ইলেক্টোরাল বন্ড অসাংবিধানিক! মোদি সরকারের প্রকল্প খারিজ সুপ্রিম কোর্টে

Electoral Bond Scheme: ইতিমধ্যেই ওই প্রকল্প বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI)-কে অবিলম্বে ইলেক্টোরাল বন্ড প্রদান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।

ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্প মামলায় সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা নরেন্দ্র মোদি সরকারের। মোদি সরকারের জারি করা ওই বন্ড প্রকল্প অসাংবিধানিক বলে জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছে, বেনামি ইলেক্টোরাল বন্ডের ফলে সংবিধানের দেওয়া বাকস্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এই মর্মে ওই ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্পকেই খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত।

সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়েছে, বেনামি ইলেক্টোরালবন্ড প্রদান করা হলে সেটা তথ্য জানার অধিকার আইন এবং সংবিধানের ১৯ (১) (এ) ধারাকে ভঙ্গ করবে। কী এই ১৯ (১) (এ) ধারা? ওই ধারার আওতায় দেশের সব নাগরিককে বাকস্বাধীনতা দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: রাজনৈতিক দলগুলোর অনুদান আসে কোত্থেকে? সত্যিই জানার অধিকার নেই নাগরিকদের?

ভোটে কালো টাকার খেলা বন্ধ করার কথা বলে ইলেক্টোরাল বন্ড চালু করেছিল মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১৮ সালে প্রয়াত অরুণ জেটলি নির্বাচনী বন্ডের কথা ঘোষণা করেছিলেন। ২০১৭-র অর্থ বিলের মাধ্যমে আইনে একগুচ্ছ সংশোধনী এনে মোদী সরকার ২০১৮ থেকে ইলেক্টোরাল বন্ড চালু করেছিল। ওই বছর ২ জানুয়ারি সেই নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল সরকার। রাজনৈতিক দলগুলির আর্থিক অনুদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে নগদ টাকার পরিবর্ত হিসেবে ইলেক্টোরালবন্ড চালু করা হচ্ছে। ওই ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্পের আওতায় যে কোনও ভারতীয় নাগরিক ইলেক্টোরাল বন্ড কিনতে পারবেন। একাও বন্ড কেনার নিয়ম রাখা হয়েছিল। যৌথভাবে বন্ড কেনারও নিয়ম আছে ওই প্রকল্পে। দেশের বিভিন্ন সংস্থাও ইলেক্টোরাল বন্ড কিনে রাজনৈতিক দলগুলিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে পারে। বলা হয়েছিল, ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ২৯এ ধারায় নথিভুক্ত রাজনৈতিক দল এবং শেষ লোকসভা নির্বাচন বা বিধানসভা নির্বাচনে যত ভোট পড়েছে, তার এক শতাংশের কম ভোট পায়নি, সেই দলগুলিকেই শুধুমাত্র ইলেক্টোরাল বন্ড দেওয়া হবে। সরকারের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, যোগ্য রাজনৈতিক দলগুলি শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সেই টাকা ভাঙিয়ে নিতে পারবে। সেক্ষেত্রে কোন দলকে কে বা কারা কত টাকা দিচ্ছেন, সেটা কেউ জানতে পারবে না।

Supreme Court strikes down electoral bond scheme, calls it 'unconstitutional'

ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্পের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া মামলাগুলির শুনানিতে গত নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে কারা শাসক দলকে আর্থিক সাহায্য করছে, সেই তথ্য গোপন রাখা গেলেও একই প্রকল্পে বিরোধীদের পাওয়া টাকার সূত্র প্রকাশ পেয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে ‘রাজনৈতিক দলগুলোর আর্থিক অনুদানের উৎস সম্পর্কে ভোটারের কিছুই জানার অধিকার থাকতে পারে না’— মোদী সরকারের ওই যুক্তিও খারিজ করে দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। গত ২ নভেম্বরের শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, বর্তমান ব্যবস্থায় অনুদানদাতা এবং অনুদানপ্রাপ্ত দল উভয়েই জানে দেওয়া-নেওয়ার কথা। বিচারপতি খন্না তখন মন্তব্য করেন, ‘‘শুধু ভোটারই জানেন না! এটা মেনে নেওয়া একটু কঠিন! সবটা খুলে দিচ্ছেন না কেন?’’

আরও পড়ুন: স্মার্ট-দুর্নীতির দক্ষ খিলাড়ি মোদি সরকার

ইতিমধ্যেই ওই প্রকল্প বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI)-কে অবিলম্বে ইলেক্টোরাল বন্ড প্রদান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। এসবিআই-কে নির্বাচন কমিশনের কাছে ২০১৯ সালের অন্তর্বর্তী নির্দেশ থেকে আজকের তারিখ পর্যন্ত ওই প্রকল্পের আওতায় রাজনৈতিক দলগুলির পাওয়া সমস্ত ইলেক্টোরাল বন্ডের বিস্তারিত হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে ওই রিপোর্ট জমা দিতে হবে SBI-কে।

 

More Articles