গাজার মৃতদেহ থেকে হৃদপিণ্ড, যকৃত সত্যিই সরিয়ে নিচ্ছে ইজরায়েল? কারণ জানলে শিউরে উঠবেন

Israel-Hamas War: এরই মধ্যে আবার ইজরায়েলের বিরুদ্ধে গুরুতর এক অভিযোগ করেছে ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটর গ্রুপ। তাদের দাবি, গাজায় যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনি শরীরগুলি থেকে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরি যাচ্ছে অহরহ।

রকেটের পর রকেট, গুলির পর গুলিতে গোটা দেশটাকে এমনিতেই ছারখার করে দিয়েছে ইজরায়েল। গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজারে। তার মধ্যে একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে গাজার শিশুরা। ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যে পড়ে জখম হয়েছেন অন্তত ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি। যুদ্ধের আশি দিন কেটে গেলেও আগ্রাসন কমাতে নারাজ বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার। এরই মধ্যে ইজরায়েলি সেনার বিরুদ্ধে উঠল আরও ভয়ানক অভিযোগ। যুদ্ধে নিহতদের শরীর থেকে নাকি অঙ্গ পাচার করছে ইজরায়েল? সম্প্রতি এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছে গাজার ইউরো- মেডিটারেনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটর গ্রুপ।

গত ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে ঢুকে হামলা চালিয়েছিল প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠী হামাস। তার পরেই হামাসের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধঘোষণা করে দেয় ইজরায়েল। গাজায় বন্ধ করে দেওয়া হয় জল,খাবার এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবা। একের পর এক এলাকায় চলতে থাকে রকেট হামলা। গির্জা, হাসপাতাল থেকে স্কুল, কোনও কিছুই বাদ যায়নি ইজরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসন থেকে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যা। যার মধ্যে অধিকাংশই শিশু। গোটা বিশ্বের অধিকাংশ দেশের যুদ্ধবিরতির দাবিই কার্যত উড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েল। বরং মুহুর্মুহু বাড়িয়ে গিয়েছে হামলার প্রাবাল্য। নিশানা করা হয়েছে একাধিক শরণার্থী শিবিরকে। ইজরায়েলের লাগাতার হামলার মুখে কার্যত শ্মশানে পরিণত হয়েছে গাজা। শুধু গাজাই নয়, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও প্যালেস্টাইনের একাধিক এলাকায় আক্রমণ শানিয়েছে ইজরায়েলি সেনা।

আরও পড়ুন:দিল্লির ইজরায়েলি দূতাবাসে ‘হামলা’ ঘিরে আতঙ্ক! কোন রহস্য পতাকা মোড়া ওই চিঠিতে? 

এরই মধ্যে আবার ইজরায়েলের বিরুদ্ধে গুরুতর এক অভিযোগ দায়ের করেছে গাজায় কাজ করা ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটর গ্রুপ। তাদের দাবি, গাজায় যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনি শরীরগুলি থেকে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরি যাচ্ছে অহরহ। গাজায় উপস্থিত বেশ কয়েকজন চিকিৎসক সম্প্রতি বেশ কয়েকটি যুদ্ধে নিহত শরীর পরীক্ষানিরিক্ষা করেছে। স্বেচ্ছাসেবক সংস্থাটি জানিয়েছে যে তারা এ বিষয়টি গোটাটাই ডকুমেন্টেড করেছে। যেখানে দেখা গিয়েছে উত্তর গাজার আল শিফা ও ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালগুলি থেকে একগুচ্ছ ফিলিস্তিনি মৃতদেহ বাজেয়াপ্ত করছে ইজরায়েলি সেনা।

মেডিক্যাল ওই বিশেষজ্ঞ দল জানিয়েছে, পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে ওই সব মৃতদেহগুলি থেকে হাপিস হয়ে গিয়েছে যকৃত, কিডনি, হৃদপিণ্ডের মতো একাধিক অঙ্গ। শুধু কি তাই, কানের ককলিয়ার ও চোখের কর্নিয়া পর্যন্ত হাপিস হয়ে গিয়েছে মৃতদেহগুলি থেকে। ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটর গ্রুপের তরফে দাবি করা হয়েছে, ফিলিস্তিনি মৃতদেহ থেকে যে অঙ্গচুরির মতো গুরুতর অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েলি সেনা, তার প্রমাণ তারা হাতে হাতে পেয়েছে। শুধু হাসপাতাল থেকেই যে মৃতদেহ বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে তা-ই নয়, এমনকী গণকবর খুঁড়ে মৃতদেহ তুলে এনে সেখান থেকে অস্ত্রোপচার করে চুরি করে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।

Israel 'stealing organs' from bodies in Gaza, alleges human rights group

তবে বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, শুধুমাত্র ফরেন্সিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই অঙ্গচুরির ব্যাপারটি প্রমাণ করা কঠিন। কারণ মৃত্যুর আগেও একাধিক দেহের অস্ত্রোপচার হয়েছে গাজার হাসপাতালগুলিতে। তেমনটাই জানাচ্ছেন গাজার ওই সব হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। তাছাড়া গাজায় যে ধরনের বিধ্বংসী হামলা চালিয়ে গিয়েছে ইজরায়েল, তাতে উদ্ধার হওয়া মৃতদেহগুলিও পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষার অবস্থায় নেই।

আজ থেকে নয়, ইজরায়েলের বিরুদ্ধ এই ধরনের অঙ্গচুরির অভিযোগ আজকের নয়। বহু বছর ধরেই ফিলিস্তিনি মৃতদেহগুলি থেকে বেআইনি ভাবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করে আসছে। ইজরায়েলি চিকিৎসক মেরা ওয়েইস তাঁর 'ওভার দ্য ডেড বডিজ' বইতে দাবি করেছিলেন, ১৯৯৬ ও ২০০২ সালের মধ্যে মৃত ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অঙ্গগুলির মধ্যে বেশ কিছু ইজরায়েলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে চিকিৎসা গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে। কিছু ইজরায়েলি রোগীদের শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। অবশ্য় এর নেপথ্যে রয়েছে একটি ইহুদি আইনও। তাদের আইন অঙ্গ প্রতিস্থাপন ও মৃতদেহ থেকে অঙ্গ সংগ্রহের অনুমতি দেয়।

২০১৪ সালেও একই অভিযোগ উঠেছিল ইজরায়েলের বিরুদ্ধে। ইজরায়েলের টেলিভিশনের একটি বিতর্কিত তদন্তে উচ্চপদস্থ এক কর্তা স্বীকারও করে নিয়েছিলেন সেই অভিযোগ। জানা গিয়েছিল, মৃত ফিলিস্তিনি ও আফ্রিকান কর্মীদের মৃতদেহ থেকে চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিল ইজরায়েলিদের চিকিৎসার জন্য। পুড়ে যাওয়া জখম সেনাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়েছিল শরীরের ওই অংশ। ইজরায়েলি স্কিন ব্যাঙ্কের কর্ণধার জানিয়েছেন, সে দেশে মানব ত্বকের সঞ্চয় পৌঁছেছে ১৭ বর্গমিটারে। ইজরায়েলি জনসংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে ত্বক ইতিমধ্যেই সঞ্চয় করা রয়েছে সেখানে।

Israel 'stealing organs' from bodies in Gaza, alleges human rights group

মার্কিন সিএনএন নেটওয়ার্কের ২০০৮ সালের একটি তদন্ত অনুসারে, বেআইনি মানব অঙ্গ বাণিজ্যের বিরাট বড় কেন্দ্র ইজরায়েল। ইউরো-মেড মনিটর গ্রুপ বারংবার ইজরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। যুদ্ধে নিহতদের মৃতদেহের সম্মান ও সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও সতর্ক করা হয়েছে। ১৯৪৯ সালের চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনে যুদ্ধে মৃতদের মর্যাদা-রক্ষার কথা তোলা হয়েছিল। যদিও সেই বিষয়টি অনুমোদন করেনি ইজরায়েল।

আরও পড়ুন: ছিন্নভিন্ন স্তন, গুঁড়িয়ে গিয়েছে কোমর! হামাসের কবলে যেমন ছিলেন ইজরায়েলি বন্দিরা

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির অভিযোগ, গাজায় ইজরায়েলের সামরিক অভিযানে নিহত কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিদের দেহাবশেষ নিজেদের কাছে জমিয়ে রেখেছে নেতানিয়াহুর দেশ। তার মধ্যে কিছুটা রেড ক্রস আন্তর্জাতির কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হলেও পুরোপুরি হয়নি বলেই অভিযোগ। আর এ নতুন কথা নয়। এভাবে ফিলিস্তিনিদের মৃতদেহ জমিয়ে রাখার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে ইজরায়েল। আর ইজরায়েল-গাজা এই সঙ্কটের মধ্যে যা প্রবল উদ্বেগের ও লজ্জাজনক বলেই মনে করছে বিশ্বের তাবড় মানবাধিকার সংগঠনগুলি।

 

More Articles