কুস্তি থেকে হঠাৎই সরে দাঁড়ালেন সাক্ষী মালিক! নেপথ্যে কি ব্রিজভূষণের কলকাঠি?

Brij Bhushan's aide Sanjay Singh becomes new WFI president: ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে কুস্তিগিরদের যৌনহেনস্থার অভিযোগ ওঠার পরে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল পদ থেকে। ঠিক হয়, ভোটের মাধ্যমে নয়া প্রেসিডেন্ট বেছে নেওয়া হবে।

একদিন সেই কুস্তি লড়েই দেশের জন্য বিরাট সম্মান ছিনিয়ে এনেছিলেন। ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন ভারতীয় কুস্তিগির সাক্ষী মালিক। সেই সাক্ষী কুস্তি ছাড়ছেন। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের সামনে ঘোষণা করে দিলেন তিনি। রেসলিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (WFI)-র প্রেসিডেন্ট পদে সঞ্জয় সিং নির্বাচিত হওয়ার পরেই এই সিদ্ধান্ত। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের সামনে এ কথা জানান সাক্ষী নিজেই। 

রেসলিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংকে নিয়ে এর আগে কম বিতর্ক হয়নি। ফেডারেশনে কুস্তির জন্য আসা মেয়েদের সঙ্গে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার জন গড়িয়েছিল অনেক দূর। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে সম্মিলিত ভাবে প্রতিবাদে নেমেছিলেন সাক্ষী, বীনেশ ফোগটরা। চল্লিশ দিন রাস্তায় কাটান তাঁরা। গোটা দেশ পাশে ছিল সাক্ষীদের। ব্রিজভূষণের পরে ফেডারেশনের নতুন প্রেসিডেন্ট হলেন ব্রিজভূষণ-ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় সিং।

আরও পড়ুন: নতুন সংসদ ভবন হোক বা কুস্তিগীরদের অবজ্ঞা— বিজেপির চাল তবে সফল?

ফেডারেশনের শীর্ষপদে সঞ্জয়ের নির্বাচিত হওয়ায় ভেঙে পড়েছেন সেই আন্দোলনে লড়া প্রতিটি কুস্তিগির। এদিন সাক্ষী জানান, "যদি ব্রিজভূষণের বিজনেস পার্টনার ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন, তাহলে আমি কুস্তি ছাড়লাম।" একই সুর শোনা গিয়েছে তারকা কুস্তিগির বিনেশ ফোগটের গলাতেও। তিনি জানান, কুস্তির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। সমস্ত আশা শেষ। নিজেদের হতাশা, দুঃখ, ক্ষোভের কথা তাঁরা কার কাছে গিয়ে জানাবেন জানেন না।

ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে কুস্তিগিরদের যৌনহেনস্থার অভিযোগ ওঠার পরে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল পদ থেকে। ঠিক হয়, ভোটের মাধ্যমে নয়া প্রেসিডেন্ট বেছে নেওয়া হবে। তবে সেই গণতান্ত্রিক ভোটপ্রক্রিয়াতেও দেখা গেল, কিছুই বদলালো না। ব্রিজভূষণের জায়গা ফের ফেডারেশনের শীর্ষে এলেন তাঁরই ঘনিষ্ঠ সহায়ক সঞ্জয় সিং। তবে এমনটা বোধহয় আঁচ করা গিয়েছিল আগেই। সঞ্জয়ই যে পরবর্তী সভাপতি হতে চলেছেন, এমন সম্ভবনার কথা শোনা গিয়েছিল খোদ ব্রিজভূষণের মুখেই। আর ঘটলও তেমনটাই।

চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকেই ভোট হবে হবে শোনা যাচ্ছিল। অবশেষে সেই ভোট হল ২১ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার। ভোটাভুটির পর্ব মিটতেই হাতে আসে ভোটগণনার রিপোর্ট। ফেডারেশনের মোট ১৫টি পদের জন্য ভোটাভুটি হয়েছিল। সভাপতি ছাড়াও কোষাধ্যক্ষ, সেক্রেটারি-জেনারেল, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টের মতো বহু পদের জন্যও এদিন ভোটগ্রহণ হয়। সঞ্জয় সিংয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কমনওয়েলথ স্বর্ণপদক জয়ী কুস্তিগির অনিতা শেওরান। বর্তমানে ত্তরপ্রদেশ কুস্তি ফেডারেশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট তিনি। সাক্ষী মালিক থেকে শপরপ করে বজরং পুনিয়া, বিনেশ ফোগটের মতো অনেকেই ছিলেন তাঁর সমর্থনে। তবে শেষপর্যন্ত জয় হয়েছে ক্ষমতারই।

হবেই বা না কেন! বিজেপির হেবিওয়েট নেতা ব্রিজভূষণের মাথায় রয়েছে ক্ষমতাবানের আশীর্বাদী হাত। ব্রিজভূষণ আবার দাপুটে হিন্দুত্ববাদী হিসেবেও পরিচিত। ফলে তাকে ঠেকায় কার সাধ্য! ছ'বারের সাংসদকে তাই ফেডারেশন থেকে সরানো গেলেও নিজের সহকারীটিকে চেয়ারে বসিয়ে পুতুলনাচের সুতোটি নিজের হাতেই রাখলেন ব্রিজভূষণ। সাক্ষীর অবসর নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ভোটের সঙ্গে তার কোনও যোগ নেই। এমনকী এ ঘটনার সঙ্গে তাঁরও কোনও যোগ রয়েছে বলে স্বীকার করেন না ব্রিজভূষণ।

আরও পড়ুন: মহিলা কুস্তিগীরদের দিনের পর দিন যৌন হেনস্থার অভিযোগ! কে এই বিজেপির বাহুবলী ব্রিজ ভূষণ?

জোর যার, মুলুক যে তারই এ তো আর কোনও নতুন কথা নয়। তাই দেশের জন্য সোনা-রূপো-ব্রোঞ্জ জিতে আনা খেলোয়ারদের দাবিদাওয়াটুকু পড়ে থাকে যন্তরমন্তরের সামনের রাস্তায়। যেখানে সুবিচারের আশায় বহু বিনিদ্র রাত জেগেছিলেন সাক্ষী, বিনেশরা। সেই সব রণ-রক্ত-ঘাম মিথ্যে হয়ে যায় এমন ক্ষমতার সামনে এসে। ফলে সরে যেতে হয় সাক্ষীদের। যে খেলার মাধ্যমে দেশের মুখ বিশ্বের দরবারে উজ্জ্বল করেছিলেন একদিন, একজন যৌনহেনস্থায় অভিযুক্তের সামনে সেই মুকুট নামিয়ে রাখতে হয় ঘাসে। সত্যি! দেশের জন্য এর চেয়ে বড় লজ্জার কথা বোধহয় আর হয় না!

More Articles