ভোটের আগেই কেন ভাইকে 'ত্যাজ্য' করলেন মমতা?

Mamata Banerjee-Babun Banerjee: কার্যত ভাই হিসেবে বাবুনকে মানতেই আপত্তি জানিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, “আজ থেকে আমার ভাই হিসেবে ওর পরিচয় দেবেন না। পৃথক নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতেই পারেন। আমার নামটা ব্যবহার করবেন না।"

ভোটের আগে রাজনীতির ময়দানে কত রংই তো বদলায়। লোকসভা ভোটের ঢাকে কাঠি পড়তে না পড়তেই একের পর এক চমক। এবার নিজের ভাইয়ের সঙ্গেই সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে বসলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরকন্যায় সাংবাদিক বৈঠকে সাফ জানিয়ে দেন মমতা, 'আজ থেকে সব সম্পর্ক ছিন্ন করলাম। আর কেউ ওঁকে আমার ভাই হিসাবে পরিচয় দেবেন না। আজ থেকে সব সম্পর্ক ছেদ।' কিন্তু হঠাৎ এমন হলটা কী যে আদরের ছোটভাইয়ের দিক থেকে মুখ ফেরালেন দিদি।

শোনা গিয়েছে, লোকসভা ভোটের মুখেই গোঁসা হয়েছিল ভাই বাবুন বন্দ্য়োপাধ্যায়ের। হাওড়ার তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে নিয়ে সরব হন তিনি। এমনকী হাওড়ায় নির্দল হয়ে ভোটে লড়ার বার্তাও দেন। আপাতত দিল্লিতে রয়েছেন মমতার ভাই। তাঁর বিজেপিতে যোগদান নিয়েও জল্পনা ছড়ায়। আর তাতেই ক্ষুব্ধ হন তৃণণূল সুপ্রিমো।

আরও পড়ুন: টিকিট পাননি, পাঁচ বছরে যাদবপুরের জন্য কী করলেন মিমি চক্রবর্তী?

বুধবার উত্তরকন্যা থেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তাঁকে ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মমতা সাফ জানান, “আপনাদের একটা কথা বলি। এটা আমি শুনেছি। আমি যে দিন থেকে পার্টি করি, কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে কাজ করি। আমার পরিবার বলে কিছু নেই, আমার পরিবার মা-মাটি-মানুষের পরিবার। “আমাদের পরিবারের প্রায় ৩২ জন মেম্বার আছে। আমাদের কেউ কিন্তু এরকম নয়। আমি সরাসরি বলছি, বড় হলে কারও কারও লোভ একটু বেশি বেড়ে যায়। পরিবারটাকে বাদ দিয়ে যে যার খেলা খেলুক। আমার পরিবারের ও কোনও মেম্বার বলে আমি মনে করি না।” আরও স্পষ্ট করে মমতা বলেন, “আজ থেকে আমি সব সম্পর্ক শেষ করলাম। শুধু আমি নই, মা-মাটি-মানুষের পরিবারেরও যারা আছে, তাদের সবার সঙ্গে ওর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল।”

কার্যত ভাই হিসেবে বাবুনকে মানতেই আপত্তি জানিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, “আজ থেকে আমার ভাই হিসেবে ওর পরিচয় দেবেন না। পৃথক নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতেই পারেন। আমার নামটা ব্যবহার করবেন না। সব সম্পর্ক আমি শেষ করে দিয়েছি। কোনও সম্পর্ক নেই। আমাদের দল যাকে প্রার্থী করেছে, তিনিই আমাদের প্রার্থী। প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় অর্জুন পুরস্কার প্রাপ্ত।” অনেক দিন ধরেই যে বাবুনের নামে অভিযোগ জমা হয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছে। নিজেও বাবুনের কাজ নিয়ে বেশ অখুশি ছিলেন মমতা। এদিন তিনি জানান, “যে ভদ্রলোকের নাম আপনারা বলছেন, তার অনেক কাজকর্মই অনেক দিন থেকে আমি পছন্দ করি না। আমি অন্যায় কখনও সহ্য করি না। কিন্তু সবাই তো বাইরে সব বলতে পারে না। অনেক সময় বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না।”

বাবুনের বিজেপিতে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা শুনে আরও রেগে যান তৃণমূল সুপ্রিমো। তাঁর কথায়, “যে যেখানে ইচ্ছে যেতে পারে। কিছু লোক আছে, যাদের ভোট এলে কাউন্সিলরেরও টিকিট চাই, এমএলএ-রও টিকিট চাই, এমপি ভোটেও দাঁড়াতে হবে। আমাদের পরিবারের সবাই যদি বলে ভোটে টিকিট চাই, তাহলে তো আমি পরিবারতন্ত্র করে ফেলব। আমি পরিবারতন্ত্র করি না, মানুষতন্ত্র করি। সবাইকে বলব, ওর সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক ছিল ভুলে যান। যে যেখানে খুশি লড়াই করতে পারে। আমি এত লোভী লোকদের পছন্দ করি না। প্রত্যেকটা ইলেকশনে অশান্তি করেছে। ওর পাশে যেন আমাদের পরিবারের নাম না থাকে।”

এদিকে দিদি বিরূপ হতেই সুর বদলালেন বাবুন। বুধবার সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, "ভুল করেছি বলেই দিদি বকেছে। দিদির সঙ্গে দেখা করে সব মিটিয়ে নেব।" বুধবার সকালে দিল্লি থেকে হাওড়া কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে লড়বেন বলে ঘোষণা করেছিলেন বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়। হাওড়ার সাংসদ তথা তৃণমূলপ্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। এরপর শিলিগুড়ি থেকে সরাসরি 'লোভী' বলে ভাইয়ের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মমতা। সমস্ত সম্পর্ক ছিন্নের কথাও বলেছেন। যদিও সে কথা কানে যেতেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে পড়েছে ভাই বাবুন। এদিন বাবুনবাবু বলেন, ‘দিদি যা বলেছে, আশীর্বাদ হিসাবে নিচ্ছি। দিদি আমার কাছে ভগবান। অভিভাববক হিসাবে ঠিক বলেছে। দিদি আমার অভিভাবক। দিদি আমাকে মানুষ করেছে। দিদি যা বলেছে ঠিক বলেছে। গিয়ে দিদির সঙ্গে দেখা করব। আমি সব শুনেছি। আমি হয়তো ভুল করেছি, সেই জন্যই দিদি বলেছে’। তিনি এ-ও বলেন, "হাওড়া থেকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়াচ্ছি না।"

আরও পড়ুন:দেবাংশু না অভিজিৎ, তমলুকে ভোটের লড়াইয়ে এগিয়ে কে?

লোকসভা ভোটের আর দেরি নেই। এই পরিস্থিতিতে বাবুন যতই ড্যামেজ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করুন না কেন, ভাইয়ের প্রতি বীতশ্রদ্ধ মমতার মন কি গলবে আদৌ। এমনিতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধেও কমবেশি পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ ওঠে। ভোটের আগে সেই বদনাম ঘোঁচাতেই কি নিজের ভাইয়ের প্রতি এমন বার্তা দিলেন মমতা? উঠেছে একাধিক প্রশ্নই।

 

More Articles