'আর কয়েক ঘণ্টা'! রাজনীতি ছাড়ছেন অভিনেতা-সাংসদ দেব?

Dev: সংসদের বক্তৃতায় দেব বলেছিলেন, ‘‘আমি থাকি বা না থাকি, ঘাটাল আমার হৃদয়ে থেকে যাবে।’’ আর একে অনেকেই সমাপ্তি বক্তৃতা বলেই ভেবেছিলেন।

তিনি সুপারস্টার। তাঁর ছবি এলে প্রেক্ষাগৃহ উপচে পড়ে। তাঁকে একঝলক দেখার জন্য দীর্ঘতম অপেক্ষা করে হাজার হাজার মাথা। টলিউডের সর্বশেষ মহানায়ক সম্ভবত তিনিই। তার উপর রাজনীতির ময়দানে তিনি চেনা মুখ। লোকসভায় গিয়ে বাংলা ভাষায় নিজের বক্তব্য রাখেন। ঘাটালের সাংসদ দেব বরাবরই রাজনীতির ময়দানে নিজের আলাদা ছাপ রেখেছেন। সেই দেব রাজনীতির ময়দান থেকে সরে আসার কথা বলছেন। ইতিমধ্যেই ছেড়েছেন প্রশাসনিক কমিটির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। তার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সংসদের শেষ দিনটাও ঘোষণা করে দিলেন অভিনেতা-সাংসদ।

তবে কি রাজনীতির ময়দান থেকে সরে যাচ্ছেন দেব? কিন্তু কেন? শিয়রে লোকসভা ভোট। প্রায় সমস্ত দল যে যার মতো করে প্রচার এবং জনসংযোগে ব্যস্ত। সে সময় দেবের কথাবার্তায় কেন উঁকি মারছে রাজনীতির প্রতি তাঁর নিরাসক্তিবোধ। আসন্ন লোকসভা ভোটে ফের প্রার্থী হতে চলেছেন কিনা অভিনেতা, এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন চলছে। বৃহস্পতিবার লোকসভার শেষ দিন ছিল। পরবর্তী লোকসভার অধিবেশন বসবে ভোটের পর। লোকসভার সেই শেষ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার আগে ইনস্ট্রাগ্রামে ছবি পোস্ট করে দেব লিখেছিলেন, 'আর কয়েক ঘণ্টা'। তার সেই পোস্ট বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করেছেন রাজনৈতিক মহলের একটি অংশ।

আরও পড়ুন:ফের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারেই আস্থা! কেন মমতাকে সবচেয়ে বেশি ভোট দেন মহিলারা?

কয়েক দিন আগেই ঘাটাল কলেজ, ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি ও বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন দেব। তার পরেই দেবের এই পোস্ট ঘিরে বেশ হইচই পড়ে যায়। শোনা যাচ্ছে, অনেক দিন ধরেই রাজ্যের এক মন্ত্রীর উপরে ক্ষুব্ধ দেব। তাঁর ছবি নন্দনে জায়গা না পাওয়া নিয়েই নাকি সেই ক্ষোভের সূত্রপাত। যদিও অভিনেতা-সাংসদ কখনও, কোথাও এ বিষয়ে কিছু বলেননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠেরা জানিয়েছিলেন, তিনি ক্ষুব্ধ। আবার অনেকের মতে, দেব-ঘনিষ্ঠেরা মন্ত্রীর উপর ক্ষোভের কথা বললেও নেপথ্যে অন্য কারণ রয়েছে। সেই কারণ কী? অনেকের বক্তব্য, গরু পাচার মামলার তদন্তের সূত্রে দেবকে ডেকেছিল সিবিআই। অভিযোগ, গরু পাচারের টাকা দেবের ছবিতে বিনিয়োগ হয়েছিল। দেব কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে এড়াতেই আর ভোটে দাঁড়াতে চান না বলে বক্তব্য ওই অংশের।

তবে তার পরেই দেবের একটি সাক্ষাৎকারের ঝলক ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। ইডি-র হাত থেকে বাঁচতে তিনি কিছু করছেন না বলেই স্পষ্ট তোপ দেগেছেন সেখানে অভিনেতা সাংসদ। একই সঙ্গে নাম না-করেই রাজনৈতিক দলবদলুদের উপরে তোপ দাগেন অভিনেতা। একই সঙ্গে তাঁর মুখে শোনা যায় তাঁর আদর্শ ও পরম্পরাগত শিক্ষার কথাও।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সংসদের বক্তৃতায় দেব বলেছিলেন, ‘‘আমি থাকি বা না থাকি, ঘাটাল আমার হৃদয়ে থেকে যাবে।’’ আর একে অনেকেই সমাপ্তি বক্তৃতা বলেই ভেবেছিলেন। পাশাপাশিই দেব বলেছিলেন, ‘‘১০ বছর সাংসদ হিসাবে কাজ করতে দেওয়ার জন্য আমি আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’’ অধিবেশনের পরে নতুন সংসদ ভবনের বাইরে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দেব বলেছিলেন, ‘‘ভোটে দাঁড়ানোর বিষয়ে আমার কী বক্তব্য তা এক বছর আগেই আমি নেত্রীকে জানিয়েছিলাম। কয়েক দিন আগেও তা জানিয়েছি। এখন এ নিয়ে কিছু বলব না।’’ যদিও পরে সমাজমাধ্যমে তা স্পষ্ট করে দেন। সংসদের বক্তৃতায় দেব এ-ও বলেন, ‘‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য ১০ বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও অর্থ দেয়নি। যা করার রাজ্য করেছে।’’ঘাটাল মহকুমায় প্রতি বছরই বর্ষাকালে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। তা রুখতেই মাস্টার প্ল্যানের কথা বহু দিন ধরেই আলোচনার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে ভোটের সময়ে তা ‘ইস্যু’ হলেও কার্যকর হয় না। সম্প্রতি বিজেপির তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় সরকার ১৬০০ কোটি টাকা দিলেও কাটমানির ভাগাভাগির লড়াইয়ে সেই টাকা ফেরত চলে গিয়েছে। সেই অভিযোগ উড়িয়ে ঘাটালের ভূমিপুত্র দেব বলেন, ‘‘কারা বলছে আমি জানি না। তবে সংসদেও বলেছি, কেন্দ্র কোনও টাকা দেয়নি। যতটুকু হয়েছে তা রাজ্যের টাকাতেই হয়েছে।’’

যদিও শোনা যাচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেবকে ভোটে দাঁড় করানোর বিষয়ে আগ্রহী। কালীপুজোর পরের দিন দিদির বাড়িতে দধিকর্মা খেতে গিয়েছিলেন দেব। সে দিন বেশ খানিক ক্ষণ দু’জনের মধ্যে কথা হয়েছিল। কিন্তু শাসকদলের একাধিক নেতার বক্তব্য, দেব মমতার সামনেও ভোটে দাঁড়ানোর বিষয়ে হ্যাঁ, না বলেননি। তবে জনশ্রুতি, বিশ্বকাপে ইডেনে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দেখতে গিয়ে দেব তাঁর ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছিলেন, তিনি আর ভোটে দাঁড়াতে চান না। তবে দেব এ নিয়ে স্পষ্ট ভাবে ভাঙেননি। অভিনেতা অবশ্য স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমাতেই জানিয়েছেন , 'দেখুন দলটা তো আমার নয়। দলটা একজন চালাচ্ছেন। আমি চাইলেই আমাকে টিকিট দেওয়া হবে অথবা আমি চাইলেই আমাকে যেতে দেওয়া হবে, তেমনটা তো নয়। দেখা যাক, দল কী সিদ্ধান্ত নেয়। আমার বিরুদ্ধে যে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তা সত্যি হলে কি আমি এখানে থাকতাম? আমি একটা কথাই বলতে চাই। যদি প্রমাণিত হয় যে আমি টাকা নিয়ে দুর্নীতি করেছি, তাহলে রাজনীতি কেন, আমি ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে দেব। কিন্তু যদি তা প্রমাণ করা না যায়, তাহলে যাঁরা অভিযোগ অভিযোগ তুলছেন, তাঁরা রাজনীতি ছাড়বেন তো?'

আরও পড়ুন:বরাদ্দ কোটি কোটি টাকা! ভোটের আগে যেভাবে তাক লাগাল মমতার ‘কল্পতরু’ বাজেট

দেবের কথাবার্তায় স্পষ্ট, সাম্প্রতির রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তেমন সন্তুষ্ট নন। সেই ক্ষোভ দিনকয়েক ধরেই তাঁর কাজকর্ম ও বক্তব্য থেকে ভালোই বোঝা যাচ্ছে। তারকা সাংসদ হয়েও বরাবরই চেনা ছকের বাইরে গিয়েই কাজ করতে দেখা গিয়েছে দেবকে। ঘাটালের জন্য তাঁর প্রচেষ্টাতেও তেমন কসুর ছিল না বলে মনে করেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তবে কি সেই দেবের সেই রাজনীতির ভাবনা ধাক্কা খাচ্ছে বর্তমান হাওয়ায়? আগামীদিনে কি রাজনীতির ময়দানে আর দেখা যাবে এই তারকা-রাজনীতিবিদকে, সংশয় ঘনিয়েছে নানা মহলেই।

More Articles