কৃষকদের ফের আলোচনায় বসার ডাক! ভোটের মুখে অবস্থান থেকে সরবে বিজেপি সরকার?

Farmers’ protest 2024: গত ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশে ছোড়া কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটে অন্তত ৬০ জন জখম হয়েছেন বলে খবর। ওই ঘটনায় দুজন চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন এবং হৃদরোগে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

লোকসভা ভোটের আগে ক্রমশ কেন্দ্রের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কৃষক আন্দোলন। এর আগে একাধিক বার কৃষক বিক্ষোভের মুখে পড়ে নিজের অবস্থান থেকে পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্র সরকার। ফের আরও একবার উস্কে উঠেছে কৃষকদের সেই ক্ষোভ। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যবৃদ্ধি-সহ একাধিক দাবিতে সরব তারা। ইতিমধ্যেই কৃষকনেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে দেশের শীর্ষনেতারা। তবে তাতেও কোনও রকম সমাধানসূত্র মেলেনি।

ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু হয়েছে কৃষকদের দিল্লি চলো আন্দোলন। সেই আন্দোলনকে প্রতিহত করতে গোড়া থেকেই কড়া অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। দিল্লিকে কার্যত দুর্গে পরিণত করা হয়েছে। ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্ত। দিল্লিতে জারি করা হয়েছে এক মাসের ১৪৪ ধারা। কোনও রকম মিছিল, জমায়েতের উপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তবে এত কিছু করেও রোখা যাচ্ছে না কৃষক আন্দোলনের ঢেউ। শুধু দিল্লি নয়, হরিয়ানা ও পঞ্জাবেও প্রশাসন সক্রিয়। বুধবার সকাল এগারোটা নাগাদ দিল্লি সীমান্ত লাগোয়া হরিয়ানা শম্ভু ও খানাউরি থেকে ফের হাঁটতে শুরু করেছেন কৃষকেরা। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকেই পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় অস্থায়ী শিবির বানিয়ে রয়েছেন। এখনও পর্যন্ত একাধিক বার পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে আন্দোলনরত কৃষকেরা। ছোড়া হয়েছে কাঁদানে গ্যাস থেকে জলকামান। অসংখ্য কৃষকের জখম হওয়ার খবর মিলেছে এখনও পর্যন্ত।

আরও পড়ুন: জারি ১৪৪ ধারা, ভোটের আগে দিল্লির পারদ চড়াছে কৃষক বিক্ষোভের আঁচ

এর আগে বেশ কয়েক বার অশান্তির খবর মিলেছে শম্ভু এলাকা থেকে। তাই আর ঝুঁকি নিতে চাইছে না সরকার। বুধবার শম্ভু এলাকায় অন্তত সাড়ে ৩ হাজার পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে দিল্লিতে ১,২০০ নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কৃষক সংগঠন কিসান মজদুর মোর্চা ও সংযুক্ত কিসান মোর্চা (অরাজনৈতিক)-র 'দিল্লি চলো' অভিযান থামাতে কার্যত রাজধানী ও তার সংলগ্ন পঞ্জাব ও হরিয়ানা সীমান্তকে মুড়ে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তা বলয়ে। সংঘর্ষজনীত দুর্ঘটনা পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজপুরা ও শম্ভু এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে ২০টি অ্যাম্বুলেন্স ও ধাবি গুজরন এলাকার কাছে খানাউরি সীমান্তে ১২টি অ্যাম্বুল্যান্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। অন্তত ১৮টি ডিউটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং আট জন পঞ্জাব সিভিল সার্ভিস (PCS) অফিসার মোতায়েন করা হয়েছে ওই এলাকায় স্পেশাল এগজিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে।

গত ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশে ছোড়া কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটে অন্তত ৬০ জন জখম হয়েছেন বলে খবর। ওই ঘটনায় দুজন চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন এবং হৃদরোগে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে শম্ভু সীমান্তে এক্সক্যাভেশন মেশিন এনে ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন কৃষকেরা। সে সময় দুই পুলিশকর্মী জখম হয় বলে খবর। এদিকে, আন্দোলনের পথে থেকে সরে এসে আলোচনার পথেই সমাধান খুঁজতে চাইছে সরকার। ইতিমধ্যেই সরকারের সঙ্গে চার দফা আলোচনা সারা হয়ে গেছে। কৃষক নেতাদের সঙ্গে চতুর্থ রাউন্ডের আলোচনায় তিন মন্ত্রীর প্যানেল প্রস্তাব করেছিল যে সরকারি সংস্থাগুলো কৃষকদের সঙ্গে একটি চুক্তির পর পাঁচ বছরেরর জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ডাল, ভুট্টা ও তুলা কিনবে। তবে সরকারের সেই প্রস্তাবে রাজি নয় কৃষকপক্ষ। তাঁদের ফের আলোচনায় বসার জন্য ডাক দিয়েছে সরকার। কৃষিমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা ফের আলোচনার ডাক দিয়েছেন ইতিমধ্যে। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য-সহ সমস্ত রকম আলোচনাতেই রাজি সরকার।

আরও পড়ুন: দিল্লি যেন ‘দুর্গ’! লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির পাশা পাল্টে দিতে পারে কৃষক-বিক্ষোভ?

পঞ্চম দফার আলোচনায় কি মিলবে সমাধানসূত্র আদৌ? আন্দোলন থেকে সরিয়ে আনা যাবে কৃষকদের। সেই উত্তর অবশ্য এখনই মিলছে না। গোড়া থেকেই অবস্থানে অনড় থাকার কথা জানিয়ে এসেছে মোদি সরকার। গত দু'বার কৃষক আন্দোলনের জোরের মুখে নতিস্বীকার করতে হয়েছিল সরকারকে। নতুন কৃষিআইনও প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় সরকার। তবে এবার তেমন পরিস্থিতি যাতে আদৌ তৈরি না হয়, তার জন্য গোড়া থেকেই নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল রাজধানী। কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি পদে পদে বাধা তৈরি করেছে প্রশাসন। তবে তা সত্ত্বেও একেবারে রুখে দেওয়া যায়নি কৃষকদের ঢেউকে। শেষপর্যন্ত আলোচনাতেই কি মিলবে রফাসূত্র? লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির ব্যালটবাক্সে কতটা প্রভাব ফেলবে এই ঘনিয়ে ওঠা কৃষক আন্দোলন? আগের বারের মতোই কি পিছু হঠতে হবে সরকারকে। প্রশ্ন উঠেছে নানামহলে।

More Articles