ভোটের আগে বিপাক বাড়ল তৃণমূলের? কেন দলীয় পদ ছাড়লেন কুণাল?

Kunal Ghosh: এক্স হ্যান্ডেল থেকে দলীয় পরিচয় সরিয়েই খান্ত হলেন না। দলের দু-দু'টি পদ থেকে ইস্তফাও দিলেন কুণাল ঘোষ।

এক্স হ্যান্ডেল থেকে দলীয় পরিচয় সরিয়েই খান্ত হলেন না। দলের দু-দু'টি পদ থেকে ইস্তফাও দিলেন কুণাল ঘোষ। বৃহস্পতিবার রাতেই এক্স হ্যান্ডেলে নাম না করেই তোপ দেগেছিলেন তিনি। তার পরেই শুক্রবার এক্স হ্যান্ডেলের বায়ো থেকে নিজের সমস্ত রাজনৈতিক পরিচয় মুছে ফেলেন তিনি। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদের পাশাপাশি দলীয় মুখপাত্রের পদ থেকেও সরছেন কুণাল। তৃণমূল সূত্রের খবর, নিরাপত্তা পর্যন্ত ছেড়েছেন কুণাল।

সামনেই লোকসভা ভোট। তার আগে সন্দেশখালি ইস্যুতে এমনিই কোণঠাসা তৃণমূল। একদিন আগেই সন্দেশখালির 'ত্রাস' শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারি নিয়ে দিন কয়েক আগেই মুখ খুলেছিলেন কুণাল। সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের গ্রেফতারির উদাহরণ দেখিয়ে কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, সাত দিনের মধ্যেই গ্রেফতার হবে শেখ শাহাজাহান। হয়েওছে তেমনটাই। তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও কার্যত বলেছিলেন একই কথা। বরাবরই অভিষেক-ঘনিষ্ঠ বলে বেশি পরিচিত কুণাল ঘোষ। গোটা সন্দেশখালি কাণ্ডেও অভিষেকের সুরেই সুর মেলাতে দেখা গিয়েছে কুণালকে। এমনকী অভিষেকের হস্তক্ষেপেই সন্দেশখালির গ্রেফতারপর্ব আরও মসৃন হয়েছে বলেও ইঙ্গিত করেছেন কুণাল।

আরও পড়ুন: টুইটে কাকে গালমন্দ? তৃণমূল ছাড়ছেন কুণাল ঘোষ?

সেই সন্দেশখালির গ্রেফতারের এক দিনের মাথায় দলীয় পদ ছাড়লেন কুণাল। বৃহস্পতিবার রাতেই একটি টুইট করেছিলেন কুণাল ঘোষ। যেখানে নাম না নিয়েই দলের জনৈক নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় কুণালকে। তিনি লেখেন, "নেতা অযোগ্য গ্রুপবাজ স্বার্থপর। সারাবছর ছ্যাঁচড়ামি করবে আর ভোটের মুখে দিদি, অভিষেক, @AITCofficial দলের প্রতি কর্মীদের আবেগের উপর ভর করে জিতে যাবে, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করবে, সেটা বারবার হতে পারে না।" বিশেষ কারওর নাম না করলেও পোস্টটি ভাইরাল হতেই শুরু হয় জোর আলোচনা। না, শেখ শাহাজাহান বা সন্দেশখালি নিয়ে নয়। তৃণমূলের অন্দরে অনেকে বক্তব্য ছিল কুণালের ওই পোস্ট আদতে আদতে উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে। তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন,গত সাত-দশদিনে কুণালের কানে বেশ কিছু কথা এসেছে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু কথা বলে বেড়াচ্ছেন।"

লোকসভা ভোটের আগে আগে তৃণমূলের অন্দরেই ব্যাপক ক্ষোভ জমেছে উত্তর কলকাতার স্থানীয় সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। ৭০ বছরের বেশি বয়সী দলের কোনও নেতাকে লোকসভায় প্রার্থী করার পক্ষে নন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে সেখানেই চাপের মুখে পড়েছেন সুদীপ। তার উপর নাকি সুদীপের কার্যকারিতা নিয়েও দলের বহু নেতাই প্রশ্ন তুলেছেন। এর পরেই বৃহস্পতিবার সামনে আসে কুণালের ওই এক্স পোস্ট। এ ব্যাপারে কুণালকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি জানান, কার উদ্দেশে বলেছি তা এখনই বলব না। পড়েছে কথা সবার মাঝে, যার উদ্দেশে কথা তার গায়ে ঠিক বাজবেই। দলের লোকেরও বুঝতে পারবে। বাকি ঠিক সময়ে বলব।”

 

তার পরেই শুক্রবার এক্স হ্যান্ডেলে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় মুছে দেন তিনি। একই সঙ্গে ইস্তফা দেন দলীয় পদ থেকেও। তবে দল ছাড়েননি কুণাল। সেই বার্তাও দিয়েছেন কুণাল। কিন্তু ভোটের আগে হঠাৎ কেন এই পদক্ষেপ? উস্কে উঠেছে জল্পনা। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি অভিমান নাকি অন্য কোনও সম্ভাবনা? প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। সন্দেশখালি কাণ্ডে অভিষেকের পক্ষপাতিত্ব করা থেকেই কি সমস্যার সূত্রপাত। বরাবরই বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সাফ কথা বলতে দেখা গিয়েছে কুণালকে। সন্দেশখালি থেকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সব কিছু নিয়েই ঝোড়া ব্যাটিং করে এসেছেন কুণাল। আর সেই ঝোড়ো ব্যাটিংই কি দলের পক্ষে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।  ব্রিগেডের সাংগঠনিক সভায় আমন্ত্রণ করা হয়নি বলে ক্ষোভ জমেছে বলেও সূত্রের খবর।

আরও পড়ুন:কেন হঠাৎ কুণালের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়?

কুণাল ঘোষের এই ইস্তফা ঘিরে ইতিমধ্যেই সমালোচনা শুরু হয়েছে বিরোধী শিবিরে। বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলছেন, “অপেক্ষা করুন না। লোকসভা ভোট আসতে দিন, তারপর দেখবেন কতজনের কত কী উঠে যাবে।” আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষও। তিনি বলছেন, “এসব অনেক দেখেছি। তৃণমূল যখন ওকে জেলে ঢুকিয়েছিল তখন কী ছিলেন? তারপর টিএমসি ওকে মহামন্ত্রী বানিয়েছে। রোজ রূপ পাল্টালে লোকে বিশ্বাস করবে নাকি।” খোঁচা দিতে ছাড়েনি আইএসএফও। আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী বলছেন, "তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে এখন লড়াই চলছে কে কত তোলা তুলতে পারবেন, কাকে কে কতটা কন্ট্রোল করতে পারবেন তা নিয়ে লড়াই চলছে। সিন্ডিকেটরাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রেষারেষি চলছে। সুতরাং কে কার বিরুদ্ধে বলছে, কার বিরুদ্ধে সমালোচনা করছে এটা নতুন নয়। কুণালবাবু কলকাতার একজন সাংসদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত আক্রমণ করছেন। এটা তৃণমূল কংগ্রেসের কালচার। ওদের আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ নিয়ে আমাদের ভাবার সময় নেই। আমাদের কাজ তৃণমূলের অপশাসন থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া।" সব মিলিয়ে কুণাল ঘোষের এই ইস্তফা কি ভোটের আগে বিপাকে ফেলতে চলেছে তৃণমূলকে? নাকি তৃণমূলের অন্দরের লবির লড়াই-ই নতুন করে স্পষ্ট হয়ে গেল এই ঘটনা থেকে। প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।

 

More Articles