তরুণ কৃষকের মৃত্যুতে আগুনে ঘি! ভোটের আগে যে পথে এগোচ্ছে দেশের কৃষক আন্দোলন
Farmer's Protest: বুধবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে শুভকরণের। সেই ঘটনার প্রতিবাদে সংযুক্ত কিসান মোর্চার তরফে শুক্রবার 'ব্ল্যাক ফ্রাইডে' পালনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
কৃষক আন্দোলনের ঢেউ ক্রমশ বড় হচ্ছে দেশ জুড়ে। এক দিন আগেই বিক্ষোভরত এক তরুণ কৃষকের মৃত্যু হয়েছে পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তে। যার জেরে নয়া মাত্রা পেয়েছে এই বিক্ষোভ। ফেব্রুয়ারির গোড়া থেকেই ফের একাধিক দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছেন কৃষকেরা। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য-সহ একাধিক দাবি রয়েছে তাদের। ইতিমধ্যেই সেই সব দাবি নিয়ে চার-চার বার আলোচনায় বসেছেন কৃষকনেতারা। তবে এখনও কোনও সমাধানসূত্র তো মেলেইনি, বরং প্রতিদিন আরও একটু একটু করে কঠিন হচ্ছে পরিস্থিতি।
পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্ত থেকে হাজার হাজার কৃষক দিল্লি চলো আন্দোলন শুরু করেছেন। বুধবার পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তে পুলিশি সংঘর্ষে নিহত হন শুভকরণ সিং নামে বছর বাইশের এক কৃষক। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি খানউরি সীমান্তে কৃষক আন্দোলনে শামিল হন শুভকরণ। দিল্লির ধারেকাছেও যাতে পৌঁছতে না পারেন কৃষকেরা, তার জন্য চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখছে না প্রশাসন। ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে দিল্লি জুড়ে। নিরাপত্তায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে রাজধানী। পঞ্জাব ও হরিয়ানা সীমান্ত থেকে এগোতে গেলেই কৃষকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধছে কৃষকদের। ছোড়া হচ্ছে কাঁদানে গ্যাস, শেল। আর তেমনই একটি সংঘর্ষে জড়িয়ে বুধবার মৃত্যু হয়েছে শুভকরণের। সেই ঘটনার প্রতিবাদে সংযুক্ত কিসান মোর্চার তরফে শুক্রবার 'ব্ল্যাক ফ্রাইডে' পালনের ডাক দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই আন্দোলনে যোগ দেবে তারা। অন্যদিকে, ভারতীয় কিসান ইউনিয়নে (বিকেইউ) নেতা রাকেশ টিকাইত দিল্লিরক দিকে ট্র্যাক্টর মিছিল করার ডাক দিয়েছেন। ২০২০ সাল থেকেই কৃষিআইনের বিরোধিতায় চল্লিশটিরও বেশি কৃষক ইউনিয়ন পথে নেমেছে। ২০২১ সালেও উস্কে উঠেছিল বিক্ষোভ। সেই বিক্ষোভের মুখে পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছিল সরকার।
আরও পড়ুন: হকের দাবিতে লড়তে গিয়ে ২২ বছরের তরুণ কৃষকের মৃত্যু! এই আন্দোলন বিপাকে ফেলবে বিজেপিকে?
খানাউরি সীমান্তে আন্দোলনরত যুবকের মৃত্যুর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের না করা নিয়ে পঞ্জাব সরকারকে নিশানা করেছে পঞ্জাব কিসান মজদুর সংগ্রাম কমিটি। সরকার যে ভাবে শহীদদের অবমাননা করেছে তা নিন্দনীয় বলে মন্তব্য করেছেন পাঞ্জাব কিষাণ মজদুর সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক সারওয়ান সিং পান্ধের। এদিকে, ফিল্লাউরের কাছে অমৃতসর-দিল্লি জাতীয় মহাসড়ক, ভোগপুরে জলন্ধর-পাঠানকোট মহাসড়ক, শাহকোটের কাছে জালন্ধর-মোগা সড়ক এবং তরন তারন শহরের কাছে অমৃতসর-বাথিন্দা জাতীয় মহাসড়ক অবরোধ করে শুক্রবার পঞ্জাবের কৃষকেরা। প্রায় দু ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে অবরোধ। হরিয়ানাতেও দেখা গিয়েছে একই ছবি। সেখানেও কৃষকরা ম্বালা, কুরুক্ষেত্র, কারনাল, যমুনানগর, ভিওয়ানি, হিসার, রোহতক, জিন্দ এবং রাজ্যের অন্যান্য অংশ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়। যার ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে ওই সব এলাকায়।
শুক্রবার সংযুক্ত কিসান মোর্চার তরফে জনআক্রোশ সমাবেশের ডাক তো দেওয়া হয়েইছে। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি দেশ জুড়ে ট্র্যাক্টর সমাবেশ ও ১৪ মার্চ দিল্লির রামলীলা ময়দানে একটি মহাপঞ্চায়েতের আয়োজন করা হয়েছে। বিকেইউ নেতা রাকেশ টিকাইত বলেন, কৃষকরা ট্রাক্টর নিয়ে মহাসড়ক ধরে দিল্লি যাবেন। এটি হবে একদিনের কর্মসূচি।হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার এবং রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করার দাবি জানিয়েছে পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তে আন্দোলনকারী কৃষকের । এসকেএম নেতা বলবীর সিং রাজেওয়ালও খট্টর ও ভিজের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন:কৃষকদের ফের আলোচনায় বসার ডাক! ভোটের মুখে অবস্থান থেকে সরবে বিজেপি সরকার?
সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি হলে আন্দোলনরত কৃষকদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। শাপাশি বিক্ষোভকারীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সিজ করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছে হপিয়ানা পুলিশ। হরিয়ানা সংলগ্ন শম্ভু সীমান্তে কৃষকেরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে। ছোড়া হয় পাথর। তাতে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের পাশাপাশি সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফে। শুধু ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দাবিই নয়, কৃষি ঋণ মকুব ছাড়াও একাধিক দাবি রয়েছে কৃষকদের। ইতিমধ্যেই সেসব সমাধানের জন্য আরও একবার কৃষকনেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছে সরকারপক্ষ। কৃষক স্বার্থ রক্ষার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন কৃষকনেতা অর্জুন মুন্ডা। তবে আদৌ সেই পথে সমাধান মিলবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়প্রকাশ করছেন অভিজ্ঞমহল। আর তরুণ কৃষকের মৃত্যু ঘিরে কার্যত কৃষকদের আন্দোলনে ঘি পড়েছে। ভোটের আগে এই বিক্ষোভ বিজেপির ঠিক কতটা দুশ্চিন্তার কারণ হয়, সেটাই ভাবাচ্ছে ওয়াকিবহাল মহলকে।