৩২ বছর পর মৌন ভাঙছেন ধানবাদের বৃদ্ধা! কারণ জানলে অবাক হবেন

Ayodhya Ram Temple: মন্দির উদ্বোধনের খবর শোনার পর তিনি লিখে জানিয়েছেন, তাঁর জীবন শেষ। তাঁর রামলালা তাঁকে প্রাণপ্রতিষ্ঠার জন্য ডাক পাঠিয়েছেন।

আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন। চারদিকে সাজো সাজো রব। অযোধ্যা নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই দেশবাসীর। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ওই দিন গোটা দেশে প্রদীপ জ্বালিয়ে দীপাবলি পালন করতে। এদিকে অযোধ্যা থেকে প্রায় সাড়ে ছ'শো কিলোমিটার দূরে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে সেদিন ৩২ বছর পর কথা বলবেন এক পঁচাশির বৃদ্ধা। সেই যেদিন বাবরি ধ্বংস হল, সেদিন থেকে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন সরস্বতী দেবী। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যেদিন অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরি হবে, সেদিনই মৌনব্রত ভাঙবেন তিনি। আর সেই সুযোগ এল পাক্কা ৩২ বছর পর।

১৯৯২ থেকে ২০২৪, এই দীর্ঘ ৩২ বছর মুখ দিয়ে একটি শব্দও বের করেননি ধানবাদের খনিশহরের বাসিন্দা সরস্বতী দেবী। প্রায় তিন দশক আগে নিজের কাছে করা শপথ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে গিয়েছেন তিনি। অযোধ্যার পুণ্য মাটিতে রামমন্দির তৈরির আকাঙ্ক্ষা বুকে নিয়ে এতদিন একটি শব্দও মুখ থেকে বের করেননি তিনি। অবশেষে রামমন্দির উদ্বোধনের দিন অর্থাৎ ২২ জানুয়ারি ফের কথা বলবেন তিনি।

আরও পড়ুন: ভক্তদের রামলালা দর্শনের আশায় জল! কেন অযোধ্যা সিটি ট্যুর বাতিল করছে মন্দির ট্রাস্ট?

এলাকায় তাঁর পরিচিতি মৌনিমাতা নামে। চার মেয়ে-সহ আট সন্তানের জননী সরস্বতী দেবী। স্বামী দেবকীনন্দন আগরওয়ালের মৃত্যুর পর রামের নামেই জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তিনি। ১৯৯২ সালে বাবরি মন্দির যেদিন ধ্বংস হয়, সেদিন থেকেই মৌনব্রত নিয়েছিলেন সরস্বতীদেবী। বর্তমানে মেজো ছেলে নন্দলাল আগরওয়ালের সঙ্গেই থাকেন তিনি। ধানবাদের ভারত কোকিং কোল লিমিটেডের উচ্চপদস্থ কর্তা নন্দলাল। এতদিন ধরে পরিবারের সঙ্গে আকার ইঙ্গিতে নয় পেনকাগজ নিয়ে কথাবার্তা চালাতেন সরস্বতী দেবী।

jharkhand-woman-to-break-vow-of-silence-after-32-years-on-january-22

১৯৯০ সালে রামজন্মভূমি নিয়ে যখন দেশব্যাপী অশান্তি শুরু হয়, তখন থেকেই শুরু হয় সরস্বতী দেবীর গল্পটা। ১৯৯২ সাল নাগাদ মৌনব্রত নিলেন সরস্বতীদেবী। ২০০১ সালে মধ্যপ্রদেশের চিত্রকূট পাহাড়ে সাত মাসের তপস্যা করেন সরস্বতী দেবী। মনে করা হয়, চিত্রকূট পাহাড় সংলগ্ন ওই জায়গাতেই বনবাসের সময়টা কাটিয়েছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। ইতিমধ্যেই চারধাম, অযোধ্যা, কাশী, মথুরা, তিরুপতি বালাজি, সোমনাথ মন্দির ও বাবা বৈদ্যনাথ ধাম-সহ বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেছেন সরস্বতী দেবী।

jharkhand-woman-to-break-vow-of-silence-after-32-years-on-january-22

 

সম্প্রতি মন্দিরের উদ্বোধনের খবর শোনার পর তিনি কাগজ-পেন নিয়ে লিখে জানিয়েছেন, তাঁর জীবন শেষ। শেষপর্যন্ত তাঁর রামলালা তাঁকে প্রাণপ্রতিষ্ঠার জন্য ডাক পাঠিয়েছেন। তাঁর তপস্যা ও ধ্যান সফল হয়েছে শেষমেশ। তার সঙ্গেই রামনাম মুখে নিয়েই নীরবতা ভঙ্গের কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন:৩৯২টি স্তম্ভ, ৪৪টি ফটক থেকে এআই নিরাপত্তা! যে ভাবে সেজে উঠেছে অযোধ্যার রামমন্দির

২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামজন্মভূমিতে রামমন্দিরের উদ্বোধন। তার পর ২৪ জানুয়ারি থেকে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে মন্দির। উদ্বোধনের দিন উপস্থিত থাকার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ বহু হাইপ্রোফাইল মানুষজনের। থাকবেন তারকারাও। সেই নিয়ে তোড়জোরের শেষ নেই প্রশাসনের। নিরাপত্তার কথা ভেবে ইতিমধ্য়েই বাতিল করা হয়েছে ১৭ জানুয়ারি রামলালার অযোধ্যা ট্যুরের পরিকল্পনা। রামমন্দির ট্রাস্ট ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারাবার সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করেছেন, ওই দিন যেন সকলেই রামমন্দিরে ভিড় না জমান। তবে আদৌ মানুষ সেই অনুরোধ কতটা রাখবেন, তা নিয়ে বিস্তর ধন্ধে প্রশাসন। ওই দিন রামমন্দির চত্বরে লক্ষ লক্ষ ভক্ত সমাগমের আশঙ্কা রয়েছে।

সেই রামমন্দিরের উদ্বোধনে ডাক পেলেন কি রামভক্ত সরস্বতীদেবী? যাঁর জীবনের একটা বড় অংশই কেটে গেল রামমন্দিরের কথা ভেবে ভেবে। যিনি কার্যত জীবনের তিন দশক, আজীবনের সমস্ত কথাবার্তা সব উৎসর্গ করলেন রামজন্মভূমিতে মন্দির গড়ে ওঠার স্বপ্ন দেখে। তিনি কি স্বচক্ষে দেখবেন রামমন্দিরের উদ্বোধন। নাহ, তা অবশ্য জানা যায়নি।

More Articles