সমলিঙ্গে সম্পর্ক হলেই সোজা মৃত্যুদণ্ড! বিশ্বের এই দেশগুলিতে বিপন্ন LGBTQ অধিকার

Anti LGBTQ Law Death Penalty : যারা এই নতুন আইন মানবেন না, তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে। ‘অপরাধের পরিমাণ’ বিবেচনা করে কারও মৃত্যুদণ্ড অবধিও হতে পারে!

প্রেম হোক বা বিয়ে – যে কোনও সম্পর্কের কোনও ধর্ম, বর্ণ থাকে না। থাকে না কোনও লিঙ্গ। কেবলমাত্র পুরুষ আর মহিলা নয়, সমলিঙ্গের মানুষরাও একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারেন। প্রেমেও পড়তে পারেন, এমনকী হতে পারে বিয়েও। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে এমন অনেক দৃশ্যই দেখা গিয়েছে ভারত সহ গোটা বিশ্বে। এলজিবিটি আন্দোলন, মানুষ হিসেবে তাঁদের অধিকার, মর্যাদা, সম্মান – এসব নিয়ে বহু বছর ধরেই চলছে লড়াই। রামধনুও আলো পাক, স্বাধীনতা পাক, এমনটাই তাঁদের দাবি। কিন্তু সেই সূর্যের ওপরই ঘন মেঘ হয়ে হাজির হয় আইনের ফাঁস। আর সেখানে পড়ে রক্তাক্ত হতে হয় এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষদের। এখন অন্যান্য মানুষদের চোখে তাঁরা ‘অস্বাভাবিক’, যাওয়া-আসার পথে বাঁকা চোখে তাকায় তারা।

সম্প্রতি উগান্ডাও দেখল তেমন দৃশ্য। সম্প্রতি মঙ্গলবার, অর্থাৎ ২১ মার্চ সেখানকার সংসদে পাশ হয়েছে অ্যান্টি এলজিবিটিকিউ বিল। সেখানে পরিস্কার বলা হয়েছে, পুরুষ-পুরুষ বা দুই মহিলার সম্পর্ক হলে, সমলিঙ্গের কোনও সম্পর্ক তৈরি হলেই সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে দেখা হবে। কী শাস্তি? উগান্ডার মন্ত্রীদের বক্তব্য, যারা এই নতুন আইন মানবেন না, তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে। ‘অপরাধের পরিমাণ’ বিবেচনা করে কারও মৃত্যুদণ্ড অবধিও হতে পারে!

অনেক সময়ই বলা হয়, আমরা একবিংশ শতকের অতি আধুনিক যুগে বসবাস করছি। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি যেমন বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে, তেমনই মুছে যাচ্ছে প্রাচীন, ভ্রান্ত সব ধারণা, নিয়মকানুন। কিন্তু আধুনিকতা যে এখন সবটা ঠিক করতে পারেনি, মানবাধিকার যে এখনও বিশ বাঁও জলের নিচে, উগান্ডার এই ঘটনা তার প্রমাণ। এখনও সেই বিলে রাষ্ট্রপতি ইওয়েরি মুসাভেনি সই করেননি। রাষ্ট্রপতির সই এলেই সেটি আইনে পরিণত হবে। এদিকে সংসদের ভেতরও গুটিকয়েক মন্ত্রী এই আইনের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠের মতে, সমলিঙ্গে প্রেম বা সম্পর্ক শাস্তিযোগ্য অপরাধ, অস্বাভাবিকতার লক্ষণ!

অবশ্য কেবল নেতা-মন্ত্রীদের কথাই কেন বলা হবে। উগান্ডার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা এই বিলের স্বপক্ষে গলা ফাটাচ্ছেন। তাঁদের অধিকাংশের মতেই, এলজিবিটি আন্দোলন পাশ্চাত্যের একটা ধাঁধাঁ। এটা ‘স্বাভাবিক নিয়মের’ বিরুদ্ধে, তাই গে, লেসবিয়ান কিংবা রূপান্তরিত পুরুষ, নারীদের শাস্তি দেওয়াই উচিত! অবশ্য কেবল একা উগান্ডাকে দেখলেও হবে না। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলির রিপোর্ট বলে, আফ্রিকার অধিকাংশ দেশেই এলজিবিটি আন্দোলন, সমলিঙ্গে আকর্ষিত মানুষদের অপরাধীর দৃষ্টিতে দেখা হয়। বিবিসি-র একটি রিপোর্ট বলে, এখনও অবধি বিশ্বের ৬৯টি দেশে সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। তার অর্ধেক দেশই আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে পড়ছে! ২০১৪ সালেও উগান্ডায় সমকামী পুরুষদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, গোটা বিশ্বে তা নিয়ে প্রবল শোরগোলও হয়। কিন্তু অবস্থা যে বদলায়নি এতটুকুও, তার প্রমাণ এই আইন।

উগান্ডা ছাড়াও ইরান, নাইজেরিয়া, কাতার, সোমালিয়া, ইয়েমেন, সৌদি আরব, আফগানিস্তানের মতো দেশে সমকামিতা ঘৃণ্য অপরাধ। এসব জায়গায় শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হয়। তবে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসছে, মনে করছেন সমাজতাত্ত্বিকরা। কেন? অ্যাঙ্গোলা, গ্যাবন, বৎসোয়ানা, মোজাম্বিক, কেনিয়া, সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলি নিজেদের কড়া আইনে বদল এনেছে। ভারতেও সমকামিতা আর অপরাধ নয়। ব্রিটিশ কলোনিয়ালিজম বা ঔপনিবেশিকতাবাদ যতক্ষণ না পুরোপুরি যাচ্ছে, মানুশের মধ্যে সচেতনতা, শিক্ষা না পৌঁছচ্ছে, ততক্ষণ আন্দোলন জারি থাকবে। প্রবল অনিশ্চয়তা, হাহাকার আর অন্ধকার ঘরের কোণের পাশাপাশি মনের ভেতর এই আশাও জিইয়ে রাখছেন উগান্ডার সমকামী মানুষরা। রামধনুর সূর্য উঠবেই সেখানে।  

More Articles