'তালপাতার সেপাই'! অভিষেকে এত কেন ক্ষুব্ধ 'বিজেপি'র অভিজিৎ?
Abhijt Ganguly vs Abishek Banerjee: দুষ্কৃতীর বেশি কিছু মনে করি না'— নাম না করেই কার্যত অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়কে এই ভাষাতেই আক্রমণ করেছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
বিচারপতি পদ থেকে মঙ্গলবার শেষপর্যন্ত ইস্তফা দিয়েই দিলেন। একই সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণাও করে দিলেন তাঁর বিজেপিতে যাওয়ার কথা। সব ঠিক থাকলে সম্ভবত আগামী ৭ মার্চ বিজেপিতে যোগ দেবেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এদিন পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর সাংবাদিক বৈঠক করেন অভিজিৎ। আর সেখানেই নাম না করিয়ে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন প্রাক্তন বিচারপতি।
বরাবরই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ঝুড়ি ঝুড়ি প্রশংসা করতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম শুনলেই তেলেবেগুণে জ্বলে ওঠেন অভিজিৎবাবু। দিন কয়েক আগেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজনীতিক বলে মানতে অস্বীকার করেছিলেন তিনি। এদিন সংবাদিক সম্মেলনেও একই সুর শোনা গেল প্রাক্তন বিচারপতির মুখে।
আরও পড়ুন: ঘনিষ্ঠতা সত্ত্বেও কেন সিপিএম বা কংগ্রেসে নয়? যা জানালেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
'দুষ্কৃতীর বেশি কিছু মনে করি না'— নাম না করেই কার্যত অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়কে এই ভাষাতেই আক্রমণ করেছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সাংবাদিকদের বারবার জিজ্ঞাসা সত্ত্বেও নাম করতে রাজি হননি প্রাক্তন বিচারপতি। বরং বলেছেন, ওই নামটাকেই নাকি তিনি অপভাষা বলে মবে করেন। মমতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেও কেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের প্রতি তাঁর এত ক্ষোভ। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে একাধিক বার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে 'তালপাতার সেপাই' বলে উল্লেখ করেছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এদিন নারদাকাণ্ডকে গোটাটাই চক্রান্ত বলে দাবি করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, 'একজন তালপাতার সেপাই তৃণমূলের সিনিয়র নেতাদের বিপদে ফেলার জন্য নারদকাণ্ডে চক্রান্ত করেছিল।' বিচারপতি থাকাকালীনই শুভেন্দু অধিকারীর পক্ষ নিয়ে কথা বলতে শোনা গিয়েছিল তাঁকে। এদিন আরও একবার সেই সুরই শোনা গেল তাঁর মুখে। রাজ্যের বিরোধী নেতা বিজেপি শুভেন্দু অধিকারীকে আরও একবার ক্লিনচিট দিয়ে তিনি জানান, 'তালপাতার সেপাইয়ের চক্রান্তে'ই বিপাকে ফেলা হয়েছিল শুভেন্দুকে।
লোকসভা ভোটে অভিষেক বনাম অভিজিতের মুখোমুখি লড়াইয়ের সম্ভাবনা ঘিরে 'প্রাক্তন' বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘দাঁড়ালে দাঁড়াবেন। আমি কি ভয়ে পালিয়ে যাব? বিজেপি যদি আমায় তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড় করায়, আমি কি ভয়ে পালিয়ে যাব? আমি দেখিয়ে দেব, তাঁর দুর্বৃত্ত দলকে কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়। তাঁর পরিষ্কার একটা দুর্বৃত্ত দল আছে ডায়মন্ড হারবারে। তাঁদের মোকাবিলা করেই ডায়মন্ড হারবারে তাঁকে লাখ-লাখ ভোটে হারাব।’
বিচারপতি হিসেবে ইস্তফাপত্র জমা দেওয়ার পরেই এদিন সাংবাদিক বৈঠক করেন অভিজিৎবাবু। সেখানে বিজেপিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দেওয়ার খবর দিয়েই তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে দেখা যায় তাঁকে। তাঁর কথায়, 'তৃণমূলের সংস্কৃতিই হল বিচারপতিকে আক্রমণ করা। রায় সম্বন্ধে কোনও আপত্তি থাকলে তা জানানোর আলাদা পথ আছে। আমার মনে হয় এদের পরিবার এবং শিক্ষা-দীক্ষায় সমস্যা আছে।' তৃণমূলের উদ্দেশে কড়া আক্রমণ শানিয়ে অভিজিৎবাবু জানান, তৃণমূলের এই ধরনের মন্তব্যই তাঁকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে। একই সঙ্গে তৃণমূলের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন বিচারপতি। তিনি বক্তব্য, ২০০৯-এ সিপিএম -এর যে অবস্থা হয়েছিল ২০২৪-এ তৃণমূলের সেই অবস্থা হবে। এমনকী ২০২৬ পর্যন্ত তৃণমূল দলটা আদৌ টিকবে কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন প্রাক্তন বিচারপতি।
আরও পড়ুন:গেরুয়া শরণেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়! কেন বিজেপিকে বেছে নিলেন প্রাক্তন বিচারপতি?
কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, মেদিনীপুরের তমলুক কেন্দ্র থেকেই আগামী লোকসভা ভোটে লড়তে চলেছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে এ ব্যাপারে পাকা খবর কিছু কানে আসেনি এখনও। তার মধ্যে এদিন ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্র থেকে অভিষেকের বিরুদ্ধে লড়ার ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন অভিজিৎবাবু। আদতে প্রাক্তন বিচারপতি তাসকে লোকসভা ভোটে বাংলায় কোন জায়গায় ব্যবহার করতে চাইছে রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির দ্বিতীয় প্রার্থী তালিকাতেই কি তা পরিষ্কার হতে চলেছে। তা অবশ্য এখনই স্পষ্ট জানা যাচ্ছে না।