের এই ভয়াবহ ছবি। ওয়াচডগ নেটব্লকসের তরফে জানানো হয়েছে, গত বৃহস্পতিবারই ১৪৪ ঘণ্টার কোটা পার করে গিয়েছে এই যোগাযোহীনতা। ইজরায়েল-হামাস দ্বন্দ্বে একাধিক বার গাজাকে যোগাযোগহীন করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে ইজরায়েল। উদ্দেশ্য একটাই, যাতে গাজার খবর বাইরে না পৌঁছয়।

তবে কি আন্তর্জাতিক আদালতে ওঠা গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে চাপে পড়েছে ইজরায়েল। এর আগে একাধিক বার রাষ্ট্রপুঞ্জে অন্যান্য দেশের আনা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে ইজরায়েল। আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো হাতে গোনা কয়েকটি রাষ্ট্র ছাড়া আর কোনও দেশই সমর্থন করেনি ইজরায়েলের এই যুদ্ধনীতিতে। তবে কি আন্তর্জাতিক আদালতে ওঠা অভিযোগকে ভিতরে ভিতরে আমল দিচ্ছে ইজরায়েল? সে কারণেই গাজার পরিস্থিতি বাইরের দুনিয়ার সামনে আসতে দিচ্ছে না নেতানিয়াহু সরকার। গোড়া থেকেই বারবার টেলিকমিউনিকেশন ভবনগুলিকে নিশানা করে হামলা চালিয়ে গিয়েছে ইজরায়েল। বারবার ব্ল্যাক আউটের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে গাজাকে। আর তার উদ্দেশ্য বুঝতে বোধহয় বিশেষ অসুবিধা হয় না।

আরও পড়ুন: গাজায় গণহত্যার দলিল হাতে আন্তর্জাতিক আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার সওয়াল, ন্যায়বিচার পাবে প্যালেস্টাইন?

এই সমস্ত আশঙ্কার মধ্যে ক্রমশ হয়রানি বাড়ছে গাজাবাসীর। একে তো মাথার উপর বোমারু বিমানের চক্কর, প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর আশঙ্কা। ইতিমধ্যেই দেশে শুরু হয়ে গিয়েছে খাদ্যসংকট। ওষুধপত্র থেকে শুরু করে ন্যূনতম চিকিৎসার সরঞ্জামটুকুও নেই গাজায়। মহিলা ও শিশুদের অবস্থা সবচেয়ে কঠিন। ইতিমধ্যেই গাজায় মৃতের সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে একটা বড় অংশ জুড়ে শিশু। কবে থামবে এই যুদ্ধ? আদৌ থামবে কি! সেই আশাটুকুও বোধহয় আর করতে পারছে না গাজাবাসী।

More Articles